“শুরুতে চিকিৎসা করতে না পারলে তার কাশি অনেক বেড়ে যাবে, শরীর দুর্বল হয়ে পড়বে, নানা ধরনের জটিলতার পাশাপাশি অকাল মৃত্যুও হতে পারে,” বলেন ডা. মাহফুজার।
Published : 17 Oct 2023, 07:13 PM
বাংলাদেশে ২০২১ সালে যক্ষ্মা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৪২ হাজার মানুষ। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে মৃত্যু হচ্ছে ১১৫ জনের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হলে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগটি শনাক্ত করতে পারলে দ্রুত চিকিৎসা শুরু যায় এবং মৃত্যুও ঠেকানো যায়, পাশাপাশি রোগ ছড়ানোও ঠেকানো যায়।
ঢাকার জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের যক্ষ্মা রোগীদের জন্য নির্ধারিত ওয়ার্ডে ১৩৫টি শয্যা। মঙ্গলবার সেখানে ১২৭ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। তাদের একজন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কলেজছাত্র সাব্বির আহমেদ। তিনি গত ২৩ সেপ্টেম্বর এই হাসপাতালে ভর্তি হন।
সাব্বির বলেন, প্রায় ১৫ দিন আগে থেকে কাশি শুরু হয় তার। স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে কফ পরীক্ষা করালে তার যক্ষ্মা ধরা পড়ে। সেখানকার চিকিৎসকরাই তাকে বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে আসার পরামর্শ দেন।
“এইখানে আসার পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে। ডাক্তাররা বলেছেন, তাড়াতাড়ি আসতে পেরেছি এজন্য আমার অবস্থা ভালো। ডাক্তার বলেছেন দ্রুতই সুস্থ হয়ে যাব,” বলেন সাব্বির।
এই হাসপাতালে থাকা পুরান ঢাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ সানি বলেন, ২০২০ সালে প্রথম তার যক্ষ্মা ধরা পড়েছিল। তিন-চার মাস ধরে তার কাশি ছিল। কফ পরীক্ষায় যক্ষ্মা ধরা পড়লে তাকে ছয় মাসের চিকিৎসা দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু তিনি ২ মাস ওষুধ খেয়ে আর খাননি। ধীরে ধীরে অবস্থা খারাপ হলে ২০২১ সালে হাসপাতালে ভর্তি হন। তখন চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরলেও এখন আবার ভর্তি হতে হল।
সানি বলেন, “তখন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে তিন মাস ছিলাম। সুস্থ হলে বাসায় চলে যাই। এখন শরীর আবার খারাপ হয়েছে। তাই আবার ভর্তি হলাম।”
জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ও আবাসিক চিকিৎসক ডা. সেরাজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তাদের প্রায় সবাই দীর্ঘদিন অসুখে ভুগেছেন। শুরুতে অবহেলা করে চিকিৎসকের কাছে যাননি, অথবা গেলেও কোনো কারণে রোগটি ধরা পড়েনি।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে কাছের স্বাস্থ্য কেন্দ্র কিংবা হাসপাতালে যেতে হবে। সেখানে স্ক্রিনিং করে যক্ষ্মা নিশ্চিত হলে চিকিৎসা নিতে হবে। শুরুতে ধরা পড়লে যক্ষ্মা রোগ ভালো হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর ডা.মো.মাহফুজার রহমান সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সারাদেশে যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত এবং চিকিৎসায় ১১৫১টি ডট (ডিরেক্টলি অবসার্ভড ট্রিটমেন্ট) সেন্টার আছে। রোগের লক্ষণ উপসর্গ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেসব জায়গায় যাওয়া উচিৎ।
তিনি বলেন, আক্রান্ত হলেই যক্ষ্মা রোগী হাঁচি-কাশির মাধ্যমে এই রোগের জীবাণু ছড়াতে পারে- জনস্বাস্থ্যের দৃষ্টিকোণ থেকে এটা উদ্বেগের জায়গা। এজন্য শুরুতে যক্ষ্মা শনাক্ত করতে পারলে শুরুর দিকেই চিকিৎসা দেওয়া যায়। রোগটির ছড়িয়ে পড়া ঠেকানো যায়।
“আর্লি ডায়াগনোসিস এবং আর্লি ট্রিটমেন্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা করতে পারলে রোগ ছড়ানোর ঝুঁকি কমে যায়। কারণ চিকিৎসা দিলে রোগীর শরীরে থাকা জীবাণু দুর্বল হয়ে যাবে। তখন এই রোগী থেকে নতুন রোগী হবে না, ছড়াতে পারবে না। এছাড়া তাড়াতাড়ি শনাক্ত হলে ওই রোগীর পরিবারের সদস্যদের স্ক্রিনিং করা যায়। যদি তাদের মধ্যে কারও যক্ষ্মা ধরা পড়ে, তাকে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়, বাকিদের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা দেওয়া যায়।”
ডা. মাহফুজার রহমান বলেন, “দেরিতে শনাক্ত হলে রোগীর নিজেরও ক্ষতি, বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে। শুরুতে চিকিৎসা করতে না পারলে তার কাশি অনেক বেড়ে যাবে, শরীর দুর্বল হয়ে পড়বে, নানা ধরনের জটিলতার পাশাপাশি অকাল মৃত্যুও হতে পারে।”
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিভিন্ন মানদণ্ড বিবেচনা করে ২০২১ সালে বাংলাদেশে যক্ষ্মা আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লাখ ৭৫ হাজার বলে ধারণা দেয়। তাদের মধ্যে ৩ লাখ ৭ হাজার ৫৬১ জন শনাক্ত হন, শনাক্তের বাইরে রয়ে যান ৬৭ হাজার ৪৩৯ জন। শনাক্ত রোগীদের মধ্যে অন্তত ৪ হাজার ৫০০ জন ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মায় আক্রান্ত। ২০২১ সালে ৪২ হাজার যক্ষ্মা রোগীর মৃত্যু হয়। সে হিসাবে প্রতি দিন বাংলাদেশে যক্ষ্মা আক্রান্ত হয়ে ১১৫ জনের বেশি মানুষ মারা যাচ্ছেন।
(প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছিল ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে: ফেইসবুক লিংক)