ঢাকার পর ডেঙ্গু অর্ধশত জেলায় ছড়িয়ে পড়ার তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানানোর পর সোমবার দলের স্থায়ী কমিটির এক বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে এই দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, “ডেঙ্গু সারাদেশে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা হতাশা ও ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে সরকার এই ডেঙ্গু সঙ্কটটাকে লেজে গোবরে করে ফেলেছে।
“একদিকে সিটি করপোরেশনের মেয়ররা কথা বলছেন, যার সাথে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। কখনও তারা এটাকে গুজব বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন; কখনওবা তারা বলছেন যে, তারা যথাসাধ্য চেষ্টা করলেও পেরে উঠছেন না।
“দুই মেয়র যারা শুধু কথাই বলছেন, কাজ করছেন না। তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন মশা নিধন করতে। আমরা দাবি করছি দায়-দায়িত্ব নিয়ে দুই সিটি মেয়রকে পদত্যাগ করতে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী যিনি পরবর্তী বিষয়গুলো মনিটরিং করতে ব্যর্থ হয়েছেন, কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারেননি, তারও পদত্যাগ দাবি করছি।”
এবার বর্ষার শুরুতেই ঢাকায় মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব ঘটে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সোমবার জানায়, ৫০টি জেলায় ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এক হাজার ৯৬ জন দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মৌসুমে সারাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা ১৩ হাজার ছাড়িয়েছে।
এবারের বর্ষা মওসুমে এডিস মসার প্রাদুর্ভাব ও ডেঙ্গুর প্রকোপ যে বাড়তে পারে, সে বিষয়ে সিটি করপোরেশনসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে আগেই সতর্ক করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
ডেঙ্গু মোকাবেলায় সমন্বয়ে ঘাটতি ছিল বলে কথা এসেছে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতা মোহাম্মদ নাসিমের কাছ থেকেও। করণীয় ঠিক করতে তিনি ঢাকার দুই মেয়র সাঈদ খোকন ও আতিকুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে বসতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন।
ফখরুল বলেন, “সিটি করপোরেশন সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে ডেঙ্গু মশা নিধনে। আইসিডিডিআর,বি পূর্ব সতর্কবার্তা দিয়েছিল, যে ওষুধ ব্যবহার করছে সেটা কার্য্করী নয়। দুই সিটি করপোরেশন সেটাকে গুরুত্ব না দিয়ে ৫০ কোটি টাকার ওষুধ ব্যবহার করেছে।
“এখন ঢাকা শহরের হাসপাতালগুলোতে কোনো বেড খালি নেই। চিকিৎসক, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীসহ অনেকে মারা গেছেন। আমাদের দলের ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমরও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন।”
ডেঙ্গু বিষয়ে জনগণকে সচেতন করতে সারাদেশে প্রচারপত্র বিলির কর্মসূচি বিএনপি নিয়েছে বলে জানান ফখরুল।
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বৈঠক ও সংবাদ সম্মেলনের আগে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দলের ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর ছেলে সারফাত ওয়াসিউদ্দিনকে দেখতে যান বিএনপি মহাসচিব। তারা দুজনই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত।
হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ইউনাইটেডে ভর্তি দলের ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীকে দেখে আসেন বিএনপি মহাসচিব।
এসময় তার সঙ্গে ছিলেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সহ প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিম, ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেন, চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান।
ডেঙ্গু ও গুজব নিয়ে বিএনপিকে দায়ী করে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বক্তব্যের সমালোচনাও করেন ফখরুল।
তিনি বলেন, “সব কিছুতে সরকার বিএনপি ভুত দেখে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি হচ্ছে এটা গুজবের ফ্যাক্টরি। আমরা এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে এ্ ধরনের বক্তব্য প্রদান থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “আসলে সরকার তার ব্যর্থতা ঢাকার জন্য উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছে।”
বন্যা পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসনে কৃষকদের বীজ, সারসহ কৃষি উপকরণ বিনামূল্যে দেওয়ার দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব। বন্যাকবলিত এলাকায় কৃষকদের কৃষি ঋণ পুরোপুরি মওকুফের দাবিও জানান তিনি।
বন্যা পরবর্তী করণীয় বিষয়ে দলের পক্ষ থেকে একটি প্রচারপত্র বিলির সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও জানান তিনি।