এবার শাকিব খানের বিরুদ্ধে রহমত উল্লাহর মামলা

আদালত মামলাটি গ্রহণ করে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।

গ্লিটজ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 April 2023, 12:09 PM
Updated : 18 April 2023, 12:09 PM

মানহানির অভিযোগে চিত্রনায়ক শাকিব খানের বিরুদ্ধে এবার পাল্টা মামলা করেছেন অপারেশন অগ্নিপথ সিনেমার সহপ্রযোজক রহমত উল্লাহ।

গত বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে দণ্ডবিধি ৪৯৯, ৫০০ ও ৫০১ ধারায় মামলাটি করা হয় বলে গ্লিটজকে জানিয়েছেন রহমত উল্লাহর আইনজীবী মো. তবারক হোসেন ভুঁইয়া।

তিনি বলেন, “শাকিব খান বিভিন্ন সময় আমার মক্কেলের নামে মানহানিকর বক্তব্য দিয়েছেন। আমরা তাকে উকিল নোটিস দিয়েছি। তিনি কোনো জবাব দেননি। যার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৩ এপ্রিল মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলার আবেদন করি। আদালাত মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাকিব খানের আইনজীবী খাইরুল হাসান বলেন, “রহমত উল্লাহর আইনজীবী আদালতে মামলা করেছেন। এখন পিবিআই তদন্ত করবে। তদন্তে দোষী হলে বিজ্ঞ আদালত সমন জারি করবেন। তখন আমরা জামিনের জন্য আবেদন করে মামলার মোকাবেলা করব।”

মামলার আর্জিতে বলা হয়, বিভিন্ন সময় শাকিব খান অপারেশন অগ্নিপথ সিনেমার সহপ্রযোজক রহমত উল্লাহকে “ভুয়া প্রযোজক নামধারী, প্রতারক রহমতুল্লা, এই যে বাটপার রহমতুল্লা, একজন বাটপার, একজন প্রতারক রহমতুল্লা” ইত্যাদি আখ্যা দিয়েছেন; তিনি “গোটা চলচ্চিত্রের মানুষের বিরুদ্ধে প্রতারণা করেছে, প্রযোজক না হয়েও আজেবাজে মিথ্যা বলেছেন এবং প্রোপাগান্ড ছড়িয়েছেন“ ইত্যাদি ‘মানহানিকর’ বক্তব্য দিয়েছেন।

একই অভিযোগে ২১ মার্চ শাকিব খানের বিরুদ্ধে উকিল নোটিস পাঠান রহমত উল্লাহর আইনজীবী। সে সময় শাকিব খান উকিল নোটিস পাননি বলে গ্লিটজকে জানিয়েছিলেন। 

ওই নোটিস পাঠানোর দুদিন পর ২৩ মার্চ ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে গিয়ে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী রহমত উল্লাহর বিরুদ্ধে ‘চাঁদা দাবি ও হত্যার হুমকি’ দেওয়ার অভিযোগে মামলা করেন শাকিব খান।

মহানগর হাকিম আরাফাতুল রাকিব সেদিন মামলা গ্রহণ করে বিবাদী রহমত উল্লাহকে ২৬ এপ্রিল আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে সমন জারি করেন।

চার দিন পর ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে গিয়ে রহমত উল্লাহর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আরেকটি মামলা করেন শাকিব খান। 

বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াত বাদীর জবানবন্দি শুনে বিষয়টি তদন্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে আগামী ৬ জুন প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

জবানবন্দিতে শাকিব খান সেদিন বলেন, “রহমত উল্লাহ টেলিভিশনে আমার নামে মিথ্যা বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি হঠাৎ আসেন, হঠাৎ বক্তব্য দিয়ে পালিয়ে যান। তিনি বলেছেন, অস্ট্রেলিয়া থেকে আমি দুবার পালিয়ে এসেছি। অথচ অস্ট্রেলিয়ায় আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। আমার নামে কোনো মামলাও হয়নি।”

বিরোধের আদ্যোপান্ত

‘অপারেশন অগ্নিপথ’ সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন আশিকুর রহমান। এতে শাকিবের নায়িকা সিবা আলী খান। পাঁচ বছর আগে কাজ শুরু হলেও সিনেমাটি এখনও মুক্তি পায়নি।

গত ১৫ মার্চ দেশে এসে ঢাকাই চলচ্চিত্রের শীর্ষ নায়ক শাকিব খানের বিরুদ্ধে পরিচালক সমিতি, প্রযোজক সমিতি ও চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিতে লিখিত অভিযোগ করেন রহমত উল্লাহ।

তাতে শাকিব খানের বিরুদ্ধে প্রযোজকের আর্থিক ক্ষতি সাধনের অভিযোগ করার পাশাপাশি বলা হয়, ২০১৭ সালে সিনেমার শুটিংয়ে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে এক নারী সহপ্রযোজককে ‘ধর্ষণ’ও করেন শাকিব খান, যা নিয়ে মামলাও হয়।

রহমত উল্লাহর অভিযোগের পর গুলশান থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা করতে যান শাকিব খান। থানা থেকে তাকে আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। পরদিন ডিবি কার্যালয়ে গিয়ে নালিশ করেন শাকিব।

পরে শাকিব খান সাংবাদিকদের বলেন, তাকে হেয় করার উদ্দেশে রহমত উল্লাহ এসব অভিযোগ তুলেছেন।

অপারেশন অগ্নিপথ সিনেমাটির প্রযোজক জানে আলম নামে একজন জানিয়ে শাকিব খান বলেন, রহমত উল্লাহর সঙ্গে তার কোনো লেনদেনই হয়নি। শুধু প্রবাসী বাংলাদেশি হিসেবে দেখা হয়েছিল।

রহমত উল্লাহকে ‘প্রতারক-বাটপার’ আখ্যায়িত করে এই চিত্রনায়ক বলেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন।

এরপর শাকিব খানের ওই বক্তব্য ‘মানহানিকর’ দাবি করে সেজন্য ক্ষমা চাইতে এ চিত্রনায়ককে উকিল পাঠান রহমত উল্লাহ।

ফেইসবুকে নোটিসের ছবি প্রকাশ করে তিনি লেখেন, “যেহেতু বিষয়টি আইনি পদেক্ষেপ পর্যন্ত গড়িয়েছে, তাই এই ব্যাপারে আপাতত আর কোনো বক্তব্য আমি দেব না। এখন থেকে এই বিষয়ে যে কোনো ধরনের বার্তা দেওয়ার প্রয়োজন হলে সেটা আমার বিজ্ঞ আইনজীবী দেবেন।”

নোটিসে রহমত উল্লাহর আইনজীবী বলেছেন, তার মক্কেল অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের দ্বৈত নাগরিক। তিনি প্রতিষ্ঠিত চলচ্চিত্র প্রযোজক। তার বাবা প্রয়াত ওয়ালী আহমেদ ছিলেন কুমিল্লা-৩ আসনের সংসদ সদস্য।

শাকিব খানের উদ্দেশে বলা হয়, “দেশের বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে আপনি (শাকিব খান) আমাদের মক্কেলের বিরুদ্ধে একাধিক মিথ্যাচার, মানহানিকর এবং আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিয়েছেন। তাছাড়া সামাজিকভাবে হেয় করতে আমাদের মক্কেল বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে গেছেন মর্মেও মিথ্যাচার করেছেন।”

এই সব বক্তব্য সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ায় শাকিব খানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার হুমকি দেন রহমত উল্লাহ।

নোটিসে বলা হয়, “এই নোটিস প্রাপ্তির তিন দিনের মধ্যে সমস্ত ডিজিটাল মিডিয়া থেকে আপনার বলা মিথ্যা, বানোয়াট, মানহানিকর কথাবার্তা অনুতাপের সাথে প্রত্যাহার করে নিতে হবে। অন্যথায় আমাদের মক্কেল আপনার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।”

উকিল নোটিসের বিষয়টি সামনে আসার পর রহমত উল্লাহর বিরুদ্ধে ‘চাঁদা দাবি ও হত্যার হুমকি’ দেওয়ার মামলা করেন শাকিব খান।

সেখানে বলা হয়, শুটিংয়ের জন্য শাকিব অস্ট্রেলিয়ায় গেলেও তখন নায়িকা শিবার ভিসা না হওয়ায় তিনি যেতে পারেননি। তখন সেই সহপ্রযোজককে (যাকে ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়েছে শাকিবের বিরুদ্ধে) নায়িকা করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন রহমত উল্লাহ, কিন্তু শাকিব তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।

তাই শাকিবকে ‘ফাঁসাতে’ রহমত উল্লাহ ভিন্ন পথ নিয়েছিলেন বলে মামলায় দাবি করেন এ চিত্রনায়ক।

তিনি বলেন, তখন রহমত উল্লাহ একদিন শুটিং শেষে তাকে ‘রিফ্রেশমেন্টের জন্য’ একটি ক্লাবে নিয়ে যান। সেখানে ওই নারীসহ (সহ প্রযোজক) আরও দু-তিনজন অপরিচিত ব্যক্তিকে দেখেন শাকিব। সেখানে খাওয়ার পর একটি পানীয় দেওয়া হয়, যা পান করে অসুস্থবোধ করেন শাকিব। তাই নিজ হোটেলে ফিরে যেতে চান। বিদায় নেওয়ার সময় তিনি রহমত উল্লাহ ও অন্যদের খুঁজে পাননি। তাই গভীর রাতে অসুস্থ শাকিবকে ওই নারী হোটেলে তুলে দিয়ে আসেন।

তখন ‘অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন’ দাবি করে শাকিব বলেন, ওই অবস্থায় হোটেলে হয়ত রহমত উল্লাহরা ‘কোনো আপত্তিকর কিছু করে’ ভিডিও করে রাখতে পারে বলে আশঙ্কা ছিল তার। পরে রহমত উল্লাহ এবং ওই নারী ভিডিও প্রকাশের ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে এক লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলার চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দিলে তার বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ায় মামলার হুমকি ও দেশে ফেরা বন্ধ করে দেওয়ার ভয় দেখান।

মানসম্মানের ভয়ে তখন বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪০ লাখ টাকা রহমত উল্লাহকে দিয়েছিলেন বলে ওই মামলায় জানান শাকিব খান।

এরপর এই বছর রহমত উল্লাহ ১ লাখ ডলার চাঁদা দাবি করেন এবং তা না পেলে প্রাণনাশের হুমকি দেন বলে মামলায় অভিযোগ করেন শাকিব।

অস্ট্রেলিয়া পুলিশের কাছে ওই নারী যে অভিযোগ করেছিলেন, সেই অভিযোগও প্রমাণিত হয়নি বলে দাবি করেন শাকিব খান।

মামলায় তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়ান পুলিশ ‘হানি ট্র্যাপে’ পড়েছেন উল্লেখ করে এসব চক্র সম্পর্কে তাকে সতর্ক করে দিয়েছিল।