‘বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, কী করে পারলি?’

১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি স্মরণ করলেন নাসির ‍উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু।

পাভেল রহমানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 August 2022, 02:21 PM
Updated : 15 August 2022, 02:21 PM

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ‘ক্র্যাক প্লাটুন’নামের গেরিলা দলটি হয়ে উঠেছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কাছে আতঙ্কের নাম। একের পর এক গেরিলা আক্রমণ করে পাক-বাহিনীর ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন বাংলার তরুণ গেরিলারা। সেই ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্য ছিলেন নাসির উদ্দীন ইউসুফ। পরবর্তীতে ঢাকা উত্তর মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার হিসাবেও নেতৃত্ব দেন তিনি। স্বাধীনতার পর মঞ্চনাটক এবং চলচ্চিত্রে খ্যাতি অর্জন করেন, হয়ে উঠেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব।

১৫ অগাস্ট নাসির উদ্দীন ইউসুফের ফেইসবুকের প্রোফাইল ছবিতে দেখা গেল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার চিবুক ধরে আদর করছেন। সেই ছবিটির গল্প শুনতে কথা হয় নাসির উদ্দীন ইউসুফের সঙ্গে। সেই স্মৃতি স্মরণ করে নাসির উদ্দীন ইউসুফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বঙ্গবন্ধু আমার চিবুক ধরে বলেছিলেন, ‘এত হ্যাংলা-পাতলা একটা ছেলে। কী করে পারলি? পাঞ্জাবিদের এত বড় বড় তাগড়া সৈনিকদের কী করে হারায় দিলি’?”

দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালের ৩১ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দীন ইউসুফ। সেদিন দৃশ্যটি ধারণ করেন চিত্রগ্রাহক শফিকুল ইসলাম স্বপন।

নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, “বঙ্গবন্ধু তখন সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হলো সকল মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। তখন দেখতে পাই, যুদ্ধ করেননি এমন অনেকেও অস্ত্র জমা দিচ্ছেন। তারা মূলত পাকিস্তানি আর্মিদের ফেলে যাওয়া অস্ত্রগুলো পুলিশের কাছে জমা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সাজার চেষ্টা করছিলেন। সেই সময় আমরা কয়েকজন সিদ্ধান্ত নিই, পুলিশের কাছে অস্ত্র জমা দেবো না। বঙ্গবন্ধুর ডাকে যুদ্ধ গিয়েছি, সরাসরি বঙ্গবন্ধুর হাতেই অস্ত্র জমা দেব।”

একাত্তরের এই গেরিলা আরও বলেন, “বঙ্গবন্ধুর ছেলে শেখ কামাল ছিল আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু। তার কাছে বিষয়টি বলি। শেখ কামাল বঙ্গবন্ধুকে জানালে তিনি আমাদের ডাকেন। বঙ্গবন্ধুর সামনে গিয়ে আমি তাকে স্যালুট করে অস্ত্র জমা দেই। এ সময় বঙ্গবন্ধু আমার চিবুক ধরে আদর করেন। ৫/৭ মিনিটের মতো আমার কাঁধে হাত রেখে পুরাতন গণভবনের সবুজ চত্বরে হাঁটেন। স্বপনের ক্যামেরায় চিবুক ধরার সেই দৃশ্যটি ধারণ হয়।”

নাসির উদ্দীন ইউসুফ জানান, চিত্রগ্রাহক স্বপন পরবর্তীতে ঢাকা থিয়েটারের সদস্য হিসাবে কাজ করেছে। পুনে ফিল্ম ইন্সটিটিউট থেকে লেখাপড়া করে চলচ্চিত্রেও কাজ করেছে। চলচ্চিত্রে চিত্রগ্রাহক হিসাবে একাধিকবার জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। সালাউদ্দিন জাকির আলোচিত ‘ঘুড্ডি’ সিনেমার চিত্রগ্রাহক ছিল স্বপন।