ফুটবল জাদুকরের অভিনয় আর গানের গল্প

পেলে ভালোবাসতেন অভিনয়, তাই সিনেমাওতে পাওয়া গেছে তাকে; পছন্দ করতেন গান, গীতিকার হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করেছিলেন তিনি।

গ্লিটজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Dec 2022, 09:18 AM
Updated : 30 Dec 2022, 09:18 AM

তিনটি বিশ্বকাপ জিতে, প্রতিভার দ্যুতিতে সবার চোখ ধাঁধিয়ে, জীবনভর ফুটবলকে ভালোবেসে ৮২ বছর বয়সে চলে গেলেন ফুটবলের রাজা পেলে। এই মহাতারকা আলো ছড়িয়েছেন সিনেমায়, গানে।

তার জীবনীকারদের ভাষ্য অনুযায়ী, পেলের লেখা গানের সংখ্যা একশর বেশি। তার একটি অ্যালবাম বিক্রি হয়েছে এক লাখ কপির বেশি। যেসব সিনেমায় পেলেকে দেখা গেছে, তার মধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে চলচ্চিত্র ‘ভিক্টরি’ একটি।

সাও পাওলোর আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে বৃহস্পতিবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ফুটবলের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র পেলে, যার আনুষ্ঠানিক নাম এদসন আরান্তেস দো নাসিমেন্তো। তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। 

ফুটবল মাঠের সাফল্য পেলেকে পরিণত করেছিল ক্রীড়াঙ্গনের একজন আন্তর্জাতিক আইকনে। পরে তিনি নিজের তারকা খ্যাতির বিস্তার তিনি ঘটিয়েছেন অভিনয়ে, গানে।

‘কিং পেলে’ (১৯৯২)

রুপালি পর্দার সঙ্গে পেলের যোগাযোগ বেশ পুরনো। পেলে বড় পর্দায় প্রথম আসেন ১৯৬২ সালে। কার্লোস হুগো ক্রিস্টেনসেন পরিচালিত ‘কিং পেলে’ সিনেমায় অভিনয় করেন পেলে। ওই বছরই তিনি দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ জিতেছিলেন।

পেলের জন্মস্থান ত্রেস কোরাকোস শহরের বর্ণনা দিয়ে শুরু হয় সিনেমার গল্প। এরপর সাও পাওলোর বাউরু ও সান্তোস শহরে পেলের তারকা হওয়ার গল্প তুলে ধরা হয় সিনেমায়।

ভিক্টরি (১৯৮১)

ভিক্টরি সিনেমার শুটিং যখন শুরু হয় তখন চলচ্চিত্রাঙ্গনে খ্যাতির তুঙ্গে বলিউড অভিনেতা সিলভেস্টার স্ট্যালোন। তার সঙ্গে এ সিনেমায় পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেন পেলে। এ সিনেমায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের নাৎসী ও বন্দিদের মধ্যে অনুষ্ঠিত একটি ফুটবল ম্যাচের গল্প তুলে ধরা হয়।

সিনেমায় আরও ছিলেন ববি মুরের মত পেশাদার কয়েজন ফুটবলার। অনেক জায়গায় সিনেমাটি মুক্তি পায় ‘এসকেপ টু ভিক্টরি’ নামে।  

এক সাক্ষাৎকারে পেলে বলেছিলেন, যুদ্ধবন্দির ভূমিকায় অভিনয় করার সময় তিনি দারুণ মজা পেয়েছিলেন। বাইসাইকেল কিকে গোল করার একটি দৃশ্য আছে সেখানে, মূল চিত্রনাট্যে সেখানে অভিনয় করার কথা ছিল স্ট্যালোনের। কিন্তু ওইভাবে গোল করা তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। সে কারণে পরে তাকে গোল কিপার বানিয়ে দেন পরিচালক।

ভিক্টরিতে অভিনয়ের জন্য নিজেকে কত নম্বর দেবেন? মজা করে পেলে বলেছিলেন, অভিনেতা হিসেবে নিজেকে তিনি দশে দশ দেবেন।

‘বার্থ অব এ লেজেন্ড’ (২০১৬)

কীভাবে বস্তির দরিদ্র ঘরে জন্ম নিয়েও নানা সংগ্রাম পেরিয়ে পেলে হয়েছেন ফুটবল দুনিয়ার কিংবদন্তী, সেই চেনা গল্পটাই সিনেমার পর্দায় নতুন করে বলেছেন পরিচালক মাইকেল ও জেফ জিম্বালিস্ট। ‘বার্থ অব এ লেজেন্ড’ পর্দায় আসে ২০১৬ সালে।

এত গল্প থাকতে হঠাৎ কেন পেলের জীবনটাকেই বেছে নেওয়া হল? পরিচালক জিম্বালিস্টের জবাব, “জিনিয়াসদের বোঝার চেষ্টা করাটা আমার কাছে সব সময়ই রোমাঞ্চকর মনে হয়। পেলে সেই গল্প। এই গল্প শুধু পেলের গল্প।”

‘বার্থ অব এ লেজেন্ড’ সিনেমায় সংগীত পরিচালনা করেছেন ভারতের অস্কারজয়ী সুরকার ও সংগীত পরিচালক এ আর রহমান।

এছাড়া ১৯৭২ সালে ‘আ মার্চা’, ‘আ মাইনর মিরাকল’ (১৯৮৫), ‘হটসহট’সহ (১৯৮৬) আরও কিছু সিনেমায় অভিনয় করেছেন পেলে।

টেলিভিশনের ধারাবাহিকেও পেলেকে দেখা গেছে। ১৯৬৯ সালে ব্রাজিলিয়ান ধারাবাহিক ‘ওস এস্ত্রানহোতে’ তিনি অভিনয় করেন। এছাড়া, ‘উজিসস্ত্রোনস’ (১৯৬৯), ‘সালভাদর দ্য পাতরিয়া (১৯৮৯)’, ‘দ্য ক্লোন’ (২০০১) এবং ‘স্ফিডি’ (১৯৯৮) ধারবাহিকে পেলে অভিনয় করেন।

২০২১ সালে কালোমানিককে নিয়ে নির্মিত ‘পেলে’ নামের ডকুমেন্টারি তৈরি করে নেটফ্লিক্স।