২০০৮ সালে কোক স্টুডিওর যাত্রা শুরু হওয়ার পর সেই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশে আসে কোক স্টুডিও বাংলা (সিএসবি)।
Published : 05 Dec 2023, 07:26 PM
নতুন সিজন শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছে কোক স্টুডিও বাংলা, তার আগে স্মৃতির পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন প্ল্যাটফর্মটির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। যাত্রা শুরুর মাত্র ২০ মাসের মাথায় প্ল্যাটফর্মটির জনপ্রিয় হয়ে উঠার নানা প্রসঙ্গ উঠে এসেছে মুক্ত আলাপে।
মঙ্গলবার বিকালে ঢাকার একটি রেস্তরাঁয় আলাপে অংশ নেন 'কোক স্টুডিও বাংলা'র কিউরেটির ও সঙ্গীতশিল্পী অর্ণব এবং কোকা-কোলা বাংলাদেশ লিমিটেডের হেড অফ মার্কেটিং আবীর রাজবীন।
অর্ণব বলেন, “আমাদের তরুণরা এখন নানা ধরনের গান শুনতে চায়। অনলাইন দুনিয়ায় ঘরে বসেই হিপহপ থেকে ক্লাসিক্যাল সবই এখন সহজে শোনা যাচ্ছে। আমরা বাংলা গানের বৈচিত্রের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে চেয়েছি। বাংলা গানকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে চেয়েছি। কোক স্টুডিও বাংলা বিশ্বের সামনে তুলে ধরছে বাংলা সঙ্গীত ও শিল্পীদের।”
কোক স্টুডিও একটি সম্পূর্ণ ডিজিটাল মিউজিক প্ল্যাটফর্ম। এর মাধ্যমে উদীয়মান প্রতিভারা একত্রে ‘ম্যাজিক্যাল’ সঙ্গীত তৈরি করে নতুন দর্শকদের সামনে উপস্থাপন করার সুযোগ পান।
২০০৮ সালে কোক স্টুডিওর যাত্রা শুরু হওয়ার পর সেই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশে আসে কোক স্টুডিও বাংলা (সিএসবি)।
এখন পর্যন্ত চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের গান প্ল্যাটফর্মটিতে পরিবেশিত হয়েছে। এতে অংশ নিয়েছেন প্রায় ১০০ জন শিল্পী। যার মধ্যে আছেন অনিমেষ রায়, হামিদা বানু, আলেয়া বেগম, মুকুল মজুমদার ঈশানসহ অনেক প্রতিভাবান শিল্পী।
দুই সিজনের ২০টির বেশি গান এবং এসব গানের পেছনে কাজ করা শিল্পীরা যথার্থই সকল প্রশংসার যোগ্য বলে মনে করে কোক স্টুডিও বাংলা সংশ্লিষ্টরা।
আবীর রাজবীন বলেন, “সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ৩ লাখের বেশি কথোপকথন, হাজারো ফ্যান আর্ট, মিউজিক ও ড্যান্স কাভার এবং যন্ত্রসঙ্গীতের মাধ্যমে কোক স্টুডিও বাংলা একটি প্রাণবন্ত ও সংযুক্ত কমিউনিটি তৈরি করেছে। এই কমিউনিটি প্ল্যাটফর্মটির গানগুলোর প্রতি নিজেদের ভালোবাসা সবসময় তুলে ধরছে।
“প্রথম দুই সিজনে আমরা অভূতপূর্ব সমর্থন ও সাড়া পেয়েছি। এতে আমরা সৃজনশীল ক্ষেত্রে নতুন কিছু করার প্রেরণা পাই।”
২০২৪ সালে নতুন সিজন নিয়ে সামনে আসবে প্লাটফর্মটি।
বিগত সিজনের পরিসংখ্যান তুলে ধরে আবীর রাজবীন বলেন, কোক স্টুডিও বাংলার ইউটিউব চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা ২৮.৬ লাখের বেশি। এই অর্জন হয়েছে চ্যানেলটির যাত্রা শুরুর মাত্র ২০ মাসের মাথায়, যা প্ল্যাটফর্মটির তুমুল জনপ্রিয়তারই প্রমাণ।
এছাড়া, একমাত্র বাংলাদেশি এফএমসিজি ব্র্যান্ড হিসেবে কোক স্টুডিও বাংলা পেয়েছে ইউটিউবের সিলভার ও গোল্ড প্লে বাটন, এটি প্ল্যাটফর্মটির তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাবেরই আরও একটি নিদর্শন।
সিএসবির ইউটিউবে সেরা গানের তালিকায় রয়েছে প্রথম সিজনের ‘ভবের পাগল’, ‘বুলবুলি’ ও ‘নাসেক নাসেক’ এবং দ্বিতীয় সিজনের ‘দেওরা’ ও ‘কথা কইয়ো না’।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১৮-৩৪ বছর বয়সের মানুষেরা কোক-স্টুডিও বাংলা’র ভক্তদের মধ্যে প্রধান উল্লেখ করে আবীর বলেন, মোট সাবস্ক্রাইবারদের ৮০ শতাংশের কিছু বেশি বাংলাদেশি। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র আছে সাবস্ক্রাইবার সংখ্যায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে। এরপরেই আছে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের নানা দেশ।
“ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীর মতো বাংলাদেশের বড় শহরগুলোতে কোক স্টুডিও বাংলার ভক্ত স্বাভাবিকভাবেই বেশি। তবে কলকাতাতেও এই প্ল্যাটফর্মের ভালো সংখ্যক ভক্ত আছে, যারা ভালোবেসে একে আপন করে নিয়েছেন।”
স্পটিফাইয়ে এখন পর্যন্ত মোট স্ট্রিমিং ডিউরেশন ১.৩৮ কোটি স্ট্রিম, যা ৭.৫ কোটি মিনিটের সমান।
স্পটিফাইয়ের দেওয়া তথ্য তুলে ধরে কোক স্টুডিও বাংলা জানায়, প্ল্যাটফর্মটি চালু হওয়ার পর থেকে স্পটিফাইয়ে বাংলা গান শোনার পরিমাণ ৪ গুণ বেড়ে গেছে। স্পটিফাইয়ে সবচেয়ে বেশি স্ট্রিম হওয়া গানগুলো হলো প্রথম সিজনের ‘বুলবুলি’, ‘চিলতে রোদ’ ও ‘ভবের পাগল’ এবং দ্বিতীয় সিজনের ‘দেওরা’, ‘কথা কইয়ো না’ ও ‘দাঁড়ালে দুয়ারে’।
কোক স্টুডিও বাংলার গানগুলোর ওপর ভিত্তি করে মোট ১০ লাখের বেশি ইউজার-জেনারেটেড কন্টেন্ট পিস প্রকাশিত হয়েছে, যেসব কন্টেন্টের ভিউ সংখ্যা ৪০ কোটির বেশি। টিকটকে সবচেয়ে বেশি ট্রেন্ডিং কোক স্টুডিও বাংলার গানগুলো হলো ‘দেওরা’, ‘কথা কইয়ো না’ ও ‘দাঁড়ালে দুয়ারে’।
ইনস্টাগ্রামে ১০ লাখেরও বেশি ইউজার-জেনারেটেড রিলস তৈরি হয়েছে। যার মধ্যে ‘কথা কইয়ো না’ হলো ইনস্টাগ্রাম রিলসে সবচেয়ে বেশি ট্রেন্ডিং গান, জানান আবীর রাজবীন।
সঙ্গীত ছাড়াও বাংলাদেশের শিল্প ও সৃজনশীল জগতেও কোক স্টুডিও বাংলা প্রভাব রেখেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্ল্যাটফর্মটি যাত্রা শুরু করার পর থেকে, এই চমৎকার গান ও শিল্পীদের প্রতি সম্মান জানানোর উদ্দেশ্যে হাজারো ভক্ত ও শিল্পীরা তাদের সৃজনশীল চিত্রকর্ম প্রকাশ করেছেন। পেইন্টিং, স্কেচ, ডিজিটাল আর্ট, অ্যানিমেশন, ক্যালিগ্রাফি, এআই-জেনারেটেড ইমেজেস ইত্যাদিসহ হাজারো চিত্রকর্ম ছড়িয়ে পড়েছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম জুড়ে।
এই উৎসাহ ও সৃজনশীলতায় অনুপ্রাণিত হয়ে প্ল্যাটফর্মটি ‘কোক স্টুডিও বাংলা বিলবোর্ড ফ্যান আর্ট কনটেস্ট’ শুরু করে। দুই মাসেরও কম সময়ে তাদের কাছে ৬০টির বেশি শিল্পকর্ম জমা পড়ে, যার মধ্যে নির্বাচিত কিছু শিল্পকর্ম ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরের ১১টি বিলবোর্ডে প্রদর্শিত হয়েছে।