গোয়েন্দা ইঁদুর

মিনি বললো, ব্যাপারটা আমার ওপর ছেড়ে দাও। তোমার নাবিক-টুপি আমি খুঁজে বের করে দেব।

রিয়াজ মোরশেদ সায়েমরিয়াজ মোরশেদ সায়েম
Published : 4 March 2024, 07:52 AM
Updated : 4 March 2024, 07:52 AM

ডিটেকটিভ মিনি মাউজ তার অফিস ঘরের জানালা দিয়ে দেখছিল বাইরের দৃশ্য। বাগানে ফুল ফুটেছে। পাখিরা গান গাইছে। ঠোঁটে করে খড়কুটো এনে বাসা বাঁধছে। হঠাৎ দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকলো ডোনাল্ড ডাক। ঢুকেই শোরগোল তুলে কী যেন বলতে লাগলো।

মিনি বললো, আস্তে, ডোনাল্ড, আস্তে...। তোমার কথার মাথামুণ্ডু কিছুই বোঝা যাচ্ছে না যে! ডোনাল্ড তার ফাঁকা মাথাটা হাত দিয়ে দেখালো। এবার মিনি বুঝতে পারলো ব্যাপারটা। সে বললো, তোমার নাবিক-টুপির কথা বলছো! ওটা কি তবে হারিয়ে ফেলেছ?

হ্যাঁ, হ্যাঁ, হ্যাঁ, ঘরময় পায়চারি করতে করতে ডোনাল্ড বললো। কাল আমার একটা পুরস্কার পাওয়ার কথা। আমার জন্য পার্টির আয়োজন হবে। ওই টুপি ছাড়া সেখানে যাই কী করে! নাবিক-টুপি ছাড়া কেউ তো আমাকে চিনবে না। নিজের কাছেই নিজেকে মনে হবে অচেনা।

মিনি বললো, ব্যাপারটা আমার ওপর ছেড়ে দাও। তোমার নাবিক-টুপি আমি খুঁজে বের করে দেব। প্রথমে তারা গেল মিকির বাসায়। দেখো তাকিয়ে! মিনি বললো। খেয়াল করে দেখো তো ওই ছায়াটা। ছায়ার আকার ডোনাল্ডের খুব পরিচিত মনে হলো। সে বলে উঠলো, আশ্চর্য, আমার টুপিটা!

মিনি বললো, এবার তোমাকে বাগে পেয়েছি, বাছাধন মিকি মাউজ। কিন্তু ঘরের ভেতর ঢুকে তারা বুঝলো ওটা শুধু আপেল-ভর্তি থালার ছায়া। তারপর তারা গেল গুফির বাড়ি। তাকিয়ে দেখো! 

মিনি বললো, পর্দার পেছন দিকটা লক্ষ্য করো। আবারো ডোনাল্ড দেখতে পেল পরিচিত একটা ছায়া। ওই তো দেখছি আমার টুপি, বললো সে। মিনি বললো, এবার তোমাকে বাগে পেয়েছি, বাছাধন গুফি। কিন্তু সেটা ছিল ঘুমন্ত কুকুরছানার ছায়া, আদর করে গুফি পুষছিল কুকুরটা।

সেখানে রয়েছে ছোট্ট তিনটি ডিম। মনের সুখে সেই ডিমে তা দিচ্ছে এক জোড়া পাখি। মিনি ছুটলো ডোনাল্ডকে ডেকে আনতে।

তারপর তারা গেল প্লুটোর বাড়ি। তাকিয়ে দেখো! মিনি বললো, দরজার দিকটা দেখো। আরো একবার ডোনাল্ড পরিচিত ছায়া দেখতে পেল। এটা নিশ্চয়ই আমার টুপি, সে বললো। মিনি বললো, তোমাকে এবার বাগে পেয়েছি, প্লুটো। কিন্তু সেটা ছিল নিছকই প্লুটোর চীনামাটির বাসনের ছায়া।

টুপিটা আর পাওয়ার আশা নেই, হতাশ হয়ে ডোনাল্ড ডাক ঘরে ফেরার পথ ধরলো। কিন্তু গোয়েন্দা মিনি মাউজ এতো সহজে হার মানতে রাজি নয়। প্রথমে সে তাকালো ওপরে। তারপর নিচে। তারপর আবারও ওপরে। আর তখনই দেখতে পেল গাছের ডালের ওপর ডোনাল্ড ডাকের টুপিটি।

সেখানে রয়েছে ছোট্ট তিনটি ডিম। মনের সুখে সেই ডিমে তা দিচ্ছে এক জোড়া পাখি। মিনি ছুটলো ডোনাল্ডকে ডেকে আনতে। তারা যখন ফিরে এলো তখন ডিম ফুটে বাচ্চাদের ঠোঁটগুলো সবে বের হয়েছে। মিনি বললো, পাখির মা, আমি দুঃখিত। আপনার ওই পাখির বাসা, মানে ওই টুপির মালিক হচ্ছেন এই ভদ্রলোক।

মা পাখি খুব চিন্তায় পড়লেন। তার ছানাগুলো এখনও এতো ছোট যে তাদের নড়ানো মুশকিল। পাখির ছানা তিনটি ঠোঁট উঁচিয়ে তাকিয়ে ছিল ডোনাল্ডের দিকে। তা দেখে ডোনাল্ডের চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়লো পানি। ডোনাল্ড বললো, থাক মিনি। আমার এখন টুপির দরকার নেই। যতোদিন দরকার এটা ওদের কাছে থাকুক।

মিনি জানতে চাইলো, তাহলে কী মাথায় দিয়ে তুমি অনুষ্ঠানে যাবে? ডোনাল্ড খড়কুটোর একটা গোছা তুলে নিয়ে মাথায় পরলো। বললো, ওরা যদি আমার টুপিটাকে বাসা বানাতে পারে, তবে পাখির বাসাকে আমি আমার টুপি বানাতে পারবো না কেন! এবার সবাই একসঙ্গে হেসে উঠলো।