হলটি ভেঙে সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণের কথা জানিয়েছেন হলের ম্যানেজার।
Published : 16 Mar 2025, 11:20 PM
পাঁচটির মধ্যে তিনটির পর্দা নেমেছে আগেই। টিমটিম করে কোনোমতে জ্বলছিল ‘পূরবী’র আলো। সেটিও নিভে গেল।
দর্শক খরায় দেশে একের পর এক বন্ধ হওয়া প্রেক্ষাগৃহের তালিকায় যুক্ত হয়েছে ময়মনসিংহের ‘পূরবী’ সিনেমা হল।
ময়মনসিংহ শহরে একসময় প্রেক্ষাগৃহ ছিল পাঁচটি- ‘অজন্তা’, ‘ছায়াবাণী’, ‘অলকা’, ‘পূরবী’ ও ‘সেনা অডিটরিয়াম’। পূরবী বন্ধ হয়ে যাওয়ায় টিকে রইল শুধু ‘ছায়াবাণী’।
গতবছরের ডিসেম্বর থেকে হলটি ভাঙা শুরু হয়েছে। হল কর্তৃপক্ষ বলছে, গত কয়েক বছর ধরে প্রতি শোতে ৫-৭ জন দর্শক হয়। অনেক সময় দর্শক না থাকায় শো বন্ধও রাখতে হয়। দিনের পর দিন স্টাফ খরচও না ওঠায় হল ভাঙার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হবে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন হলের ব্যবস্থাপক মোখতার হোসেন।
শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ৮-১০ জন শ্রমিক দেয়াল ভেঙে ইট, পাথর ও লোহা সরানোর কাজ করছেন।
মুকুল মিয়া নামের একজন শ্রমিক বললেন, ২৫ ডিসেম্বর থেকে ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ১২-১৪ জন শ্রমিক এই কাজ করছেন। ভবনটি পুরোপুরি ভাঙে জায়গাটি পরিষ্কার করতে আরও তিন মাস সময় লাগবে।
হলের ব্যবস্থাপক মোখতার হোসেন বলেন, “হলের জায়গাটিতে একটি বহুতল ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেখানে শপিং কমপ্লেক্স, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, আবাসন ব্যবস্থা, দর্শক চাহিদা বিবেচনায় পূরবী সিনেপ্লেক্স স্থাপনের চিন্তাভাবনা রয়েছে।”
এবার রোজার ঈদে কয়েকটি বড় বাজেটের সিনেমা মুক্তি পাবে। যে তালিকায় আছে সুপারস্টার শাকিব খানের ‘বরবাদ’, সিয়াম আহমেদের ‘জংলি’, আফরান নিশোর ‘দাগি’ এবং মোশাররফ করিমের ‘চক্কর’।
ঈদের ঠিক আগেই কেন হলটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে প্রশ্নে মোখতার বলেন, “হল ভাঙার পরিকল্পনা আগে থেকেই ছিল। বর্ষাকাল চলে আসলে কাজে বাধা তৈরি হবে, তাই ঈদের আগেই ভাঙা হচ্ছে। তাছাড়া হলের সঙ্গে যুক্ত থাকা সব স্টাফদের নিয়েই কাজ করা হচ্ছে, তারা তাদের বেতন বোনাস ঠিক সময়েই পেয়ে যাবেন।”
ময়মনসিংহ নগরীর চামড়াগুদাম এলাকায় ৩২ শতাংশ জায়গায় অবস্থিত সিনেমা হলটিতে আসনসংখ্যা প্রায় এক হাজার।
‘পূরবী’ প্রতিষ্ঠার নির্দিষ্ট দিনতারিখ জানা না গেলেও মোখতারের ভাষ্য, স্বাধীনতার বেশ কয়েক বছর আগে প্রেক্ষাগৃহটি নির্মাণ করা হয়েছিল। তখন এই হলের বেশ নাম ছিল, হলভর্তি দর্শকও হত। তবে কোভিড মহামারীর পর দর্শক একেবারে কমে যায়। সবশেষ দুই মাস আগে ‘এক বুক জ্বালা’ সিনেমাটি চলেছে, যেটি মুক্তি পেয়েছিল ২০০৭ সালে।
‘পূরবী’র স্মৃতি স্মরণ করে স্থানীয় বাসিন্দা মনু মিয়া বলেন, “হলটি দেখতে দেখতে আমরা বড় হয়েছি। এক সময় সিনেমার জোয়ার ছিল। তাই মানুষ হলের আশপাশে অনেক ভিড় জমাত। এখন সিনেমা না চলার কারণে মালিকপক্ষ হল ভাঙছে। এতে খারাপ লাগলেও মালিক তো আর বছরের পর বছর লোকসান গুনবে না।”
একের পর এক সিনেমা হল বন্ধ হওয়া সংস্কৃতির জন্য বড় ধরনের হুমকি বলছেন সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষজনও।
‘সমাজ রূপান্তর সাংস্কৃতিক সংঘ’র সভাপতি ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, “এক সময় একের পর এক তিনটি হলেও সিনেমা দেখতাম। সে সময়টা আর কখনো আসবে না।
“হল বন্ধ হওয়া মানে সংস্কৃতির ওপর বড় ধরনের একটি হুমকি আসা। একটি সিনেমার মাধ্যমে সমাজ ও দেশের পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব। তাই দেশীয় সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন।”