লন্ডনে ২৪তম রেইনবো চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা সিনেমা নির্বাচিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে নির্মিত ‘জেকে ১৯৭১’।
ইলফোর্ডের কেনেথ মোর থিয়েটারে বিপুল দর্শকের উপস্থিতিতে এ চলচ্চিত্র উৎসবের পর্দা নামে রোববার।
এবারের আসরে ‘জেকে ১৯৭১’ সেরার পুরস্কার পেয়েছে ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র’ ক্যাটাগরিতে। এছাড়া গণঅর্থায়নে নির্মিত বাংলাদেশের প্রান্তিক মানুষের জীবন কাহিনী নিয়ে ‘সাঁতাও’ সিনেমাটিকে রেইনবো ফিল্ম সোসাইটি ‘স্পেশাল মেনশন’ তালিকায় রেখেছে। ‘শর্ট ফিল্ম ও ডকুমেন্টারি’ ক্যাটাগরিতে সেরা সিনেমার পুরস্কার পেয়েছে বাংলাদেশের ‘তুলিকা’।
রেইনবো ফিল্ম সোসাইটি আয়োজিত এ উৎসবে এবার বাংলাদেশের পাঁচটি সিনেমা প্রদর্শিত হয়। এগুলো হল- বিউটি সার্কাস, সাঁতাও, দামাল, পাপপূণ্য ও জেকে-১৯৭১।
গত ২৮ মে শুরু হওয়া এ উৎসবে বাংলাদেশ, ভারত, ইরান, পাকিস্তান, কাজাখস্তান, চীনসহ বিভিন্ন দেশের মোট ৪৫টি সিনেমা প্রদর্শিত হয়েছে। কলকাতার বাংলা সিনেমা ‘বেঁচে থাকার গান’ ছিল উদ্বোধনী সিনেমা। আর ‘জেকে ১৯৭১’ দেখানো হয় ৪ জুন সমাপনী দিনে।
‘রেইনবো সোসাইটির’ কর্ণধার মোস্তফা কামাল জানান, বরাবরের মত এবারেও উৎসবে দর্শক সাড়া মিলেছে।
আগামী বছর ‘রেইনবো ফিল্ম ফেস্টিভাল’ এর ২৫তম আসর আরও ‘জাঁকজমকপূর্ণ’ হবে বলে আশা করছেন তিনি।
এবারের উৎসবে জুরি বোর্ডে ছিলেন রবার্ট ফিলিপস, জয়শ্রী কবীর, পুলক গুপ্ত, সৈয়দ আনাস পাশা, ড. জাকি রেজোয়ানা, সাদেক আহমেদ চৌধুরী, সৈয়দ মুকিব আহমেদ ও নাদিয়া আলী।
পুরস্কার দেওয়ার জন্য বেস্ট ফিল্ম ফিচার, বেস্ট ফিল্ম ডকুমেন্টারি, বেস্ট ডিরেক্টর, বেস্ট ফিল্ম ফর হিউম্যানিটি, স্পেশাল জুরি মেনশন, বেস্ট ডিরেক্টর (স্বল্প দৈর্ঘ্য), বেস্ট স্টোরি (স্বল্প দৈর্ঘ্য) ক্যাটাগরি নির্ধারণ করা হয়েছিল।
পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ক্যাটাগরি
শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র: জেকে ১৯৭১ (বাংলাদেশ)
শ্রেষ্ঠ পরিচালক: সাঈদ মর্তুজা ফাতেমি (বাই মাদার) (ইরান)
শ্রেষ্ঠ গল্প: গার্গি (ভারত)
শ্রেষ্ঠ মানবতার চলচ্চিত্র: মম, আই অ্যাম অ্যালাইভ (কাজাখস্তান)
স্পেশাল জুরি মেনশন: দ্য কফিন পেইন্টার (চীন)
রেইনবো ফিল্ম সোসাইটি স্পেশাল মেনশন: সাঁতাও (বাংলাদেশ)
শর্টফিল্ম ও ডকুমেন্টারি
শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র: তুলিকা (বাংলাদেশ)
শ্রেষ্ঠ পরিচালক: কাটি কালিও (ওয়াক উইথ মি) (ফিনল্যান্ড)
শ্রেষ্ঠ গল্প: এবং চাঁদ (ভারত)
স্পেশাল জুরি মেনশন: আরসু আবদ (ইরান)
সমাপনী দিনের অনুষ্ঠানে যুগল সঞ্চালনায় ছিলেন রেডব্রিজ বারার কাউন্সিলর সায়মা আহমেদ এবং নাদিয়া লোদী। এছাড়া বক্তব্য রাখেন রেডব্রিজ কাউন্সিলের লেজার অ্যান্ড কালচার লিড মেম্বার কাউন্সিলর নামরিন চৌধুরী, ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা দেবানিক কুণ্ড, রেইনবো সোসাইটির কর্ণধার মোস্তফা কামাল ও সামির কামাল।
কবে কোন সিনেমা
উদ্বোধনী দিন ২৮ মে লন্ডনের ‘জেনেসিসি’ সিনেমা হলে দেখানো হয় কলকাতার ‘বেঁচে থাকার গান‘। ওই সিনেমার মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অভিনেতা টোটা রায় চৌধুরী, গার্গী রায় চৌধুরী, ইন্দ্রাণী ভট্টাচার্য, পরাণ বন্দোপাধ্যায়সহ আরও অনেকে।
এররপর ২৯ মে থেকে ৩ জুন পর্যন্ত পূর্ব লন্ডনের হ্যানবারি স্ট্রিটের ব্রাডি আর্ট সেন্টারে প্রতিদিন দুটি করে সিনেমা দেখানো হয় উৎসবে।
২৯ মে বাংলাদেশের ‘বিউটি সার্কাস’, ৩০ মে ‘সাঁতাও’, ৩১ মে ‘দামাল’, ৩ জুন ‘পাপপূণ্য এবং ৪ জুন ‘জেকে ১৯৭১’ প্রদর্শিত হয়।
এই ৫টির মধ্যে ‘সেরা’র পুরস্কার পাওয়া ফখরুল আরেফিন খানের ‘জেকে ১৯৭১‘ এর আগে মুম্বাই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে জিতে নেয় সেরা ‘ঐতিহাসিক সিনেমার’ পুরস্কার। ‘জেকে ১৯৭১‘ প্রদর্শিত হয়েছে ইস্তাম্বুলসহ বেশ কিছু উৎসবে। ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবেও সিনেমাটি দেখানো হয়।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহায়তার জন্য ফ্রান্সের অর্লি বিমানবন্দরে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসের (পিআইএ) একটি বিমান ছিনতাই করেছিলেন ফরাসি যুবক জ্যঁ কুয়ে। ঐতিহাসিক সেই ঘটনা চলচ্চিত্রে তুলে এনেছেন নির্মাতা।
সিনেমায় কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন পশ্চিমবঙ্গের সৌরভ শুভ্র দাশ। এছাড়া রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের অভিনেতা ফ্রান্সিসকো রেমন্ড, রুশ অভিনেত্রী ডেরিয়া গভ্রুসেনকো, অভিনেতা নিকোলাই নভোমিনাস্কি, পশ্চিমবঙ্গের সব্যসাচী চক্রবর্তী, ইন্দ্রনীল প্রমুখ।
এছাড়া ৩ জুন শনিবার পূর্ব লন্ডনের ব্রাডি আর্টস সেন্টারে কবি জীবনানন্দ দাশের জীবনের গল্প নিয়ে নির্মিত সিনেমা ‘ঝরা পালক’ দেখানো হয়। কলকাতার নির্মাতা সায়ন্তন মুখোপাধ্যায় বানিয়েছেন সিনেমাটি। কবির স্ত্রী লাবণ্য দাশের চরিত্রে অভিনয় করেছেন বাংলাদেশের জয়া আহসান। কবির পরিণত বয়সের ভূমিকা পর্দায় রূপায়ন ঘটিয়েছেন ব্রাত্য বসু, আর যুবক বয়সের চরিত্র করেছেন রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায়।
চীনের ‘দ্যা কফিন পেইন্টার’, ইরানের ‘মাদার ল্যাস’ও ‘এ্যাপল ডে’, কাজাখস্তানের ‘মম, আই অ্যাম অ্যালাইভ’, ভারতের ‘লোটাস ব্লুম’ ও ‘ইলহাম’, পাকিস্তানের ‘আই উইল মিট ইউ দেয়ার’দেখানো হয় উৎসবে।