“ভয়ঙ্কর ভিলেন থেকে নায়ক হয়ে আপনি যে দুঃসাহসের পরিচয় দিয়েছেন, সেটা বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এক অনন্য দৃষ্টান্ত।”
Published : 08 Oct 2022, 06:44 PM
খলনায়ক থেকে নায়ক হয়ে ওঠা জসিমকে স্মরণ করলেন চিত্রনায়িকা অঞ্জনা রহমান।
প্রয়াত চিত্রনায়কের মৃত্যুবার্ষিকীতে এক ফেইসবুকে পোস্টে এই চিত্রনায়িকা লিখেছেন, “আপনার সম্পর্কে কোথা থেকে শুরু করব, জানি না। চলচ্চিত্রের ভয়ঙ্কর ভিলেন থেকে নায়ক হয়ে আপনি যে দুঃসাহসী পরিচয় দিয়েছেন সেটা বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
“এই সাহসী কাজে আপনি ১০০% সফলও হয়েছেন। বাংলা সিনেমাপ্রেমী দর্শকের হৃদয়ে শক্ত একটি আসন তৈরি করে নিয়েছেন নিজের যোগ্যতা বলে। নিজেকে নিয়ে গিয়েছেন এক অনন্য উচ্চতায়। দর্শকপ্রিয়তা ও খ্যাতির শীর্ষে। বাংলা চলচ্চিত্র জগত আপনার কাছে চিরঋনী ও চিরকৃতজ্ঞ।”
বাংলা সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা জসিমের ২৪তম মৃত্যুবার্ষিকী শনিবার। ১৯৯৮ সালের ৮ অক্টোবর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে মারা যান তিনি।
১৯৫০ সালের ১৪ অগাস্ট ঢাকার নবাবগঞ্জের বক্সনগর গ্রামে জন্ম জসিমের। তার পুরো নাম আবুল খায়ের জসিম উদ্দিন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের ২ নম্বর সেক্টরে মেজর হায়দারের নেতৃত্বে যুদ্ধ করেছিলেন তিনি।
‘দেবর’ সিনেমা দিয়ে ঢাকার চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে জসিমের। শুরুতে ছিলেন খলনায়ক, প্রায় ৭০টি সিনেমায় এই ভূমিকায় ছিলেন তিনি। পরে নায়ক হয়ে করেন আরও শতাধিক সিনেমা।
১৯৭৩ সালে জহিরুল হকের (প্রয়াত) ‘রংবাজ’ সিনেমায় সবার নজরে আসেন খলনায়ক জসিম। এ সিনেমার অ্যাকশন দৃশ্যগুলো ছিল তার নিজের সাজানো। নিজস্ব প্রযোজনা সংস্থা ‘জ্যাম্বস ফাইটিং গ্রুপ’র সদস্যদের নিয়ে মন ভরানো সব অ্যাকশন দৃশ্য উপহার দেন তিনি।
জসিমের জনপ্রিয়তার শুরু দেওয়ান নজরুল পরিচালিত ‘দোস্ত দুশমন’ চলচ্চিত্রে। ভারতের শোলের বাংলাদেশ সংস্করণে খলনায়ক হিসেবে তার অভিনয় সবার প্রশংসা কুড়ায়। নায়ক হিসেবে জসিম প্রথম হাজির হন সুভাষ দত্তের ‘সবুজ সাথী’ সিনেমায়।
জসিম প্রথম বিয়ে করেন চিত্রনায়িকা সুচরিতাকে; তবে তাদের বিয়ে টেকেনি। নানা অভিযোগও তখন এসেছিল জসিমের বিরুদ্ধে। এরপর তিনি বিয়ে করেন আরেক নায়িকা নাসরিনকে। নাসরিন বাংলাদেশের প্রথম সিনেমা ‘মুখ ও মুখোশ’র নায়িকা পূর্ণিমা সেন গুপ্তের মেয়ে। তাদের তিন ছেলে সামি, রাতুল ও রাহুল।
জসিমের উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে রয়েছে ‘তুফান’, ‘জবাব’, ‘নাগ নাগিনী’, ‘বদলা’, ‘বারুদ’, ‘সুন্দরী’, ‘কসাই’, ‘লালু মাস্তান’, ‘নবাবজাদা’, ‘অভিযান’, ‘কালিয়া’, ‘বাংলার নায়ক’, ‘গরিবের ওস্তাদ’, ‘ভাইবোন’, ‘মেয়েরাও মানুষ’, ‘পরিবার’, ‘রাজা বাবু’, ‘বুকের ধন’, ‘স্বামী কেন আসামী’, ‘লাল গোলাপ’, ‘দাগী’, ‘টাইগার’, ‘হাবিলদার’, ‘ভালোবাসার ঘর’ প্রভৃতি।
জসিমের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে অঞ্জনা লিখেছেন, “আপনার সাথে অসংখ্য চলচ্চিত্রে অভিনয়ের স্মৃতিময় এত অভিজ্ঞতা, যা বলে কিংবা লিখে শেষ করবার মতো নয়। অসংখ্য চলচ্চিত্রে আমরা জুটি হিসেবে অভিনয় করেছি বিশেষ করে দেশের বাইরে আমেরিকা ,লন্ডন,ও নেপালে শুটিংয়ের চমৎকার অভিজ্ঞতার মধুময় স্মৃতি আজো অকপটে মনে পড়ে। আমি এবং জসিম ভাই অভিনীত অসংখ্য চলচ্চিত্র দর্শকনন্দিত হয়েছে, সুপার বাম্পারহিট হয়ে আজও বাংলা সিনেমা প্রেমী দর্শকের হৃদয়ে গেঁথে আছে।”
তিনি লেখেন, “জসিম ভাই জীবদ্দশায় সব সময় একটি ব্যাপারে খুব আফসোস করতেন এবং তার ভেতরে দুঃখ, ক্ষোভ ছিল অনেক। দেখা হলেই শুধু বলতেন, ম্যাডাম আমি কি ভালো অভিনয় করি না? বলেন তো এত চলচ্চিত্রে অভিনয় করলাম একটা জাতীয় পুরস্কার ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ভাগ্য জুটল না!”
একদিন এ নিয়ে জসিম কেঁদেই দিয়েছিলেন জানিয়ে অঞ্জনা লিখেছেন, “আমি বুঝিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করেছিলাম। বলেছিলাম, আপনি যে দর্শকের ভালোবাসা পেয়েছেন, এটাই একটা শিল্পী জীবনের সবচাইতে বড় প্রাপ্তি, সবচাইতে বড় পুরস্কার।”
চিত্রনায়ক জসিমের সঙ্গে অভিনয় করা ২৭টি ছবির তালিকা দিয়ে অঞ্জনা লিখেছেন, “আপনার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি, আপনি বেঁচে থাকবেন আপনার অমর কাজের মাধ্যমে। বাংলা চলচ্চিত্রের আকাশে উজ্জ্বলিত সূর্যের ন্যায়।”
জসিমই একমাত্র নায়ক, যার নামে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থার (বিএফডিসি)তে একটি ফ্লোরের নামকরণ করা হয়েছে। জনপ্রিয় এ নায়কের জন্মদিন উপলক্ষে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি বাদ আসর এফডিসি মসজিদে এক দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরকে জানান সংগঠনটির সহসাধারণ সম্পাদক সায়মন সাদিক।