নজরুল সংগীতে কিংবদন্তিতে পরিণত হওয়া সেই ফিরোজা বেগম চলে গেলেন পৃথিবী ছেড়ে, নজরুলের সুর আর বাণী কণ্ঠে ধরে সাত দশক ভক্তহৃদয়ে রাজত্ব করে।
এইচএমভির স্টুডিওতে ১৯৪০ এ বিদ্রোহী কবির সঙ্গে প্রথম দেখা হয় ফিরোজা বেগমের, তখন তিনি নয় বছরের খুকি। গ্রীষ্মের ছুটিতে বেড়াতে গিয়েছিলেন মামার কাছে। মামা তাকে নিয়ে গেলেন এইচএমভির স্টুডিওতে।
ওই আসরের মধ্যমণি হয়ে বসেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। কাছে ডেকে নিয়ে অনেক প্রশ্নের পর গান শোনাতে বললে, শুনিয়ে দেন ‘যদি পরানে না জাগে আকুল পিয়াসা’। ছোট্ট ফিরোজা তখন জানতেন না নজরুলদর্শন হয়েছে তার।
নজরুলের প্রধান সহকারী চিত্ত রায়ের কাছে প্রথম গান শেখা শুরু করেন ফিরোজা। ১৯৩৯ সাল থেকেই অল ইন্ডিয়া রেডিওর তালিকাভুক্ত শিল্পী হিসেবে গান গাইতেন।
১৯৪২ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে তার প্রথম রেকর্ড বের হয়। কিন্তু এক পর্যায়ে তার ক্যারিয়ারের রাশ টেনে ধরা হয় পরিবারের তরফ থেকে, ফিরে যেতে হয় ফরিদপুরে। কিন্তু গান ছেড়ে থাকতে পারেননি। ১৯৪৯ সালে ঢাকায় শর্ট ওয়েভ রেডিও উদ্বোধন হয় তার ও তালাত মাহমুদের গানে। এরপর ঢাকায় থেকে রেডিওতেই গান গাইতে শুরু করেন।
নজরুলের শিষ্য ও সঙ্গীতকার কমল দাশগুপ্তর সঙ্গে ফিরোজা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ১৯৫৫ সালে। বিদ্রোহী কবির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ গানে সুর দিয়েছেন কমল। ফিরোজা নিজেও পরে নজরুলের গানের স্বরলিপি তৈরি করেন; সুর সংরক্ষণে ভূমিকা রাখেন। এই দম্পতির ছেলে হামীন আহমেদ ও শাফীন আহমেদ বাংলা ব্যান্ড সংগীতের দুই জনপ্রিয় তারকা।
৬৫ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অসংখ্য গান উপহার দিয়েছেন ফিরোজা বেগম। প্রথমদিকে রবীন্দ্রসংগীত, লোকগীতি, আধুনিক, গজলসহ প্রায় সব ধরনের গানই গেয়েছেন। পরবর্তীতে শুধু নজরুল সংগীত মনোনিবেশ করেন বলে জানান বিটিভির সাবেক প্রযোজক কামরুন্নেসা হাসান। ঢাকা নজরুল ইনস্টিটিউটের প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন ফিরোজা বেগম।
সংগীতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭৯ সালে স্বাধীনতা পদকসহ দেশে-বিদেশে নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি।
এর মধ্যে রয়েছে শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, শ্রেষ্ঠ টিভি শিল্পী পুরস্কার, নাসিরউদ্দিন স্বর্ণপদক, স্যার সলিমুল্লাহ স্বর্ণপদক, দীননাথ সেন স্বর্ণপদক, সত্যজিৎ রায় স্বর্ণপদক, বাচসাস পুরস্কার ও নজরুল আকাদেমি পদক।