ডেঙ্গু আক্রান্ত ১৫ হাজার ছাড়াল

প্রতিদিন বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী, সঙ্গে বেড়েছে বিস্তার; দেশের ৬৪টি জেলার ৬০টিতেই এখন চিকিৎসা নিচ্ছেন ডেঙ্গু আক্রান্তরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 July 2019, 12:38 PM
Updated : 30 July 2019, 01:05 PM

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার দুপুর নাগাদ গত ২৪ ঘণ্টায় আরও এক হাজার ৩৩৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছেন ৯৭৪ জন।

নতুনদের নিয়ে এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৩৬৯ জন, যাদের আটজনের মৃত্যু হয়েছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

তবে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের অনুসন্ধানে ডেঙ্গুতে অন্তত ৩১ জনের মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এবার বর্ষার শুরুতেই ঢাকায় মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব ঘটে, এখন বিভিন্ন জেলা থেকে আক্রান্তের খবর আসছে।

মঙ্গলবার দেশের ৬০টি জেলায় ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত হওয়ার কথা জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, যেখানে আগের দিনও  ৫০ জেলায় ডেঙ্গু রোগীর তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছিল তারা।

বিভিন্ন জেলায় আক্রান্তদের অনেকে ঢাকা থেকে রোগ নিয়ে গেছেন। তবে রাজধানীর বাইরেও এডিস মশার বিচরণ রয়েছে বলে স্থানীয় পর্যায়ে আক্রান্তের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা। তাছাড়া ঢাকা থেকে এই রোগ নিয়ে যাওয়ায় সারা দেশেই তা ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

ডেঙ্গু নিয়ে নতুন করে যারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২২১ জন ভর্তি হয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, বর্তমানে এখানে চিকিৎসাধীন আছেন ৬৭৯ জন ডেঙ্গু রোগী।

এরপর মিটফোর্ড হাসপাতালে নতুন ভর্তি ১০৫ এবং মোট চিকিৎসাধীন ২৯৯ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে নতুন ভর্তি ৪৮ এবং চিকিৎসাধীন ১২১ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নতুন ভর্তি ৬১ এবং চিকিৎসাধীন ২৬৬ জন, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নতুন ভর্তি ৪২ এবং চিকিৎসাধীন ২১৬ জন, বারডেম হাসপাতালে নতুন ভর্তি ১৭ এবং চিকিৎসাধীন ৫২ জন, বিএসএমএমইউতে নতুন ভর্তি ২৬ এবং চিকিৎসাধীন ৯৬ জন, পুলিশ হাসপাতালে নতুন ভর্তি ৩৩ এবং চিকিৎসাধীন ১৩২ জন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নতুন ভর্তি ৬৩ এবং চিকিৎসাধীন ২৫৩ জন, বিজিবি হাসপাতালে নতুন ভর্তি দুই জন এবং চিকিৎসাধীন ৩০ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নতুন ভর্তি ৯০ এবং মোট চিকিৎসাধীন আছেন ২৪৭ জন।

ঢাকা শহরের বাইরে ঢাকা বিভাগের জেলাগুলোতেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এসব জেলার হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হয়েছেন ১০৪ জন, তাদের নিয়ে মোট চিকিৎসাধীন আছেন ১৯১ জন।

এরপর খুলনা বিভাগে নতুন ডেঙ্গু রোগী ৫৬ এবং মোট চিকিৎসাধীন ১৫১ জন, রাজশাহী বিভাগে নতুন ৫৬ জন এবং মোট চিকিৎসাধীন ১৯৮ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে নতুন ৫৫ জন এবং মোট চিকিৎসাধীন ১০৪ জন, সিলেট বিভাগে নতুন ৫৫ এবং মোট চিকিৎসাধীন ৭০ জন, রংপুর বিভাগে নতুন রোগী ২০ এবং মোট চিকিৎসাধীন ৮৩ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে নতুন রোগী নয়জন এবং মোট চিকিৎসাধীন ২৫ জন, বরিশাল বিভাগে নতুন শনাক্ত ছয়জন এবং মোট হাসপাতালে ভর্তি ২৫ জন।

ডেঙ্গু তদারকিতে মন্ত্রীর দপ্তরে সেল গঠন

ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা কার্যক্রম তদারকিতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক তার নিজের দপ্তরে ‘মিনিস্টার মনিটরিং সেল’ গঠন করেছেন।

এই সেল থেকে ডেঙ্গু রোগ সংক্রান্ত জনভোগান্তি নিরসনে এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চলমান কর্মকাণ্ড তদারকি করা হবে বলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, ডেঙ্গু রোগ পরীক্ষার ফি সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশনার লংঘন হলে তার অভিযোগ গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে ‘মিনিস্টার মনিটরিং সেল’।

এই সেলের আওতায় ডেঙ্গু নিয়ে যে কোনো অনিয়ম সম্পর্কে অভিযোগ জানাতে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এজন্য হটলাইন নম্বরগুলো হল: ০১৩১৪-৭৬৬০৬৯/ ০১৩১৪-৭৬৬০৭০, ০২-৪৭১২০৫৫৬/০২-৪৭১২০৫৫৭।

এর আগে সোমবার বিকালে মন্ত্রণালয়ের এক সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডেঙ্গু ও বন্যাজনিত কারণে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।   

এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের লক্ষণ ও উপসর্গ পাল্টে আরও মারাত্মক হয়েছে। কারও জ্বর হলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া, ডেঙ্গু ধরা পড়লে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এবং এমনকি রোগ সারার পরেও সজাগ থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। 

মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু বাংলাদেশে প্রথম দেখা দেয় ২০০০ সালে, সে সময় এই রোগে মারা যান ৯৩ জন। তিন বছর পর থেকে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হার কমতে থাকে এবং কয়েক বছর এতে মৃত্যু শূন্যের কোটায় নেমে আসে।

তবে গত বছর আবার ব্যাপকভাবে দেখা দেয় ডেঙ্গু, ১০ হাজার মানুষ আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি ২৬ জনের মৃত্যু হয় সরকারি হিসাবে। আর এ বছর সরকারি তথ্য অনুযায়ী, সাত হাজার ৭৬৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন।

ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস ইজিপ্টি মশা সাধারণত পরিষ্কার পানিতে জন্মায়। বাড়ির ভেতরেও বিভিন্ন উৎসে এডিস মশা জন্মায়। এছাড়া বিভিন্ন নির্মাণাধীন ভবনের জলাধার, লিফটের নিচে জমে থাকা পানি, ফুলের টব, টায়ার-টিউবসহ যেসব জায়গায় পানি জমে, সেগুলোই এডিস মশার বংশ বিস্তারের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে।