ডেঙ্গু, মশা ঠেকাতে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবাইকে যার যার অবস্থানে থেকে সক্রিয় হওয়ার এবং মশার বংশ বিস্তার রোধে বাড়ি, কর্মস্থল ও আশপাশের এলাকা পরিষ্কার রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 July 2019, 09:26 AM
Updated : 30 July 2019, 10:47 AM

মঙ্গলবার লন্ডন থেকে টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকায় আওয়ামী লীগের বিশেষ জরুরি বৈঠকে যুক্ত হয়ে তিনি এ আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি সবাইকে আহ্বান করব, নিজের ঘরবাড়ি আশপাশের রাস্তাঘাট যেন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে, সে ব্যপারে যেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সবাই যদি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে, তাহলে আমরা এখান থেকে রক্ষা পেতে পারব।”

এবার বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই ঢাকায় মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে শুরু করে। জুলাইয়ের শেষে এসে তা রাজধানীর বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে, যা হয়ে উঠেছে সাধারণ নাগরিক থেকে সরকার- সবার উদ্বেগের কারণ।  

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন প্রায় পৌনে ১৪ হাজার মানুষ। ইতোমধ্যে দেশের ৫০ জেলায় ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত করা হয়েছে।

বিভিন্ন জেলায় আক্রান্তদের অনেকে ঢাকা থেকে রোগ নিয়ে গেছেন। তবে রাজধানীর বাইরেও এডিস মশার বিচরণ রয়েছে বলে স্থানীয় পর্যায়ে আক্রান্তের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

ঢাকা জুরাইন এলাকায় নির্মিত ফ্লাইওভারের নিচে জমে থাকা পানি হয়ে উঠছে মশার আবাস।

ঢাকায় এডিস এজিপ্টাই মশাই প্রধানত ডেঙ্গুর বাহক; তবে ঢাকার বাইরে থাকা এডিস এলবোপিকটাস মশাও ডেঙ্গু রোগের বিস্তারের কারণ ঘটাতে পারে।

বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে বিশেষ জরুরি বৈঠকের শুরুতেই দলের সভাপতি শেখ হাসিনা টেলিকনফারেন্সে বলেন, “ইদানিং একটি উপদ্রব দেখা দিয়েছে- ডেঙ্গু। ডেঙ্গু জ্বরটা যখন শুরু হয়, তখন আমরা দেখেছি,বিশেষ করে শহর এলাকায়, ঢাকা শহরের এর বিস্তার ছিল।

“তবে এটা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে যাচ্ছে। সামনে কোরবানির ঈদের সময় মানুষ বাড়িতে যাবে। যারা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে বা যাদের শরীরে এই বীজটা রয়ে গেছে, তারা আবার নিজ নিজ এলাকায় গেলে পড়ে সেখানে যদি মশা কামড় দেয়, তাহলে হয়ত অন্য কেউ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে।”

সেজন্য সবাইকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতন হওয়ার ‘অনুরোধ’ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সবার নিজ নিজ ঘর বাড়ি, কাপড় চোপড়-যেগুলো অলনায় ঝোলানো থাকে,বাক্সে বা আলমারিতে থাকে;সেগুলো পরিষ্কার রাখা, ঘরের সকল কোণা, সবকিছু পরিষ্কার করে রাখা।”

এডিস মশা বংশবিস্তার করে জমে থাকা পরিষ্কার পানিতে। সে কারণে বৃষ্টির পানি যেন কোথাও জমে না থাকে, সে বিষয়ে সজাগ থাকতে বলেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “এডিস মশা বেশিরভাগ সময় পায়ের দিকে কামড়ায়। সে কারণে পা ঢেকে রাখতে হবে, ঘুমানোর সময় মশারি টাঙিয়ে ঘুমাতে হবে।”

ডেঙ্গুর বিষয়ে সচেতনাতা সৃষ্টিতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “আমি আমাদের যুবলীগ,ছাত্রলীগ,স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ সহযোহী সংগঠনকে আহ্বান জানাব, আমাদের কর্মীরাও যেন মাঠে নেমে পড়ে।”

ছাত্র, শিক্ষক, পেশাজীবী থেকে শুরু করে সব ধরনের সংগঠকে এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির কাজে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এয়ার কন্ডিশনের পানি, ফ্রিজের পানি, ফুলে টব বা ফুলদানির পানিসহ টায়ার, ভাঙ্গা হাড়িতে পানি জমে থাকে। সবাইকে পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দেওয়া দরকার।”

পরিস্থিতি সামাল দিতে ঢাকার দুই মেয়রের সঙ্গে কথা বলে নির্দেশনা দেওয়ার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি সকলকে বলব, মশা যেন ডিম পাড়তে না পাড়ে, মশার লার্ভা যেন তৈরি না হয়, বংশ বিস্তার করতে না পারে। এটা প্রত্যেকটি মানুষকে নিজেকেই করতে হবে, এটাই বাস্তবতা।”

সাংবাদিকদেরও এ বিষয়ে সচেতন থাকার তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের বিভিন্ন জায়গায় ‘ঘুরতে হয়’, সেজন্য নিজেকে ‘সুরক্ষিত’ রাখতে হবে।

“পাশাপাশি এটাও দেখতে হবে যে সকলে যেন সাবধান থাকে। কর্মস্থলে মশা যেন কামড়াতে না পারে, বংশ বিস্তার করতে না পারে।”