শহীদ মিনারে চিত্রনায়ক ফারুককে শেষ শ্রদ্ধা মঙ্গলবার

কখন, কোথায় তাকে সমাহিত করা হবে, তা এখনও জানান হয়নি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 May 2023, 11:39 AM
Updated : 15 May 2023, 11:39 AM

বাংলা চলচ্চিত্রের এক সময়ের জনপ্রিয় নায়ক আকবর হোসেন পাঠান ফারুকের লাশ সিঙ্গাপুর থেকে দেশে পৌঁছাবে মঙ্গলবার সকালে।

এরপর সকাল ১১টায় সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তার মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট।

জোটের প্রচার সম্পাদক মীর মাসরুর জামান রনি স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সেখানে দুপুর ১টা পর্যন্ত কফিন থাকবে।

সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সকালে ৮টায় ইউএস বাংলার একটি ফ্লাইটে তার মরদেহ ঢাকায় আসবে। বিমানবন্দর থেকে মরদেহ গুলশানের বাসায় নিয়ে যাওয়া হবে। সেখান থেকে ১১টায় মরদেহ শহীদ মিনারে নেওয়া হবে।”

তবে কখন, কোথায় তাকে সমাহিত করা হবে, সে বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য জানা সম্ভব হয়নি।

এক সময় ছাত্র আন্দোলনে থাকা ফারুক অভিনয় প্রায় ছেড়ে দেওয়ার পর ঢাকার গুলশান-ক্যান্টনমেন্ট আসন থেকে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন।

Also Read: চিত্রনায়ক ফারুকের চিরবিদায়

Also Read: ঢাকাই সিনেমার ‘মিয়া ভাই’

বেশ কিছুকাল ধরে অসুস্থ ফারুক (৭৫) সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে সোমবার মারা যান।

নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ২০২১ সালের মার্চের প্রথম সপ্তাহে সিঙ্গাপুরে গিয়েছিলেন ফারুক। তখন রক্তে সংক্রমণ ধরা পড়লে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ভর্তি হন।

সিঙ্গাপুরে নেওয়ার পর প্রায় চার মাস ধরে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রেখে চিকিৎসা দিতে হয়েছিল তাকে। শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় মাস ছয়েক পরে তাকে কেবিনে নেওয়া হয়। এরপর থেকে হাসপাতালেই ছিলেন তিনি।

১৯৪৮ সালের ১৮ অগাস্ট পুরান ঢাকায় ফারুকের জন্ম। পুরো নাম আকবর হোসেন পাঠান দুলু, বাবার নাম আজগার হোসেন পাঠান। পাঠান পরিবারের এই সন্তানের বেড়ে ওঠা পুরান ঢাকায়।

ছাত্র বয়সেই ছাত্রলীগে জড়িয়ে পড়েন ফারুক। দেশ স্বাধীন করতে মুক্তিযুদ্ধে ধরছিলেন অস্ত্রও।

তবে মুক্তিযুদ্ধের আগেই সিনেমায় নাম লিখিয়েছিলেন এই নায়ক, ‘জলছবি’ নামের সেই সিনেমা মুক্তি পায় একাত্তরে। প্রথম সিনেমাতে তার নায়িকা ছিলেন কবরী। যে জুটি আজও স্মৃতিতে উজ্জ্বল ‘সুজনসখী’ নামে।

ক্যারিয়ারে প্রথম থেকে ফারুক নজর কেড়েছিলেন নির্মাতা খান আতাউর রহমানের। যার হাত ধরে একটু একটু করে এগিয়েছিলেন তিনি। এরপর আমজাদ হোসেন, নারায়ণ ঘোষ মিতা, প্রমোদ করের মতো পরিচালকরা তাদের সিনেমায় বেছে নেন ফারুককে।

সারেং বউ, লাঠিয়াল, নয়নমণি, গোলাপী এখন ট্রেনে, দিন যায় কথা থাকে, জনতা এক্সপ্রেস, সাহেব, মিয়াভাই, নাগরদোলা, সুজনসখী, ঘরজামাই, ভাইভাই, বিরাজ বৌ এর মতো চলচ্চিত্রে অভিনয় করে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এক অনন্য জায়গায় নিজেকে নিয়ে যান খ্যাতিমান এই অভিনেতা।

ফারুক-কবরী, ফারুক-ববিতা জুটি সময়ে সাথে সাথে পাকাপোক্ত জায়গা করে নেয় দর্শক মনে। বিশেষ করে ববিতা-ফারুক জুটিই ছিল সবচেয়ে জনপ্রিয়। তাদের পর্দারসায়ন এত চমৎকার ছিল যে পর্দার বাইরে তাদের প্রেম চলছে এমন গুঞ্জনও আশির দশকের ফিল্মি ম্যাগাজিনগুলোতে প্রকাশিত হয়। যদিও তারা কেউই এ বিষয়ে কখনও মুখ খোলেননি।

এছাড়া শাবানা, রোজিনা, সুচরিতা, অঞ্জু ঘোষ, অঞ্জনাও ফারুকের নায়িকা হয়েছেন বিভিন্ন সিনেমায়।

মুক্তিযুদ্ধের দুই সিনেমা ‘আবার তোরা মানুষ হ’ এবং আলোর মিছিল’-এ ফারুক মূল ভূমিকায় না থাকলেও প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এই দুটি কাজকে তার টার্নিং পয়েন্ট ধরা হয়। তবে কবরীকে নায়িকা করে ‘সারেং বউ’ আর ‘সুজনসখী’ সিনেমা ফারুকের ক্যারিয়ারকে উজ্জ্বল করে তুলেছিল।

গ্রামের বেকার যুবক, পরিশ্রমী কৃষক, ট্রাকচালক, ট্রেনচালক, ইত্যাদি চরিত্রের মাধ্যমে তিনি সাধারণ দর্শকের মনের নায়কে পরিণত হন।

‘লাঠিয়াল’ সিনেমায় শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব চরিত্রে সেরা অভিনয়ের জন্য ১৯৭৫ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান ফারুক। এছাড়া চলচ্চিত্রে সামগ্রিক অবদানের জন্য ২০১৬ সালে এই অভিনেতাকে দেওয়া হয় আজীবন সম্মাননা।

সিনেমায় আসার আগে ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন ফারুক। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে ছয় দফা আন্দোলনে যোগ দেন। অসংখ্য মামলায় ব্যাপক পুলিশি হয়রানিরে শিকার হন সেসময়।

উনসত্তরের গণ আন্দোলনেরও সক্রিয় কর্মী ছিলেন ফারুক। পরে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়ে বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। মুক্তিযুদ্ধ থেকে ফিরে আবার চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেন।

অভিনয় থেকে অবসরের পর রাজনীতির মাঠে ফের নামেন ফারুক। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে ঢাকা-১৭ আসনের এমপি হন তিনি।