১২টি শেলফে ৭ হাজারেরও বেশি বইয়ের ভুবন। রয়েছে সাহিত্য ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা শাখার বাংলা ও ইংরেজি বই। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে নাখালপাড়া রেলগেটের কাছে ৪৯১ নম্বর বাড়িতে গড়ে ওঠেছে ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতি পাঠাগার’ নামে এ বইবাগান।
১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ডজনখানেকবার স্থান পরিবর্তন করে আপাতত এখানেই থিতু হয়েছে পাঠাগারটি। সরু সিঁড়ি পেরিয়ে দোতলায় উঠতে খোলা দরজা পাওয়া গেলো। দরজার ভেতরে কক্ষটি বইয়ে ঠাসা। তাকে তাকে বই সাজানো, আছে কয়েকটি চেয়ার-টেবিল। একটি কম্পিউটারে বাজছে রবীন্দ্রসঙ্গীত।
একদল প্রাণচঞ্চল শিশু-কিশোর ছোটাছুটি করছে, সবাই ব্যস্ত। কয়েকজন শিশু লাল-নীল বেলুন ফুলাচ্ছে, কেউ জরি-ফিতা নিয়ে দেয়ালে ঝোলাচ্ছে, কেউ নাটকের মহড়া দিচ্ছে- কিছুক্ষণ পরই শুরু হবে তাদের পাঠাগারের ৩৪ বছর পূর্তি উৎসব।
শুক্রবার বিকেলে পাঠাগারের সদস্য শিশু-কিশোররা নাচ-গান, আবৃত্তি ও নাটকে উদযাপন করলো তাদের বর্ষপূর্তি। নিজেদের উদ্যোগে নিজেদের অংশগ্রহণে উজ্জ্বল হয়ে ওঠলো ব্যানারে লেখা তাদের স্লোগানটি- ‘অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে পাঠাগার একটি প্রতিরোধ’।
উৎসব শুরুর আগে ‘মুনলাইট কিন্ডারগার্টেন স্কুলের’ শিশুশ্রেণির ছাত্রী সায়েরা ইকফাকে দেখা গেলো এক কোণে বসে আবৃত্তির মহড়া দিচ্ছে। তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো- মায়ের সঙ্গে এসেছে সে, আজকের উৎসবে ‘আমপাতা জোড়া জোড়া’ ছড়াটি পড়ে শোনাবে।
বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজের ছাত্র রিফাত রায়হান তন্ময় বলেন, “আমি ২০১৬ সাল থেকে এ পাঠাগারের সঙ্গে যুক্ত আছি। বইপড়ার খুব ইচ্ছে ছিল, সেই সুযোগটা করে দিয়েছে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতি পাঠাগার। আমার আগে মঞ্চভীতি ছিল, সেই ভীতি কেটেছে এখানে নানা সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে অংশ নিয়ে।”
অনুষ্ঠান শুরু হতেই মেঝেতে গাদাগাদি করে বসে পড়ে শিশু-কিশোর পাঠকরা। তাদের নানা পরিবেশনার পর মঞ্চে আসেন পাঠাগারের সভাপতি আলী মো. আবু নাঈম, পাঠাগারের প্রাক্তন সদস্য তাহসিনুর রহমান নিকো, কবি মাজহার সরকার এবং ফাহিমা কানিজ লাভা।
প্রতিষ্ঠাতা দলিলের রহমান দুলালকে স্মরণ করে পাঠাগারের পটভূমি ও বৈশাখের কর্মসূচি জানান আলী মো. আবু নাঈম।
নাঈম কিডজকে জানান, আশপাশের স্কুল-কলেজ ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারি, ছাব্বিশে মার্চ, রবীন্দ্র-নজরুলের জন্ম-মৃত্যুতে সাধারণ জ্ঞান, রচনা প্রতিযোগিতা, ছবি আঁকা ও গানের প্রতিযোগিতার আয়োজন করে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতি পাঠাগার। এর সদস্য সংখ্যা ৩০০। ২০০ জন নিয়মিত বই পড়তে, নানা কাজে অংশ নিতে আসেন। গড়ে প্রতিদিন ৪০-৪৫ জন পাঠক আসেন। বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রতিদিন পাঠাগার খোলা।