বয়কট: ১৮ সংগঠনের অভিযোগ, মিশা সওদাগরের ব্যাখ্যা

চলচ্চিত্র নীতিমালার বিরোধিতা করা, পরিচালক বদিউল আলম খোকনের সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়ানোসহ চলচ্চিত্রের ১৮ সংগঠনের অভিযোগে ‘বয়কট’ হওয়ার পর তা নিয়ে ব্যাখ্যা দিলেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি ও খলনায়ক মিশা সওদাগর।

সাইমুম সাদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 July 2020, 06:38 PM
Updated : 16 July 2020, 05:03 PM

বুধবার দুপুরে বিএফডিসিতে এক সংবাদ সম্মেলনে মিশা সওদাগরের সঙ্গে জায়েদ খানকেও বয়কটের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতি, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতিসহ চলচ্চিত্রের ১৮ সংগঠন।

বয়কটের বিষয়ে জায়েদ খানের কোনও বক্তব্য পাওয়া না গেলেও বুধবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে কথা বলেছেন মিশা সওদাগর।

চলচ্চিত্র নীতিমালার আওতায় শিল্পী-কলাকুশলীদের ‘কনভেন্স’ বন্ধের সিদ্ধান্ত বাকি সংগঠন মেনে নিলেও মিশা সওদাগর ও জায়েদ খান এর বিরোধিতা করে এসেছেন বলে অভিযোগ তুলেছে ১৮ সংগঠনের জোট।

শিল্পীদের ড্রাইভার, সহকারী, ব্যক্তিগত মেকআপম্যানকে ২ হাজার টাকার মতো ‘কনভেন্স’ দেওয়ার নিয়ম বাদ দিয়ে ২০১৯ সালের অক্টোবরে চলচ্চিত্র নির্মাণ নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়।

করোনাভাইরাস সঙ্কটের মধ্যে চলচ্চিত্রের নির্মাণ ব্যয় কমাতে এ উদ্যোগ ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব বদিউল আলম খোকন।

নিজেরা নীতিমালার বিরোধিতার পাশাপাশি মিশা ও জায়েদ শিল্পী সমিতির সদস্যদেরও এ বিষয়ে নিরুৎসাহিত করেছেন বলে অভিযোগ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজারের।

ছবি: ফেইসবুক থেকে নেওয়া

মিশা সওদাগর বলছেন, শিল্পী সমিতির সদস্যদের দাবির প্রেক্ষিতে সমিতির সভাপতি হিসেবে তিনি ‘কনভেন্সের’ কথা বলেছেন। অনেক শিল্পী কনভেন্সের উপর নির্ভর করে ।

“বিষয়টি অনেক আগেই মিটমাট হয়ে গেছে। তারা কনভেন্স দেবেন বলে আমাদের চিঠিও দিয়েছেন। তারপরও এটা নিয়ে এখন কথা হচ্ছে কেন সেটাই তো বুঝলাম না।”

তবে শিল্পীদের কনভেন্স দেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে মিশার বক্তব্যের জবাবে বলেন গুলজার।

“কনভেন্স না নেওয়ার কথা শিল্পী সমিতির নেতারা মৌখিকভাবে আমাদের জানানোর পর অভিনয়শিল্পীদের ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়ে কনভেন্স নেওয়ার কথা বলেছেন। তাদের মুখের কথার কোনো মূল্য থাকল না।”

চলচ্চিত্রের নীতিমালা প্রণয়নের সময় চলচ্চিত্রের সব সমিতি থাকলেও শিল্পী সমিতির কাউকে ডাকা হয়নি বলে আরেক অভিযোগে বলেন শিল্পীদের নেতা মিশা।

তার অভিযোগ উড়িয়ে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব খোকন বলছেন, শিল্পী সমিতির নেতাদের অনেকবার মিটিংয়ে আসতে বলেছি আমরা। শিল্পী সমিতির নির্বাচনের কারণে তারা আসতে পারেননি। এমনকি কোনো প্রতিনিধিকেও পাঠাননি তারা।

নীতিমালা নিয়ে যুক্তি-পাল্টা যুক্তির মধ্যেই চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিএফডিসিতে মিশা সওদাগরের সঙ্গে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব খোকনের বিতণ্ডার ঘটনায় তাদের মধ্যে দূরত্ব আরো স্পষ্ট হয়ে উঠে।

ঘটনার বর্ণনায় মিশা বলেন, “খোকনের সঙ্গে সেদিন আমার কথা কাটাকাটি হয়েছিল। আমরা দুইজন ভালো বন্ধু। এটা আমাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। বিষয়টি বেশ আগেই সমাধান হয়ে গেছে।”

কিন্তু এটিকে ‘ব্যক্তিগত ব্যাপার’ বলতে নারাজ পরিচালক সমিতির সভাপতি গুলজার।

তিনি বলছেন, “নীতিমালা বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে খোকন কয়েকজন সদস্যকে নিয়ে মিশাকে বিষয়টি কাছে গিয়েছিলেন কিন্তু মিশা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। এটা ব্যক্তিগত বিষয় না।”

বিতণ্ডার ঘটনার পরপরই ১৮ সংগঠনের তরফ থেকে মিশাকে কারণ দর্শানো নোটিস পাঠানো হয়; মিশা এটিকে ‘অতি উৎসাহী’ কাজ বলে অভিহিত করছেন।

নোটিসের জবাব দেননি বলে জানান গুলজার; সেই নোটিস পাওয়ার কথা স্বীকার করে মিশা বলছেন, শুটিংয়ে কাজে বাইরে ছিলেন। চিঠিটি খুলে দেখতে পারেনি; ফলে উত্তর দেওয়া হয়নি।

বিতণ্ডার জেরে পরিচালক খোকনকে শিল্পী সমিতি থেকে বয়কটের ঘোষণা দেওয়া হয়। শিল্পী সমিতি থেকে জানানো হয়, খোকনের চলচ্চিত্রে সমিতির কোনো সদস্য কাজ করবেন না। তবে পরে তা তুলে নেওয়া হয়।

শিল্পী সমিতির পিকনিকে না যাওয়ার কারণে সমিতির সদস্য শামসুল আলমের সদস্যপদ শিল্পী সমিতি প্রত্যাহার করেছেন বলে অভিযোগ করেন খোকন।

তিনি বলেন, “আলমকে পিকনিকের কার্ড দিয়েছিল। উনি কার্ড নেননি ও পিকনিকে যাননি। এটার জন্য তার সদস্যপদ বাতিল করেছে শিল্পী সমিতি। হাস্যকর ব্যাপার। কোনো কারণ নেই।”

তবে সাংগঠনিক কারণে আলমের সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে বলে দাবি মিশার।

শিল্পী সমিতির সদস্য পদ হারানো শামসুল আলম এফডিসির শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন।

বুধবার যে সংবাদ সম্মেলন থেকে মিশা-জায়েদকে বয়কটের ঘোষণা এসেছে সেখানে শামসুল আলমসহ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব বদিউল আলম খোকন, সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার, প্রযোজক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু, বাংলাদেশ ফিল্ম ক্লাব লিমিটেডের সভাপতি অমিত হাসান, কার্যনির্বাহী সদস্য ওমর সানিসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

পুরান ঢাকায় জন্ম নেওয়া মিশা সওদাগর ১৯৮৬ সালে এফডিসির নতুন মুখের সন্ধানে প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত হয়ে চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে নাম লেখান।

ছটকু আহমেদের ‘চেতনা’ ও ‘অমরসঙ্গী’ চলচ্চিত্র ‘ফ্লপ’ করার পর পরিচালকদের পরামর্শে খলনায়ক হিসেবে তমিজ ‍উদ্দিন রিজভীর ‘আশা ভালোবাসা’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে; একের পর এক হিট চলচ্চিত্র উপহার দিয়েছেন তিনি।

তিন দশকের ক্যারিয়ারে আট শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি; অভিনয়ের স্বীকৃতি স্বরূপ পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র ‍পুরস্কার।