দীপিকার জন্মের আগেও অস্কারের মঞ্চে ছিল ভারতীয়

অস্কারে জড়িয়ে আছে সত্যজিৎ রায়সহ বেশ কয়েকজন ভারতীয়র নাম।

গ্লিটজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 March 2023, 06:33 AM
Updated : 4 March 2023, 06:33 AM

পার্সিস খাম্বাত্তার নামটি জড়িয়ে গেল দীপিকা পাড়ুকোনের সঙ্গে। হালে দীপিকা নামটি যতটা পরিচিত, ঠিক ততটাই অপরিচিত পার্সিস খাম্বাত্তার নামটি। অথচ দীপিকার জন্মের চার বছর আগে ১৯৮০ সালে অস্কারের মঞ্চে ছিলেন এই ভারতীয়।

পার্সিস তো শুধু মঞ্চ মাতিয়েছেন, অস্কারে পুরস্কার জয়ের গৌরবেও রয়েছে বেশ কয়েকজন ভারতীয়। এর শুরুটা হয়েছিল ভানু আথাইয়াকে দিয়ে। এরপর গুলজার, এ আর রেহমানসহ কয়েকজন অস্কার জয় করলেও অস্কারপ্রাপ্তিতে সব ভারতীয়কে ছাড়িয়ে আছেন ভারতের চলচ্চিত্রের দিকপাল সত্যজিৎ রায়।

হলিউডে অস্কারের ৯৫তম আসরে দীপিকা ডাক পাওয়ার আগে এই আয়োজনে ভারতীয় সংযোগ তুলে এনেছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।

ভানু আথাইয়া

ভারতের প্রথম অস্কারজয়ী ভানু আথাইয়া একজন কস্টিউম ডিজাইনার। ‘গান্ধী’ সিনেমার কস্টিউম ডিজাইনার হিসেবে ১৯৮২ সালে অস্কার জিতে নেন তিনি। তার জন্ম ১৯২৯ সালে মহারাষ্ট্রের কোলাপুরে। বলিউডে তার কাজের শুরু ১৯৫৬ সালে। প্রায় শতাধিক সিনেমায় তিনি কাজ করেছেন। বিশেষ করে ‘গাইড’ সিনেমায় নায়িকা ওয়াহিদা রহমান এবং ‘সত্যম শিবম সু্ন্দরম’ ছবিতে জিনাত আনাম তার পোশাকেই চির ভাস্বর হয়ে আছে।

অস্কার ছাড়াও ভানু আথাইয়া ‘লেকিন’ ও ‘লাগান’ সিনেমায় দুবার ভারতের জাতীয় পুরস্কার পান। তবে ২০১২ সালে অস্কারের স্মারক একাডেমি অব মোশন পিকচার্সকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। তার ভাষ্য ছিল, এই স্মারকের যথাযথ ‘সংরক্ষণ’ তিনি করতে পারছেন না। তিন বছর শয্যাশায়ী থেকে ৯১ বছর বয়সে ২০২০ সালে মারা যান ভানু আথাইয়া।

সত্যজিৎ রায়

বৈচিত্র্যময় বাঙালি লেখক, নির্মাতা, আঁকিয়ে সত্যজিৎ রায়। ভানু আথাইয়ার পর এক দশক বাদে সত্যজিতের হাত ধরে ভারতে অস্কার আসে ১৯৯২ সালে এর ৬৪তম আসরে। ‘পথের পাঁচালি’, ‘অপুর সংসার’, ‘হীরক রাজার দেশে’, ‘ঘরে বাইরে’, ‘চারুলতা’, ‘দেবী’, ‘মহানগর’, ‘সোনার কেল্লা’র মতো কালজয়ী সব সিনেমার স্রষ্টাকে মৃত্যুর কিছুদিন আগে একাডেমি অব মোশন পিকচার্স (অস্কার) বিশেষ সম্মননা দেয়। নির্দিষ্ট কোনো চলচ্চিত্র বা কাজের নয়, পরিচালনাসহ চলচ্চিত্রের বিভিন্ন শাখায় বিশেষ অবদানের জন্য সত্যজিৎ এই সম্মাননা পেয়েছিলেন।

অসুস্থতার জন্য সত্যজিৎ পুরস্কার মঞ্চে উপস্থিত থাকতে পারেননি। কিন্তু মৃত্যুশয্যায় তার অস্কারপ্রাপ্তির অনুভূতি ভিডিও ধারণ করে পরবর্তীতে অস্কার অনুষ্ঠানে দেখানো হয়।

এ আর রহমান

সত্যজিতের পর অস্কার আসরে প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছিল ভারত। ২৭ বছর পর ২০০৯ সালে ভারত সংগীতে অস্কার পুরস্কারের মুখ দেখে এ আর রহমানের মাধ্যমে। ‘স্লামডগ মিলিওনেয়ার’ সিনেমায় ‘জয় হো’ গানের জন্য অস্কার পান ‘দ্য মোৎসার্ট অব মাদ্রাজ’ খ্যাত এই সুরকার ও সংগীত পরিচালক। অস্কারের ৮২তম ওই আসরে ‘জয় হো’ গানটি সেরা মৌলিক গানের জন্য অস্কার জিতে নেয় এবং মনোনয়ন পাওয়া ১০টি বিভাগের মধ্যে ৮টিতেই বিজয়ী ঘোষণা করা হয় স্লামডগ মিলিওনেয়ারকে।

শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক হিসেবে অস্কার জিতে মঞ্চেও ‘জয় হো’ গানটিও করেন এ আর রহমান। গানটির গীতিকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা গুলজার।

এর আগে এ আর রহমান জানিয়েছিলেন, অস্কারের আগের রাতে তিনি উপোস করেই ছিলেন, তবে বলার মত আলাদা করে কোনো অনুভূতি তার নেই।

১৯৯২ আসলে মনিরত্নমের তামিল সিনেমা ‘রোজা’ তে সংগীত পরিচালনা করে বলিউডে শোরগোল ফেলে দিয়েছিলেন এ আর রহমান, যার জয়রথ ছুটছে আজ অবধি।

রেসুল পোকুট্টি

‘জয় হো’ গানে সেরা ‘সাউন্ড মিক্সিং’র অস্কার ওঠে ভারতের রেজাল পোকুটির হাতেও।

গুলজার

গুলজার একাধারে সাহিত্যিক, গীতিকার, চলচ্চিত্র নির্মাতা, সংলাপ রচয়িতা, চিত্রনাট্যকার। যেখানেই তিনি হাত দিয়েছেন, সাফল্য পেয়েছেন। বাংলা সাহিত্যের বিশেষ অনুরাগী, রবীন্দ্রভক্ত এই কবির ঝুলিতেও ধরা দেয় অস্কার। ‘স্লামডগ মিলিওনেয়ার’ সিনেমায় ‘জয় হো’ গানের গীতিকার তিনি। ‘জয় হো’ গানে অস্কার জিতে নিলেও ওই আসরে অনুপস্থিত ছিলেন তিনি।

রাহুল সিপলিগঞ্জ ও কালা ভৈরব

এর পরের অধ্যায় ২০২৩ সাল। ভারতীয় নির্মাতা এস এস রাজামৌলির ‘আরআরআর’ সিনেমার ‘নাটু নাটু’ গানটি মনোনয়ন পেয়েছে অস্কারে ৯৫তম আসরে। তেলেগু ভাষায় গানটি লিখেছেন কালা ভৈরব ও রাহুল সিপলিগঞ্জ। প্রবীণ সংগীত পরিচালক এমএম কিরাভানির সুরে কণ্ঠ দিয়েছেন রাহুল সিপলিগঞ্জ ও কালা ভৈরব।‘আরআরআর’ সিনেমায় জুনিয়র এনটিআর আর রামচরণকে দেখা গেছে এই গানের সঙ্গে তুমুল নাচে।

আগামী ১২ মার্চ লস অ্যাঞ্জেলেসের ডলবি থিয়েটারে বসবে অস্কারের বর্ণাঢ্য আসর। ওই আসরে শেষ হাসি হাসতে ‘নাটু নাটু’কে টপকে যেতে হবে ‘অ্যাপ্লস’, ‘হোল্ড মাই হ্যান্ড’, ‘লিফট মি আপ’ এবং ‘দিস ইজ লাইফ’র মতো চারটি জনপ্রিয় গানকে।

শৌনক সেন ও কার্তিকি গনসালভেস

অস্কারে ডকুমেন্টারি ফিচার বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছে ‘অল দ্যাট ব্রিদস’ এবং স্বল্পদৈর্ঘ্যে তথ্যচিত্র বিভাগে ‘দ্যা এলিফেন্ট হুইসপারস’।

প্রবাসী বাঙালি নির্মাতা শৌনক সেন তার ‘অল দ্য ব্রিদস’ সিনেমায় দেখিয়েছেন দূষণে ঢেকে যাওযা দিল্লির পরিবেশে পাখিদের টিকে থাকার গল্প। সেখানে দিল্লি শহরে থাকা দুই ভাই মিলে তাদের বাড়ির বেজমেন্টে গড়ে তুলেছেন পাখিদের জন্য একটি হাসপাতাল। যেখানে অসুস্থ চিলদের উদ্ধার করে চিকিৎসা করে তারা। তবে সিনেমাটি শুধু সাদামাটা এমন গল্পে থেমে থাকেনি, ওই হাসপাতাল নিয়ে তাদের সংগ্রামে সিনেমা নেয় নতুন মোড়।

আর পরিচালক কার্তিকি গনসালভেসের ৪১ মিনিটের তথ্যচিত্র ‘দ্য এলিফেন্ট হুইসপারসে এক হাতির সাথে আদিবাসী দম্পতির মায়ার বন্ধনে জড়িয়ে যাওয়ার গল্প তুলে ধরা হয়েছে।

অস্কারে নাম এসেছে আর যাদের

  • পার্সিস খাম্বাত্তা: সাল ১৯৮০, অস্কার মঞ্চে সেরা সিনেমা এবং কলাকুশলীদের হাতে পুরস্কার তুলে দিতে নানা দেশের তারকাদের সাথে প্রথমবারের মতো নাম আসে এক ভারতীয় তারকার। তিনি মডেল ও অভিনেত্রী পার্সিস খাম্বাত্তা। এই অভিনেত্রী মাত্র ১৫ বছর বয়সে ‘মিস ইন্ডিয়া’ হয়েছিলেন।

  • প্রিয়াঙ্কা চোপড়া: পার্সিস খাম্বাত্তার পর দীর্ঘ ৩৬ বছর ভারত থেকে কোন তারকা সেরাদের হাতে পুরস্কার তুলে দিতে ডাক পাননি অস্কার মঞ্চে। অবশেষে ২০১৬ সালে ৮৮তম আসরে নাম আসে নায়িকা প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার। ওই আসরে প্রিয়াঙ্কা তুলে দেন সেরা সম্পাদনার পুরস্কারটি।

  • দীপিকা পাড়ুকোন: সাত বছর পর ফের অস্কারে পুরস্কার তুলে দিতে যাচ্ছে ডলবি থিয়েটারে যাচ্ছেন অভিনেত্রী দীপিকা পাড়ুকোন। ডোয়াইন জনসন, এমিলি ব্লান্ট, স্যামুয়েল এল জ্যাকসন, মাইকেল জর্ডানসহ আরও কয়েকজন তারকার সঙ্গে আছে দীপিকার নাম।