সুন্দরী প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শুরু তার পথচলা। আর ক্যারিয়ারের শুরুও ২০১০ সালে। মেঘে মেঘে বেলা গড়িয়ে মৌসুমী আর অনেক পরিণত। অভিজ্ঞতার ঝুলিতে জমা হয়েছে একাধিক চলচ্চিত্র।
মুক্তি না পাওয়া প্রথম ছবি ‘নামানুষ’ থেকে এবছর মুক্তি পাওয়া ‘ভালোবাসার রাজকন্যা’। প্রতিটা সিনেমা, প্রতিটা কাজই তার জীবনের নতুন নতুন অভিজ্ঞতার পালক। কখনও সে পালক সাফল্যের সাদা। কখনও সে পালক ব্যার্থতার কালো। আবার কখনও সে পালক অভিমানের নীল।
তবুও পালক জমানোর শেষ নেই। মৌসুমী তার অভিজ্ঞতার ঝুলি আর পালক জমানো ভালোবাসা নিয়ে কথা বলতে এলেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম’য়ের অফিসে। বসলেন গ্লিটজের সঙ্গে।
পাঁচ ফুট দশ ইঞ্চি দৈর্ঘের মৌসুমী যখন আলাপে বসবেন স্বাভাবিকভাবেই প্রথমে আসবে তার সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্রের প্রসঙ্গ। ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ‘ভালোবাসার রাজকন্যা’ নিয়ে জানালেন অভিজ্ঞতা।
মাত্র পাঁচদিনে নেপালে একটি সিনেমার শুটিং করা চাট্টিখানি কথা নয়। তাও সম্ভব করেছে পুরো দল মিলে।
আরেকটি কাজের সময় মৌসুমী নিজে ব্যস্ত থাকায় অরুণ চৌধুরীকে না বলায় এবার ‘হা’ বলেন একবারেই। তবে কম সময়ে কাজ নিয়ে আক্ষেপ ভুলতে পারছেন না সহজেই।
বললেন, “বড় পর্দার আয়োজন হবে বড়। আমরা কোনো কোনো সিনেমার শুটিং করেছি টানা পঞ্চান্ন দিন, কখনও এক মাস। সেখানে পাঁচ দিন তো চোখের নিমিষে পার হয়ে যায়। হ্যাঁ, বাজেট একটা ব্যাপার বটে। সেটাও মাথায় রাখতে হয় মাঝে মাঝে।”
প্রতিটা সিনেমাই নিজের সন্তানের মতো মনে করেন এই অভিনেত্রী। তাই প্রথম সিনেমা অর্থ্যাৎ তার ভাষায় ‘প্রথম সন্তান’ নিয়ে কথা বললেন আবেগ নিয়ে।
মৌসুমী হামিদের প্রথম সিনেমা ‘নামানুষ’, অনিমেষ আইচের চিত্রনাট্যে অসমাপ্ত একটি ছবি। সেখানে রীতিমত অডিশন দিয়ে অভিনয় শুরু করেন। তারপর থেকে রোজ, টানা ছয়মাস, অনিমেষ আইচের প্রতিষ্ঠান ‘গাধার পাল’য়ে গিয়ে বসে থাকতেন।
চরিত্রটিকে ধারণ করেছেন। এজন্য তিনি বারবার বলেন, “তাড়াহুড়ো করলে দর্শক অবশ্যই আশাহত হয়। কারণ তারা বড় পর্দায় বড় কিছুই আশা করেন।”
‘নামানুষ’ মুক্তি না পেলেও মৌসুমী থেমে থাকেননি। নাটকে, সিনেমায় কাজ করছেন নিয়মিত। ঈদের সময় ব্যস্ত ছিলেন। আবার হুট করে অবসরও পেয়েছেন শুটিংয়ের মাঝে। যেটা ঈদের আগে প্রায় অসম্ভব।
ঘটনাটি নিয়ে মৌসুমী বলেন, “আমাকে শুটিংয়ের আগে জানানো হয়, ক্লায়েন্ট অন্য শিল্পী চায়। সেটা চাইতেই পারে। কিন্তু সেটা আগের দিন মনে হবে কেনো? কারণ আমরা সব ডেট ভালো কাজের জন্যই রাখি। হয়তো ওই কাজটার জন্য অন্য কোনো কাজ ছেড়েছি। তারমানে একটা ডেট নষ্ট করা – মানে আমার রিজিক নষ্ট করা।”
এক্ষেত্রে পরিচালকদের দায়ও মানতে হবে বলে জানান তিনি। পরিচালকরা চরিত্র অনুযায়ী শিল্পী নির্বাচনে ক্লায়েন্টদের সঙ্গে যুক্তি দিয়ে কথা বলতে পারলে হয়ত ক্লায়েন্টের অযৌক্তিক চাহিদা বাড়তো না– বলে মনে করেন মৌসুমী।
তিনি মনে করেন, "ক্লায়েন্ট'য়ের সঙ্গে হ্যাঁ'তে , না'তে না বলা শুরু হওয়ার কারণেই শিল্পীরা অন্যায়ের শিকার হচ্ছেন।"
হঠাৎ শিডিউল বাতিল করলে সম্মানি নেওয়ার ব্যাপারেও ভাবছেন এখন ‘জালালের গল্প’য়ের এই অভিনয় শিল্পী। কারণ হিসেবে– নিজেদের ক্ষতির কথাও উল্লেখ করেন এবং তা শিল্পীদের স্বার্থেই।
ক্রমশই গল্প বা চরিত্র পাশে রেখে ক্লায়েন্টদের চাহিদার আগ্রাসন নিয়ে শঙ্কিত এই শিল্পী।
চায়ের কাপে চুমুকে রোদ যখন পড়ন্ত, তখন মৌসুমী বলে যাচ্ছেন নিজের জীবনের চড়াই-উৎড়াই।
সুন্দরী প্রতিযোগিতা শক্ত প্লাটফর্ম দিলেও একটি বাসা ভাড়া নিতেও একটা সময় মৌসুমীকে রাস্তায় রাস্তায় হাঁটতে হয়েছে। অভিনয়ই একমাত্র পেশা বলে হয়ত এমন নাটক বা কাজ করতে হয়েছে যা হয়তো মনঃপুত হয়নি। কিন্তু বেলাশেষে সুমন আনোয়ারের ‘বাদাবন’য়ে দস্যুরানী হয়ে অভিনয়ের তৃষ্ণা মেটাতে পেরে মৌসুমী শান্তিতে ঘুমাতে পারেন।
মৌসুমী হামিদ বারবার বলেন, “এখন এত কন্টেন্ট। এত এত কন্টেন্টের ভীড়ে কোনটা যে দর্শক দেখবে তা কিন্তু বোঝা দায়। তাই কাজটা করতে চাই বুঝে শুনে।”
তাই চলমান একক নাটক, সিরিয়ালের পাশাপাশি করে ফেলেছেন আরেকটি উল্লেখযোগ্য কাজ। সম্প্রতি শেষ করলেন গাজী রাকায়াতের একটি সিনেমা। এটি বেশ অন্য রকমের অভিজ্ঞতা। কারণ মোটামুটি এটি একই সঙ্গে দুইটি সিনেমা করার মতো।
একই দৃশ্য তারা দুবার ধারণ করেছেন। এরই মধ্যে ইমপ্রেস টেলিফিল্মসের এই চলচ্চিত্রটির শুটিং শেষ হয়েছে। সরকারি অনুদানে নির্মিত এই চলচ্চিত্রের প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন গাজী রাকায়েত।
আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন উৎসবে মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। তাই সাবটাইটেল বা ডাবিং নয়- সরাসরি ইংরেজি ও বাংলা- একই সঙ্গে দুই ভাষায় অভিনয় করেছেন কলাকুশলীরা।
সিনেমাটি নিয়ে ভীষণ আশাবাদী মৌসুমী। নয় বছরের ক্যারিয়ারে আন্তর্জাতিকমানের ছবিতে একাধিকবার উপস্থিত হওয়াতে নিজের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে অনেকখানি বলে মনে করেন এই অভিনেত্রী।
তাই আজ তিনি বলতেই পারেন- “আমি মৌসুমী হামিদ, এটাই আমার পরিচয়।"