উর্দু ভাষার দাপটে সেই নিজের কৃষ্টিকে পুঁজি করে বাংলা সিনেমার যে জয় যাত্রা শুরু হয়- তার অন্যতম সৈনিক ছিলেন সাত্তার। হয়েছেন অসংখ্য ফোক সিনেমার মূল পাত্র।
এই বছরে ম্রত্যুর মিছিলে তার প্রয়াণটা একটু নীরবেই মেনে ণি বাংলা সিনেমার জগৎ। কিন্তু দর্শক বা সমালোচকদের চোখে সাত্তার মানে তরবারি খোলা পর্দা কাঁপানো হিরোর আগমণ।
তার প্রয়াণ কেন নিভৃতে হবে?
তাই তাকে নিয়ে লিখলেন আরাফাত শান্ত।
সিনেমা মুলতঃ কি? একটা অডিও ভিডিও সংমিশ্রণ, একটা টিম ওয়ার্ক। এখানে লেখক চিত্রনাট্য লেখে, প্রযোজক বিনিয়োগ করে, সে অনুযায়ী অভিনেতা অভিনেত্রী থাকে, চিত্রগ্রাহক থাকে, পরিচালক থাকে, শব্দের লোক থাকে, বিভিন্ন টেকনিশিয়ান থাকে সবাই মিলে একটা লক্ষ্য পূরণে কাজ করে। দর্শক তা হলে বসে উপভোগ করলে সফল অথবা দর্শক না আসলে ব্যর্থতা। কিন্তু কিছু কিছু মানুষের জীবন থাকে সিনেমার মতই বেদনার। তখন আপনি ভাবতেই পারেন সিনেমার লোক বলেই এত কষ্ট। সেরকম কষ্ট পাওয়া এক জীবনের মানুষ চির দিনের জন্য চলে গেলেন। তিনি নায়ক সাত্তার।
চলচ্চিত্রে সাত্তারের প্রথম উপস্থিতি ১৯৬৮ সালে। ইবনে মিজানের ‘আমির সওদাগর ও ভেলুয়া সুন্দরী’ ছবিতে শিশুশিল্পীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। তার নায়ক হয়ে ওঠার ঘটনা আরও পরে। ১৯৮৪ সালে ‘নতুন মুখের সন্ধানে’ প্রতিযোগিতা থেকে বেরিয়ে কাজ করেন কাজী হায়াৎ এর ‘পাগলী’ ছবিতে। আজিজুর রহমানের ‘রঙ্গিন রূপবান’, ‘অরুন বরুণ কিরণ মালা’, ‘কাঞ্চন মালা’, ইবনে মিজানের ‘পাতাল বিজয়’, চাষী নজরুল ইসলামের ‘শুভদা’, মিলন চৌধুরীর ‘রঙ্গিন সাত ভাই চম্পা’- সাত্তার অভিনীত চলচ্চিত্র সংখ্যা প্রায় দেড় শতাধিক।
ফোক হিরোদের মতোই ট্রাজেডিতে ঠাসা জীবনে মৃত্যুই হলো তার শেষ গন্তব্য। বেঁচে থাকতে তিনি নিউজ হতে পারেননি, মরে গিয়েই নিউজ হলেন। সবাই বলছে, রঙ্গীন রূপবানের নায়কের বিদায়।
নব্বই দশকের আমরা বুঝবো না ফোক ছবির মর্ম। অথচ বাংলাদেশের ফোক ধারার ছবি ছিল বানিজ্যিক ভাবে অত্যন্ত সফল। সেই পাকিস্তান আমলে উর্দু ছবির সাথে লড়াই করতে গিয়ে আমাদের এ ধারার ছবি শুরু। আমাদের চিরায়ত যাত্রার কথা মনে করিয়ে দেয় এ ছবিগুলো। যাত্রা শিল্পও চলছে ধুঁকে ধুঁকে, এ ধরনের সিনেমার সাথে জড়িতরাও সাত্তারের মত ট্রাজেডি হিরো হয়ে চলে যাচ্ছে।