প্রতিনিয়ত নিজেকে ছাপিয়ে যেতে চাই: বাঁধন

নেটফ্লিক্সের প্রযোজনায় বলিউডের নির্মাতা বিশাল ভরদ্বাজের ‘খুফিয়া’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন ঢাকার অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন; শুটিংয়ে ফাঁকে দিল্লি থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেই সিনেমায় যুক্ত হওয়া, শুটিংয়ে অভিজ্ঞতাসহ নানা বিষয়ে কথা বললেন তিনি।

সাইমুম সাদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Oct 2021, 05:13 PM
Updated : 20 Oct 2021, 07:18 PM

যেভাবে যুক্ত হলেন

আমি কানে ছিলাম। অনুরাগ কাশ্যপের সঙ্গে মিটিংরে পরে জেরেমি চুয়া আমাকে নক করেন। তিনি বলেন, অনুরাগ আমার এজেন্টের নম্বর চেয়েছেন। হলিউড, বলিউডের অভিনয় শিল্পীদের এজেন্ট থাকে। আমি চুয়াকে বললাম, আমার এজেন্ট নেই, কেন? পরে জানলাম বিশাল ভরদ্বাজের টিম থেকে একটি চরিত্রের জন্য আমার অডিশন করতে চায়।

তখন খুব ব্যস্ত ছিলাম; হ্যালো বলে রাখছিলাম। বাংলাদেশে আসার পর বিশালের সহযোগী কাস্টিং ডিরেক্টর আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। অনলাইনে রিহার্সেল করিয়েছে। হিন্দি-বাংলা মিলিয়ে কথা বলতে হবে। ফোনে অডিশনের ভিডিও ক্লিপ পাঠিয়েছি। সেটি নেটফ্লিক্স ও বিশাল দেখে আমাদের চূড়ান্ত করেন। পরদিন সকালে জুম মিটিংয়ে প্রথম বারের মতো বিশালের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আমি অভিভূত হয়েছি। উনি যে ধরনের গল্প পছন্দ করেন, আমি খুব পছন্দ করি। আমি ভেবেছিলাম, তিনি গুরুগম্ভীর প্রকৃতির কেউ হবেন। কিন্তু তার কথা শুনে আমি মুগ্ধ হয়েছি।

সেই মিটিংয়েই শুটিংয়ের ডেট দিলাম। ২৬ সেপ্টেম্বর সিনেমার আমি ভারতে এসেছিলাম। পরে ১২ অক্টোবর থেকে দিল্লিতে শুটিং শুরু করেছি। এ সিনেমায় প্রধান চরিত্রে অভিনয় করছেন টাবু; আমার বেশিরভাগ দৃশ্যই তার সঙ্গে। আমার চরিত্রটা খুব পছন্দ হয়েছে।

সিনেমায় যুক্ত হওয়ার কারণ

চরিত্রের মেয়েটাকে আমার পছন্দ হয়েছে। আর গল্পটা খুবই ইন্টারেস্টিং। সত্যি বলতে যেই মাপের পরিচালক সেটাও এখানে ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করেছে। ভালো ডিরেক্টরের সঙ্গে কাজ করলে অনেক কিছু শেখা যায়। সাদের (আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ) সঙ্গে কাজ করে এটা বুঝেছি।

আর সিনেমার চিত্রনাট্যের বিশালের জুরি নেই। উনি টিপিক্যাল সিনেমা বানান না। এমন চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে কাজের সুযোগ মিস করতে চাইনি।

ইদানীং অনেকে আমাকে বলার চেষ্টা করছেন, আমাকে সব ভালো কাজ করতে হয়। সবসময়ই ভালো কাজ করতে হয়। কিন্তু আমার প্রশ্ন হল-কয়টা ভালো কাজ এখন হয়? কাজ করতে গিয়ে হয়তো খারাপ কাজও নির্বাচন করতে পারি। সাফল্য, ব্যর্থতা মিলিয়েই জীবন, কাজ করে যেতে চাই।

যেমন

...শুধু অ্যাক্টিং বেউজড কাজটা করতে চাই না। নিজেকে এক্সপ্লোর করতে চাই। ভুলও আমার, সাফল্যও আমার। সবাই যখন বলছে, তুমি এভাবে করো, এটা করো না। আমি বলছি, আমি এখনও ফেইল করতে পারি। একটার পর একটা ভালো সংবাদ দেওয়ার জন্য বাঁধনকে কতো কিছুর মধ্য দিয়েই যেতে হয়েছে। অদ্ভূত জীবন আমার।

আমরা মানুষ, আমাদের ভুল হবে, জীবনে ব্যর্থতা থাকবে। আমার মনে হয় গত তিন বছরে মানুষ হওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে ঢুকেছি। নিজেকে শুদ্ধ করতে প্রতিনিয়ত নিজেকে ছাপিয়ে যেতে চাই। আমি ভুল করব, ব্যর্থতা আসবে। এটা মেনে নিতেই এগিয়ে যেতে হবে। সবাই বলে, এগিয়ে যেতে হবে। কিন্তু পড়ে গেলে কীভাবে উঠে দাঁড়াতে হয়-সেটা কেউ বলে না। আমি আমার মেয়েকে বলি, কারো সামনে পড়ে গেলে কীভাবে দাঁড়াতে হবে-এটাই আমাদের জীবনের মূল চ্যালেঞ্জ।

আমাদের লাইফ এরকমই হবে। মানুষ সাকসেসফুল অনেক সময় ফেরোসাস হয়। তখন আর মাথা ঠিক রাখতে পারে না।

টাবুর সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা

উনাবে আমি ভীষণ পছন্দ করি। তার অভিনয় থেকে জীবনদর্শন-সবই আমার পছন্দের। সিনেমার শুটিংয়ের আগে কখনো উনার সঙ্গে আমার দেখা হয়নি। দেখা হতেই উনি বুঝতে পারছিলেন, আমি খুব খুশি হয়েছি। উনি জানতেন, আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। কুশল বিনিময় শেষে আমাকে বললেন, বাংলাদেশে আমার একজন বান্ধবী আছেন, অভিনেত্রী চম্পা। এটা শুনে আমি খুব খুশি হয়েছি। পরে একসঙ্গে চিত্রনাট্য পড়লাম। আমার বেশিরভাগ দৃশ্যই তার সঙ্গে।

বলিউডে কাজের অভিজ্ঞতা

এখানে সবাই খুব প্রফেশনাল। এখানে তাদের ম্যানেজমেন্ট খুব ভালো। একজন অ্যাক্টরকে কীভাবে ট্রিট করতে হয় সেটা ওরা ভালো করে জানে। ওরা খুব সুসংগঠিতভাবে কাজ করে যা বাংলাদেশে কিংবা কলকাতায় পাইনি। আর ডিরেক্টর তো ‘ডাউন টু আর্থ’। তার মতো বড় মাপের একজন এতো সিম্পল!

দেশে ফিরছেন কবে

প্রথম দফায় শুটিং শেষ অক্টোবরের শেষভাগে দেশে ফিরছি। নভেম্বরে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ মুক্তি পাবে। দ্বিতীয় দফায় আগমী বছরের জানুয়ারিতে ‘খুফিয়া’র জন্য ডেট দিয়েছি। হয়তো এই দফায় কাজ শেষ হবে, না হলে জানুয়ারিতে আবার দিল্লিতে আসব।