দর্শকরা এখন গল্প দেখতে চায়: প্রবীর রায় চৌধুরী

গ্লিটজের মুখোমুখি হলেন এই সময়ের নাট্যনির্মাতা প্রবীর রায় চৌধুরী; নির্মাতা হিসেবে ক্যারিয়ার ও নাটক নিয়ে ভাবনাসহ নানা বিষয়ে কথা বললেন তিনি।

গ্লিটজ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Jan 2020, 02:35 PM
Updated : 30 Jan 2020, 02:35 PM

সম্প্রতি প্রচারিত আপনার ‘আমরা করব জয়’ নাটকে দর্শকদের কাছ থেকে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া পাচ্ছেন?

খুবই ভালো রেসপন্স পাচ্ছি। ইউটিউব ও ফেইসবুকে দর্শকদের কমেন্ট ও রিভিউগুলো ইতিবাচক ছিল। এ নাটকে ২০০ জনের মতো আর্টিস্ট কাজ করেছেন। এর মধ্যে ৩৫ জনের মতো নিয়মিত আর্টিস্ট। এর মধ্যে তারিক আনাম খান, জোভান, সাবিলা, ইরফান সাজ্জাদসহ আরও অনেকে ছিলেন। অভিনয়ে সবাই নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়েছেন। এই সময়ে তরুণরা পড়াশোনা শেষ করে চাকরির জন্য হতাশায় ভোগেন সেই বিষয়টিই তুলে আনা হয়েছে। ছোট ছোট তিনটি আলাদা আলাদা গল্পে অভিনয় করেছেন জোভান, সাবিলা ও ইরফান সাজ্জাদ। সবার তাদের আক্টিংয়ের প্রশংসা করেছেন।

এত অভিনয়শিল্পীকে নিয়ে নাটক করা ব্যয়বহুল ব্যাপার; এই ঝুঁকিটা কেন নিলেন?

আমার আগের কাজগুলো রোমান্টিক ঘরানার ছিল। অনেকদিনের ইচ্ছা ছিল- এটা থেকে বেরিয়ে ভিন্ন ধরনের কিছু করার। আমি নিজেও পড়াশোনার পর এই বিষয়টি নিয়ে সাফার করেছি। আশেপাশের অনেকে ও আমার ছোটভাইরা এতে সাফার করেছেন; পড়াশোনার শেষে জব না পেয়ে এক ধরনের হাতাশা কাজ করে। নিজের ভালোলাগার দিক থেকে ও দায়িত্ববোধের জায়গা থেকেই এই কাজটা করা।

এ বছর কী কী নাটক নির্মাণের পরিকল্পনা করেছেন?

কোয়ানটিটির তুলনায় কোয়ালিটির দিকে বেশি মনোযোগ দিই। গত বছর চারটা কাজ করেছিলাম; এ বছর সর্বোচ্চ পাঁচ-ছয়টার মতো কাজ করতে পারি। তবে তা এখনও ঠিক করা হয়নি। এর মধ্যে চারটা গল্প প্রস্তুত আছে।

আপনি বলছেন, আপনার বেশিরভাগ নাটক রোমান্টিক ঘরানার; সেখান থেকে বেরোনোর পরিকল্পনা কোনো আছে?

এই বছর রোমান্টিকের বাইরের ট্র্যাকে দুইটা কাজ করার ইচ্ছা আছে। আমাদের এখানে রোমান্টিক ও কমেডি নাটকে দর্শকদের রেসপন্সটা ভালো পাওয়া যায়। সেই ক্ষেত্রে এ ধরনের কাজের পাশাপাশি দর্শকদেরও তৈরি করতে হবে। ভিন্ন ধরনের নাটক বেশি বেশি করতে হবে। ওই ধরনের গল্পগুলোতে দর্শকরা আস্তে আস্তে অভ্যস্ত হয়ে যাবে।

আপনার ‘বেস্ট ফ্রেন্ড’ নাটকটি দর্শকমহলে বেশ সাড়া ফেলেছে; সেই নাটকের নতুন কোনো পর্ব করার পরিকল্পনা করছেন?

‘বেস্টফ্রেন্ড’ নাটকের দুই পর্ব ইতোমধ্যে প্রচার হয়েছে। এ বছরই তৃতীয় পর্ব বানানোর ইচ্ছা আছে। গল্পটা মোটামুটি রেডি। কিছু জায়গায় সংশোধন করে নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়াটা করে কাজ শুরু করব।

আপনি একসময় ফটোগ্রাফি করতেন; সেখান থেকে ঘটনাক্রমে নির্মাতা হয়ে উঠার গল্পটা জানতে চাই।

ছবি: মাহমুদ জামান অভি

আমার ফ্রেন্ডরা ফটোগ্রাফি করত দেখে আমিও আগ্রহী হয়ে উঠি। ফটোগ্রাফিতেও ভালো রেসপন্স পেয়েছিলাম। তখন থেকেই আমি গল্প লিখতাম। তখন বন্ধুবান্ধব ও সহকর্মীদের অনুপ্রেরণায় নিজের গল্পে নাটক বানালাম। প্রথম কাজেই ভালো প্রতিক্রিয়া পাওয়ায় নির্মাণে নিয়মিত হলাম।

এখন নাটক নির্মাণকে পেশা হিসেবে নেওয়ার মতো পরিবেশ আছে কি না?

যদি বলি, পুরোপুরি না। প্রতিদিন নাটকের কাজ করতে পারবেন না। প্রতিদিন কাজ করলে কোয়ালিটি খারাপ হতে বাধ্য। কারণ এটা নিয়ে ভাবতে হবে। শুটিংয়ের প্রি-প্ল্যান আছে; নাটকের শুটিংয়েরও পর অনেকগুলো কাজ আছে। শুটিং ফিফটি পার্সেন্ট; তারপর এডিটিং প্যানেলে কাজ থাকে।

নাটক ঠিকভাবে করা আমাদের দেশে এটা একটু কঠিন। হয়তো যারা একটু ভালো করছে, কিন্তু সবার জন্য না। কোনো বছর এই ডিরেক্টর ভালো করছে আবার কোনো আরেক ডিরেক্টর ভালো করছেন। কিন্তু লং টাইম চিন্তা করলে এটাকে প্রফেশন হিসেবে নেওয়াটা এখনও কঠিন।

নাটকে এখন অন্যতম আয়ের উৎসব ইউটিউবের ভিউ; এটা নাটকে কতটুকু প্রভাব ফেলছে?

এটা নাটকে অবশ্যই প্রভাব ফেলছে। যদি বলেন, ইউটিউব ভিউ কোয়ালিটি কি না তাহলে বলব, এটা কোয়ালিটি না। এটা বেসিক্যালি রেভিনিউ নিশ্চিত করছে। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, আমার কাছে অনেকগুলো দর্শক আছে। আমার অনেক নাটক কোটির মতো ভিউ হয়েছে। যার মানে আমার কাছে এক কোটি দর্শক আছে। সেটা আমি এক দিক থেকে ইতিবাচকভাবে দেখি। এই দর্শকগুলোকে রিচ করবো, কোন গল্পগুলো শোনাবো- সেটা একটা ব্যাপার।

অনেক সময় আমরা বলি, খারাপ গল্পগুলো ভালো ভিউ হচ্ছে। তার মানে দর্শককে সেভাবে ভালো কাজগুলো রিচ করতে পারছে না। নিয়মিতভাবে সবাই মিলে যদি ভালো কাজ করি তাহলে দর্শকরা দেখতে বাধ্য। কারণ দর্শকরা গল্প দেখতে চায়; আপনি যেটাই দেখাবেন ওটাই দর্শক নিচ্ছে। এর চেয়ে বেটার কিছু দেখালে দর্শক সেটাই গ্রহণ করবেন।

চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে এখন লগ্নীকৃত টাকা তুলতে পারছেন না প্রযোজকরা; সেই প্রেক্ষাপটে নাটকের কী অবস্থা দেখছেন?

আমি যদি বলি, নাটকের অবস্থা অনেকটা বেটার। কারণ আমি অনেককেই দেখছি, নতুন নতুন প্রডিউসার আসছে; স্পন্সর আসছে। এটা দর্শকদের উপর ডিপেন্ড করে। দর্শক যা দেখবে স্পন্সররা সেদিকেই যাবে। স্পন্সরদের কাজ হচ্ছে, দর্শকদের রিচ করা। আগের তুলনায় নাটকের বাজেটটা বেড়েছে; কারণ নাটক ব্যবসা সফল হচ্ছে। এখানে ইউটিউবের ভিউ থেকে এক্সট্রা একটা ইনকাম আসছে। সেটা একটা ভালো সাপোর্ট দিচ্ছে।

সামনে চলচ্চিত্র নির্মাণ নিয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে?

এখনও পরিকল্পনা করিনি। আমার আরেকটু প্রিপারেশনের দরকার আছে। সামনে আরও দুইটা বছর সময় নিতে চাই। আরও অনেক কিছু শেখার বাকি আছে। সবশেষ কয়েক বছর ছোট ছোট কিছু বিষয় শিখলাম; আরও শিখতে চাই। যখন আমি মনে করব, ভালো কিছু দিতে পারব চলচ্চিত্রে তারপরে সিদ্ধান্ত নেব-ওখানে যাওয়ার উচিত কি না।

এবার ভালোবাসা দিবসে কী কাজ করছেন?

উৎসবগুলোতে আমি একটা কাজ করতেই পছন্দ করি। এবারও একটি কাজ করছি। এটার নাম ‘আনটোল্ড লাভস্টোরি’। এটাতে অভিনয় করেবেন অপূর্ব ভাই ও তানজিন তিশা। নাটকের গল্পটা অপূর্ব ভাইয়ের। পরে আমি এটা ডিটেলস করি। চিত্রনাট্য লিখেছেন অপূর্ণ রুবেল; উনি খুব ভালো লিখেন। আর কিছুদিন পর শুটিং শুরু করব। আশা করি, গল্পটা দর্শকদের ভালো লাগবে। আমি সবসময় গল্প বলার চেষ্টা করেছি। যাতে দর্শকদের সঙ্গে কানেক্ট করতে পারি। আমাদের আশেপাশের গল্পগুলোই ক্যামেরায় তুলে আনতে পছন্দ করি।