বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে বান্দরবানের হোটেল গার্ডেন সিটিতে এ ঘটনা ঘটেছে।
হোটেলে কয়েকজন অতিথির সঙ্গে নোবেলের বাক-বিতণ্ডার মধ্যে জরুরি সেবার হটলাইন ৯৯৯-এ কল পেয়ে বান্দরবান সদর থানার একটি দল গিয়ে উভয় পক্ষকে শান্ত করে বলে জানান ওসি শহিদুল ইসলাম চৌধুরী।
বুধবার রাতে বন্ধুদের নিয়ে সেই আবাসিক হোটেলে উঠেন নোবেল; তারা হোটেল ত্যাগ করেছেন শুক্রবার বিকাল ৪টার দিকে।
হোটেল গার্ডেন সিটির মালিক মোহাম্মদ জাফর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে হোটেলের পাশের রুমের বর্ডারের (অতিথি) দরজায় লাথি মেরে ছিটকিনি ভেঙে ফেলেছেন (নোবেল)। মধ্যরাতে চিৎকার চেঁচামেচি করেছেন; উত্তেজিত হয়ে মানুষকে ধাক্কা মেরেছেন।”
হোটেল কর্তৃপক্ষের এ অভিযোগ অস্বীকার করে নোবেল বলেছেন, তিনি কারও দরজায় গিয়ে লাথি মেরে ছিটকিনি ভাঙেননি; কাউকে ধাক্কাও দেননি।
নোবেল উল্টা দাবি করেছেন, তিনি ও তার বন্ধু ‘হোটেল মালিকের সঙ্গীদের দ্বারা হামলার শিকার’ হয়েছেন; মালিকের কাছে সুরাহা চাইলেও তিনি নীরব ভূমিকা রেখেছেন বলে অভিযোগ এ গায়কের।
“প্রতিবাদ করতে গেলে তারা শারীরিকভাবে আমাদের আঘাত করেছে। বিষয়টি নিয়ে হোটেল কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপই নেননি। এ ঘটনায় আমরা ভিক্টিম।”
কারা ‘হামলা’ করেছে?-এমন প্রশ্নের জবাবে নোবেল বলেন, “তারা হোটেল মালিকের লোক। আমি মালিককে বলেছি, এরা আপনাদের ক্লোজ কি না? মালিক বলছে, এরা আমার শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়।”
নোবেলের ‘হামলার’ অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বিষয়টি অস্বীকার করেন হোটেল মালিক জাফর।
তিনি বলেন, “তিনি আমাদের হোটেলের একজন অতিথি; তাকে হামলার কোনো প্রশ্নই আসে না। তিনিই বরং হোটেলে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করেছেন। পরে হোটেলে পুলিশ এসেছিল, এমন কোনো ঘটনা ঘটলে পুলিশ নিশ্চয়ই হামলাকারীদের থানায় নিয়ে যেত। এরকম কিছু ঘটেনি; এসব মিথ্যা অভিযোগ।”
হোটেলে নোবেলের মোবাইল ভেঙে ফেলার অভিযোগও অস্বীকার করেন জাফর।
তিনি বলেন, “হোটেলে নয়, রুমা এলাকায় তারা নিজেরা নিজেদের মোবাইল ভেঙে আমার কাছে ৬০ হাজার টাকা দাবি করে। আমি দিকে অস্বীকৃতি জানালে আমাদের অল্প দামি একটি ফোন নিয়ে চলে গেছে।”
তবে মালিকের এ অভিযোগও অস্বীকার করেছেন নোবেল।
মধ্য রাতে হোটেলে উদ্ভূত পরিস্থিতির মধ্যে জরুরি সেবার হটলাইন ৯৯৯-এ কল পেয়ে হোটেল গার্ডেন সিটিতে গিয়েছিল বান্দরবান সদর থানার একটি দল।
ওসি শহিদুল ইসলাম চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা গিয়ে দেখি কিছু বর্ডার এক দিকে (পক্ষ) হয়ে গেছে আর নোবেল এক দিকে; বিষয়টি হোটেলে মালিক মীমাংসার চেষ্টা করছিলেন। তিন গ্রুপের কারণে কোনো মীমাংসা হচ্ছিল না, পরে পুলিশের শরণ নিয়েছেন তারা। সব পক্ষকে শান্ত করে পুলিশ ফিরে এসেছে।”
ওসি শহিদুল বলেন, দুই পক্ষের দুই অভিযোগের কোনোটিরই সত্যতা তারা পাননি।
“বর্ডারকে (অতিথি) নিয়ে আরেকজন বর্ডারের (নোবেল) উপর হামলা করবেন মালিক- এটা বিশ্বাসযোগ্য না। আবার নোবেল আরেকজন বর্ডারের (অতিথি) গিয়ে লাথি মেরেছেন-এটারও কোনো সত্যতা আমরা পাইনি। যেটা হয়েছে, পর্যটন এলাকায় এলে সবাই একটু চিৎকার চেঁচামেচি করে, হুই হুল্লোড়ের মধ্যে পাশের বর্ডারেরে মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে। এর বেশি কিছু আমরা জানি না।”
হোটেল কর্তৃপক্ষ কিংবা নোবেল কেউই কারও বিরুদ্ধে থানায় কোনো ধরনের অভিযোগ দায়ের করেননি বলে জানান ওসি।
ঘটনার রাতের পরদিন শুক্রবার বিকাল ৪টার দিকে হোটেল ছেড়ে ঢাকার পথে রওনা হন নোবেল; তিনি এখন ঢাকায় আছেন।
নিজেকে ‘ভিক্টিম’ বলে দাবি করলেও হোটেল মালিকের বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছেন না বলে জানালেন নোবেল।
“আমি এ বিষয়ে খুব একটা আগাতে চাই না। ঝামেলা পছন্দ করি না। আমার দুটো ফোন গেছে, ফোনের জন্য এত প্যারা নিতে পারব না।”
হোটেল মালিকও বলছেন, সেইরাতেই ঘটনার ইতি ঘটেছে; তিনিও নোবেলের বিরুদ্ধে থানায় কোনো অভিযোগ করছেন না।