সিনেমা বানাতে গিয়ে এফডিসির চক্করে

কাঠখড় পুড়িয়ে সিনেমা তৈরির পর মুক্তি দিতে গিয়ে এফডিসির ঘাটে ঘাটে যে অর্থ দিতে হয়, তাতে ক্ষুব্ধ হালের নির্মাতারা।

পাভেল রহমানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Nov 2022, 07:09 PM
Updated : 17 Nov 2022, 07:09 PM

বাংলাদেশে কোনো সিনেমা তৈরি করলেই তা দেখানো যায় না, প্রদর্শনের জন্য লাগে সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র। সেই ছাড়পত্র নিতে গেলে আনতে হয় আবার এফডিসির অনাপত্তিপত্র।

সেই অনাপত্তিপত্র তুলতে গিয়ে এক চক্করে পড়লেন ‘সাঁতাও’ সিনেমার নির্মাতা খন্দকার সুমন, যাকে ‘গোলক ধাঁধা’ বলছেন হালের চলচ্চিত্র নির্মাতারা।

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের (এফডিসি) গ্রাহক হতে প্রথমে ১ লাখ টাকা দিতে হয়েছে সুমনকে। সেখানেই শেষ নয়, ওই অনাপত্তিপত্র পেতে বড় অঙ্কের অর্থ দিয়ে হতে হয়েছে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি ও প্রযোজক সমিতির সদস্য।

পুরো বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়েছেন সুমন। তার ভাষায়, “চলচ্চিত্রটির ক্ষেত্রে এফডিসির কোনো পাওনা নেই- অনাপত্তিপত্রে কেবল এতটুকু কথা লিখে নিতে একজন নির্মাতাকে পরিচালক সমিতির সদস্যপদের জন্য ৭৫,০০০/- টাকা এবং প্রযোজক সমিতির সদস্যপদের জন্য ১,০৫,০০০/- টাকা, আনুসঙ্গিক ব্যয়ের জন্য ৫,০০০/- টাকা, বিএফডিসির গ্রাহক হতে ১,০০,০০০/- টাকা এবং বিএফডিসির সার্ভিস চার্জ ১০,০০০/- টাকা মোট ২,৯৫,০০০/- টাকা পরিশোধ করতে হয়।”

এক সময় দেশের চলচ্চিত্র নির্মাণ এফডিসিকে কেন্দ্র করে হলেও এখন অবস্থা অনেক বদলে গেছে। স্বতন্ত্র ধারার চলচ্চিত্র নির্মিত হচ্ছে অনেক, যার নির্মাতারা এফডিসির ধারেও যান না, তবে সিনেমা মুক্তি দিতে গিয়ে তাদের এফডিসিতেই বাধ্যতামূলকভাবেই যেতে হচ্ছে।

“এফডিসির বাইরে নির্মিত চলচ্চিত্রকে কেন এফডিসির অনাপত্তিপত্র নিতে হবে? এফডিসির ভিতরে নির্মিত মাত্র ২০ ভাগের কম চলচ্চিত্রের জন্য ৮০ ভাগের বেশি চলচ্চিত্র নির্মাতাকে এফডিসির অনাপত্তিপত্র বাধ্যতামূলক করা কতটা যৌক্তিক? এমন প্রশ্নের উত্তর সেন্সর বোর্ড আমাকে দেয়নি,” বলার পাশাপাশি সুমন জানিয়েছেন, চলচ্চিত্র সেন্সর আইনেও এফডিসির অনাপত্তিপত্রের বিষয়টি নেই।

তাহলে এফডিসির অনাপত্তিপত্র নেওয়ার বিষয়টি কেন আসছে?

চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান মুহ. সাইফুল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এটা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা।

“এফডিসির অনাপত্তিপত্র নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়ের একটি নির্দেশনা রয়েছে। সে মোতাবেক সেন্সরের জন্য আবেদনের সাথে এফডিসির অনাপত্তিপত্র জমা দিতে হয়।”

তবে কোনো চলচ্চিত্র সংগঠনের সদস্য হতে হয় কি না, সেটা সেন্সর বোর্ডের দেখার বিষয় নয় বলে জানান তিনি।

“সেন্সর বোর্ডে আবেদনের জন্য কেবল এফডিসির অনাপত্তিপত্র জমা দিতে হয়।”

এফডিসির অর্থ বিভাগের উপপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) নিকেশ কুমার বড়ুয়া টাকা নেওয়ার যুক্তি দেখিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কোনো নির্মাতা এফডিসিতে কাজ না করলেও অনাপত্তিপত্রের জন্য তো উনার ফাইল খুলতে হয়, এন্ট্রি করতে হয়। পূর্বে এফডিসিতে কোনো কাজ করেছিলেন কি না? সেখানে কোনো বকেয়া ছিল কি না? সেগুলো খুঁজে দেখতে হয়।

“এজন্য এফডিসিতে কোনো কাজ না করলেও ১৫ হাজার টাকার একটা চার্জ নেওয়া হয়। আর যিনি এফডিসিতে কাজ করেছেন, তাদের ক্ষেত্রে তো যা বিল আসে, সেই বিল পরিশোধ করার পর অনাপত্তিপত্র দেওয়া হয়।”

এফডিসি তো এখন মৃতপ্রায়। এই অথর্ব প্রতিষ্ঠানটিকে টিকিয়ে রাখতে চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জিম্মি করে ‘এফডিসি বাঁচাও প্রকল্প’ শুরু হয়েছে। এসব বন্ধ করা উচিৎ।
বেলায়াত হোসেন মামুন

তবে এফডিসিভিত্তিক প্রযোজক সমিতি ও পরিচালক সমিতির সদস্য না হলেও অনাপত্তিপত্রও মেলে না বলে নির্মাতাদের অনেকেই জানিয়েছেন।

চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির সাবেক সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সমিতির সদস্যরা ৪০ লাখ টাকা পর্যন্ত বকেয়া রেখে এফডিসির বিভিন্ন সুবিধা ব্যবহার করতে পারেন।

নির্মাতা খন্দকার সুমন বলছেন, “এফডিসিতে অনাপত্তিপত্র নিতে গেলে এবং পরবর্তীতে প্রেক্ষাগৃহে সিনেমা মুক্তি দিতে গেলে চলচ্চিত্র সংগঠনেরও সদস্য হতে হয়। একটি সমিতির সদস্য পদ নেয়া অথবা না নেওয়া একজন নাগরিকের আর্থিক সামর্থ্য এবং ইচ্ছার উপরে নির্ভর করে। কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে তা বাধ্যতামূলক করা আইনসম্মত নয়।”

এই পুরো প্রক্রিয়াটিকে ‘জিম্মি’ করে টাকা নেওয়ার সঙ্গে তুলনা করছেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা। সেন্সর সনদের জন্য এফডিসিকে টাকা দেওয়ার বিষয়টিকে কেউ কেউ মজা করে বলছেন ‘এফডিসি বাঁচাও প্রকল্প’।

ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি বেলায়াত হোসেন মামুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এফডিসি তো এখন মৃতপ্রায়। এই অথর্ব প্রতিষ্ঠানটিকে টিকিয়ে রাখতে চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জিম্মি করে ‘এফডিসি বাঁচাও প্রকল্প’ শুরু হয়েছে। এসব বন্ধ করা উচিৎ।”

দীর্ঘদিন আগে গড়ে ওঠা সংগঠনগুলোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, “এফডিসির আশ্রয়ে গড়ে ওঠা চলচ্চিত্রের বিভিন্ন পেশাভিত্তিক সমিতিগুলো চলচ্চিত্রের মুক্তি ও স্বাধীনতার জন্য কিছু তো করছেই না, বরং এ সকল সমিতি বিভিন্ন গোষ্ঠীবাদিতা ও দলাদলির মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রের সুস্থ ও স্বাধীন বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করছে৷ বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের স্বাধীন ও সুস্থ বিকাশের জন্য এই সব হয়রানিমূলক অপতৎপরতা বন্ধ হওয়া জরুরি।”

সাঁতাও নির্মাতা খন্দকার সুমন বলেন, “এফডিসিতে কাজ করতে যাওয়াটা আরেক হয়রানি। সেখানকার কোনো ক্যামেরা ভাড়া নেওয়ার পর মনমতো সার্ভিস পাওয়া যায় না। অথচ এর চেয়ে কম টাকায় বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ক্যামেরা, এডিটিংসহ অন্যান্য সুবিধা নেওয়া যায়। তাহলে আমি কেন বেশি টাকা খরচ করে এফডিসিতে কাজ করতে যাব? কিন্তু তারা নির্মাতাদের বাধ্য করার চেষ্টা করছে। এটা তো ঠিক নয়।”

ছাড়পত্র মেলার পর আরেক লড়াই

ছাড়পত্র পাওয়ার পরও সিনেমা মুক্তি দেওয়াটি যে কত কঠিন, তা হাড়ে হাড়ে বুঝেছেন ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ সিনেমার নির্মাতা মুহাম্মদ কাইউম।

অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে গত ৪ নভেম্বর সিনেমাটি মুক্তি দিতে পেরেছিলেন জানিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “অনেক কষ্ট করে সিনেমাটি নির্মাণ করার পর আমি যখন মুক্তি দিতে চেয়েছি, তখন দেখি এফডিসি এবং চলচ্চিত্র সংগঠনকে আমার টাকা দিতে হচ্ছে। অথচ আমার সিনেমার নির্মাণ এবং প্রদর্শনে তাদের কোনো সহযোগিতা নেওয়া হয়নি।”

শুধু তারিখ নির্ধারণ করে দেওয়ার জন্য চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিবেশক সমিতিকে লক্ষাধিক টাকা দিতে হয় জানিয়ে কাইউম বলেন, “প্রতি সপ্তাহে কোন সিনেমা মুক্তি পাবে। শুধু এই তারিখ চূড়ান্ত করার জন্য বাধ্যতামূলকভাবে সমিতির সদস্য হওয়া এবং প্রতি বছর চাঁদা দেওয়া কতটা যৌক্তিক?”

কমিটি নিয়ে জটিলতা তৈরি হওয়ায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব খন্দকার নূরুল হক এখন চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির প্রশাসকের দায়িত্বে রয়েছেন। তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি তো এখানে সাময়িক সময়ের জন্য দায়িত্বে এসেছি। এই নিয়মটির বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারব না।”

প্রেক্ষাগৃহে সিনেমা মুক্তি দিতে হলে প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির সদস্য হওয়া বাধ্যতামূলক বলে জানান সমিতির সাবেক সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু। তিনি বলেন, সমিতির সদস্য হওয়ার জন্য ১ লাখ ২ হাজার টাকা দিতে হয় এবং বছরে ২,৫০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়।

প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির অফিস সচিব সৌমেন রায় বাবু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সমিতির সদস্য না হলে ব্যবসায়িকভাবে সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দেওয়া যাবে না। হল মালিকরাও সিনেমা প্রদর্শন করবে না।”

‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ সিনেমাটির মুক্তির তারিখ ঠিক করে দিলেও প্রদর্শনের ক্ষেত্রে সমিতি কোনো সহযোগিতা করেনি বলে অভিযোগ করেন কাইউম।

তিনি বলেন, “তারা আমাকে ৪ নভেম্বর সিনেমা মুক্তির জন্য তারিখ দেয়। এরপর আমি হল মালিকদের দ্বারে দ্বারে গিয়েছি। হল মালিকরা ভিন্ন গল্পের সিনেমা চালাতে চায় না। তারা জানতে চায়, তারকা কে কে আছেন সিনেমায়? কেউ আমাকে হল দেয়নি।

“পরে স্টার সিনেপ্লেক্সকে অনুরোধ করে রাজি করানো হয়েছে। সমিতি তো আমার সিনেমা প্রদর্শনে কোনো সহযোগিতা করছে না। তাহলে সমিতিকে কেন টাকা দিয়ে মুক্তির তারিখ নিতে হবে?”

প্রযোজক সমিতির নেতা খসরু এজন্য আবার সমিতিতে ভোটে নির্বাচিত কমিটি না থাকাকে কারণ দেখান। তার ভাষায়, ভোটে নির্বাচিতরা সদস্যদের প্রতি দায়বদ্ধ থাকেন। কিন্তু এখন যেহেতু নির্বাচিত কমিটি নেই, সরকারি কর্মকর্তা ‘প্রশাসক’ হিসেবে আছেন।

বাণিজ্যিক লাভের হিসাব কষে যারা সিনেমা নির্মাণ করেন না, তাদের জন্য সরকারের উদ্যোগ আশা করছেন ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যের উড়া’র নির্মাতা কাইয়ুম।

এক্ষেত্রে পাশের দেশ ভারতের কলকাতার নন্দনের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “ব্যক্তি উদ্যোগের প্রেক্ষাগৃহ মালিকরা লোকসান গুণে নিরীক্ষাধর্মী সিনেমা চালাতে চাইবে না, এটা ঠিক আছে। কিন্তু সরকারিভাবেও তো নিরীক্ষাধর্মী সিনেমা দেখানোর জন্য কোনো ব্যবস্থা নেই। আমাদের তো একটা ফিল্ম সেন্টার থাকা উচিৎ।”

চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সংগঠনের সদস্য হওয়ার ব্যাপারটি যৌক্তিক। শৃঙ্খলার জন্য এটা করা উচিৎ। আইনজীবী, চিকিৎসকসহ সব পেশাজীবীদেরই সংগঠন আছে।
মুশফিকুর রহমান গুলজার

নীতির পরিবর্তন হবে?

‘স্বাধীন ধারা’র চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিনেমা নির্মাণ থেকে মুক্তি দেওয়া পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াটাই এক গোলক ধাঁধার চক্করে রূপ নিয়েছে।

‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’র নির্মাতা কাইউম বলেন, “শুরুতে প্রযোজক জানতে চান- মূল চরিত্রে তারকা কে আছেন? নায়ক কে? নায়িকা কে? পরিচালক যখন বলেন, আমার সিনেমা একটু অন্যরকম গল্পের। সেখানে তারকার প্রয়োজন নেই। চরিত্রানুযায়ী অভিনয়শিল্পী দরকার। তখনই প্রযোজক আর বিনিয়োগ করতে রাজি হন না। অনেক ঘুরেও যখন প্রযোজক মেলে না তখন কেউ কেউ স্বপ্ন ছুঁয়ে দেখার নেশায় নিজের সর্বস্ব বিনিয়োগ করে নির্মাণ করেন সিনেমা।

“আর সেই স্বপ্নের সিনেমাটির নির্মাণ শেষ হওয়ার পর শুরু হয় সেন্সর সনদ নেওয়ার জন্য আরেক লড়াই। সেন্সর ছাড়পত্র পাওয়ার পর চলচ্চিত্র সংগঠনগুলোর হয়রানি। প্রতিটি ধাপে দিতে হয় টাকা। এত ধাপ পেরিয়ে আসার পর যখন সিনেমাটি নিয়ে হল মালিকদের কাছে যাওয়া হয়, তখন ফের পুরনো প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়, সিনেমায় তারকা কে কে আছেন? নায়ক কে? নায়িকা কে? সিনেমায় তারকা না থাকলে সেই সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শনে রাজি হন না হল মালিকরা।”

সেন্সরের জন্য এফডিসির অনাপত্তিপত্র চাওয়াটাই ‘অন্যায়’ মনে করছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা অনেক দিন ধরেই এই জিম্মিদশা থেকে চলচ্চিত্রকে মুক্ত করার দাবি জানিয়ে এসেছি। সরকার যদি উদ্যোগ নিয়ে এগুলো বন্ধ না করে, তাহলে তো স্বাধীন ধারার চলচ্চিত্র নির্মাতারা কাজ করতে পারবে না।

“ধাপে ধাপে এমন হয়রানি সহ্য করে কে সিনেমা বানাতে আসবে? আমাদের তরুণরা এখন নানা রকম নিরীক্ষাধর্মী চলচ্চিত্র নির্মাণ করছে। তাদেরকে তো পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে।”

তার কথারই প্রতিধ্বনি তোলেন চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সেন্সর বোর্ড থেকে সনদপত্র নিতে গেলে এফডিসির অনাপত্তিপত্র লাগবে কিংবা এফডিসিতে যেসব সংগঠন গড়ে উঠেছে তাদের প্রত্যয়ন লাগবে, এই পুরো প্রক্রিয়াটা আমার মনে হয় আধিপত্যবাদী মনোভাবের প্রকাশ। এটা মুক্ত হওয়া উচিৎ। চলচ্চিত্র বা যে কোনো শিল্প মাধ্যমের জন্যই মুক্ত পরিবেশ জরুরি।”

এফডিসির অনাপত্তিপত্র অপ্রয়োজনীয় মনে করলেও সমিতির সদস্যভুক্তির বিষয়টি আবার সমর্থন করছেন চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সদস্য ও পরিচালক সমিতির সাবেক সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সেন্সর সনদের জন্য এফডিসি থেকে অনাপত্তিপত্র নেওয়ার বিষয়টি আমিও সমর্থন করি না। যারা এফডিসিতে কাজ করেননি, তারা কেন এফডিসি থেকে অনাপত্তিপত্র নেবেন?

“তবে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সংগঠনের সদস্য হওয়ার ব্যাপারটি যৌক্তিক। শৃঙ্খলার জন্য এটা করা উচিৎ। আইনজীবী, চিকিৎসকসহ সব পেশাজীবীদেরই সংগঠন আছে। সংগঠনের সদস্য হলে জবাবদিহিতার মধ্যে থাকা হয়। নইলে নানা রকম বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। এজন্য সংগঠনের সদস্য হওয়ার বিষয়টি আমি সমর্থন করি।”

এই প্রেক্ষাপটে সরকার কী ভাবছে, জানতে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকারের মোবাইল কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (চলচ্চিত্র) মো. জাহাঙ্গীর আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সেন্সর সনদ নেওয়ার ক্ষেত্রে এফডিসি থেকে অনাপত্তিপত্র নেওয়ার বিষয়টি মন্ত্রণালয় পর্যালোচনা করছে। শিগগিরই এই বিষয়ে একটা যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”