সিনেমার প্রচারে শিল্পীরা নেই, হল কর্তৃপক্ষ ভাবছে নামিয়ে দেওয়ার কথা।
Published : 28 Aug 2022, 10:54 AM
মুক্তির আগে প্রযোজকের সঙ্গে শিল্পী ও পরিচালকের দ্বন্দ্ব ‘আশীর্বাদকে’ এনেছিল সংবাদ শিরোনামে; মুক্তির পর প্রথম দুদিনের আয়ে প্রেক্ষাগৃহ মালিকদের আশা পূরণ করতে পারেনি সরকারি অনুদানের এ সিনেমা।
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক মুস্তাফিজুর রহমান মানিকের এ সিনেমায় অভিনয় করেছেন মাহিয়া মাহি ও জিয়াউল রোশান। তুমুল আলোচনার মধ্যেই শুক্রবার আটটি হলে মুক্তি পায় ‘আশীর্বাদ’ ।
শনিবার বিকালে রাজধানীর সেনানিবাসে সৈনিক ক্লাব সিনেমা হলে গিয়ে দেখা যায়, আট-দশজন দর্শক ‘আশীর্বাদ’ দেখছেন।
টিকেট কাউন্টারে বসা বায়োজিদ আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরকে বললেন, “বিকালের শোতে আট-দশটা টিকেট বিক্রি হয়েছে। শুক্রবারেও সেল ভালো ছিল না। পুরো সপ্তাহ এই সিনেমা চালানো যাবে না।”
সৈনিক ক্লাবের তত্ত্বাবধায়ক আনন্দ কুমার জানালেন, শুক্রবার ‘টেনে টুনে’ বিশ হাজার টাকার মত টিকেট বিক্রি হয়েছে আশীর্বাদের। অথচ অন্য সিনেমায় বিক্রি থাকে ৫০ হাজারের উপরে।
“এমনিতে শনিবারে সেল হয় বিশ হাজার টাকার উপরে। অথচ এই সিনেমায় দশ হাজারও হয়নি।”
আনন্দ কুমার বললেন, “আমরা সিনেমাটা নামিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বুকিং এজেন্টদের সাথে কথা বলছি। হাওয়া, পরাণ কিংবা মোটামুটি চলবে এমন একটা সিনেমা পেলে আশীর্বাদ নামিয়ে দেওয়া হবে।”
তবে সেটা না করতে বুকিং এজেন্টদের চাপ আসছে জানিয়ে হল তত্ত্বাবধায়ক বলেন, “বুকিং এজেন্ট সিনেমাটা নামাতে চাচ্ছে না। তারা একটা সপ্তাহ চালাতে বলছেন। এক সপ্তাহ চালালে খরচই তো উঠবে না। কেউ কি পকেটের টাকা খরচ করে সিনেমা চালাবে?”
অন্য সিনেমার তুলনায় আশীর্বাদ কম চলার কারণ কী? আনন্দ কুমার বললেন, “পরাণ আর হাওয়া যে জোয়ার তুলেছিল, আশীর্বাদ তেমন জোয়ার তোলার মত সিনেমা না। প্রধান দুই শিল্পী আর পরিচালকের নাম দেখে সিনেমাটা চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের ছবি যেমন জমজমাট হওয়ার কথা, আশীর্বাদ ততটা হয়নি।”
অবশ্য ডিসেম্বরে মুক্তি দিলে কিছু দর্শক মুক্তিযুদ্ধের ছবি দেখতে আসত বলে মনে করেন তিনি।
‘আশীর্বাদ’ দেখার অভিজ্ঞতা জানালেন মতিন নামের এক তরুণ। তার ভাষায়, “নায়ক-নায়িকা ভালো আছে, এই জন্য দুই-চারজন দেখতে আসছে। মুক্তিযুদ্ধের ছবি, কিন্তু ওইরকম জমে নাই।“
সিনেমার প্রযোজক তাহেরা ফেরদৌস জেনিফার বিকালের শোয়ের হালচাল দেখতে এসেছিলেন সৈনিক ক্লাবে। জানতে চাইলে বললেন, “ভালোই তো চলছে।” তবে তাকে দেখে খুশি বলে মনে হচ্ছিল না।
পরের সপ্তাহে দর্শক বাড়বে বলে মনে করেন কি না, এমন প্রশ্নে বললেন, “সেটা আগামী সপ্তাহেই দেখা যাবে।”
মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গল্পের এ সিনেমায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও মুক্তিযোদ্ধার চরিত্রে অভিনয় করেছেন রোশান। তার বিপরীতে আছেন মাহি।
২০১৯-২০ অর্থ বছরের সরকারি অনুদান পায় আশীর্বাদ। রোশান-মাহি ছাড়াও বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন শাহনূর, অরণ্য বিজয়, কাজী হায়াত, রেহানা জলি।
‘আশীর্বাদ’ মুক্তির আগেই আলোচনায় এসেছিল প্রযোজকের সঙ্গে পরিচালক ও নায়ক-নায়িকার দ্বন্দ্বের কারণে। মুক্তির তারিখ ঘোষণা নিয়ে শুরু হওয়া বাদানুবাদ গড়ায় ব্যক্তিগত আক্রমণে।
নায়ক-নায়িকাকে ছাড়া সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন প্রযোজক। পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে প্রযোজককে ডাকেননি নায়ক-নায়িকা। দুই পক্ষই পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তুলে ধরেছেন সাংবাদিকদের সামনে। তাতে সিনেমার মুক্তি নিয়েই সংশয় দেখা দিয়েছিল এক সময়।
বহুমুখী দ্বন্দ্বের মধ্যে নায়িকা মাহিয়া মাহি শিল্পী সমিতিতে লিখিত অভিযোগ করেন। সে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সমিতির নেতারা মাহি, রোশান, পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান মানিক ও প্রযোজক জেনিফার ফেরদৌসকে ডেকে বৈঠক করেন।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ওই বৈঠক শেষে মাহি ও জেনিফার সাংবাদিকদের সামনে এসে বলেন, তাদের সব দ্বন্দ্বের ‘অবসান হয়েছে’। এরপর শুক্রবারই মুক্তি পায় ‘আশীর্বাদ’।
সিনেমার প্রচারে আর কোনো শিল্পী অংশ নিচ্ছেন কি না জানতে চাইলে প্রযোজক জেনিফার ফেরদৌস বলেন, “মাহি অসুস্থ, এজন্য আসেনি। সোমবার শিল্পীরা প্রচারে অংশ নেবেন।”