‘মাধবীলতা’য় বা ‘অবহেলা’য় নিলয় দাস

’যখনই নিবিড় করে’ বা ‘অবহেলা’ গানগুলো যখন আজও ঘুরে ফিরে আসে শ্রোতাদের কণ্ঠে- তখন বুঝে নিতেই হয়, নিলয় দাস শুধু একটি নাম নয়- একটি কিংবদন্তীর নাম।

রূম্পা সৈয়দা ফারজানা জামানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Jan 2020, 06:25 AM
Updated : 12 Jan 2021, 05:27 PM

বিশিষ্ট সংগীতজ্ঞ, নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপিকার ও গবেষক ওস্তাদ সুধীন দাস এবং সঙ্গীত শিল্পী নীলিমা দাসের সন্তান নিলয় দাস, যিনি আজও বাংলাদেশের ব্যান্ড ইতিহাসের কিংবদন্তী গিটারিস্ট নামে সম্মানিত, তার মৃত্যু দিবস আজ।

পরিবারের সনাতনি সঙ্গীত সাধনার মাঝে নতুন রং ঢালতে তিনি পাশ্চাত্য ঘরানার সুর যোগ করেন। তার গিটার সাধনা রীতিমত প্রার্থণায় পরিণত হতে থাকে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে।

আরেক প্রয়াত বন্ধু হ্যাপি আখন্দের উৎসাহেই তিনি হাতে গিটার তুলে নিয়েছিলেন। অবশ্য প্রথমে তিনি নজরুল সঙ্গীতই গাইতেন। সেই চলমান জীবনে নতুন বাঁক আনতে নিজের প্রয়াসে গিটার বাদক থেকে সাধকে পরিণত হন নিলয় দাস।

বাংলাদেশের সুররাজ্যে তিনিই মূলত প্রথম পরিচয় করিয়েছিলেন কান্ট্রি, ব্লুজ, রক, ওয়েস্টার্ন ক্লাসিক্যাল, নিও ক্লাসিক্যাল, ফ্ল্যামেঙ্কো, জ্যাজসহ আরও অনেক পাশ্চাত্য সঙ্গীতের শাখার সঙ্গে।

নিলয় দাসের প্রথম একক অডিও অ্যালবাম ‘কত যে খুঁজেছি তোমায়’ প্রকাশিত হয় ১৯৮৮ সালে। এটি ‘সারগাম’ এর ব্যানারে প্রকাশিত হয়। অ্যালবামটির সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন ফোয়াদ নাসের বাবু।

১৯৯২ সালে আশিকুজ্জামান টুলু’র সঙ্গীত পরিচালনায় দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘বিবাগী রাত’ প্রকাশিত হয় একই ব্যানার থেকে । এরপর নিলয় দাস ১৯৯৩ সালে তাঁর ব্যান্ডদল ‘ট্রিলজি’ নিয়ে মঞ্চ পরিবেশনা শুরু করেন।

বাংলাদেশে প্রথম ইন্সুট্রুমেন্টাল কনসার্ট করে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছিলেন। যা শিল্পকলা একাডেমি’র মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়। এরপরেই মূলত জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন নিলয় দাস।

বাংলাদেশে শিল্পকলা একাডেমির গিটার শিক্ষক পদেও দ্বায়িত্ব পালন করেন তিনি। 

প্রিয় বন্ধু হ্যাপির স্মৃতি এবং কাজকে ধরে রাখতে ‘হ্যাপি স্কুল অফ মিউজিক’ নামে একটি মিউজিক স্কুল প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।

তার কাছেই গিটারের হাতেখড়ি হয়েছিল অর্থহীনের সুমন, প্রাক্তন ওয়ারফেইজ সদস্য কমল, দলছুটের বাপ্পা মজুমদার, সউলসের পার্থ বড়ুয়াসহ অনেকের।

১৯৯২ সালের পর তিনি তার ব্যান্ড ‘ট্রিলজি’ ও নিজের একক কোনো অ্যালবাম এর কাজ করেননি তিনি। তবে মিক্সড অ্যালবামে কাজ করেছেন। এগুলোর মধ্যে লাশকাটা ঘর, স্টার্স-১, স্টার্স-২, টুগেদার, দেখা হবে বন্ধু, ক্ষমা, শক্তি, বিতৃষ্ণা জীবনে আমার ও কাছে আসার দিন ইত্যাদি অন্যতম।

ব্যক্তি জীবনে অভিমানী হিসেবে পরিচিত নিলয় দাসের আজও কিছু কাজ জমা রয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন তার পরিচিতজনেরা। ২০০৫ সালে তিনি নিজের কিছু মৌলিক গানের কাজ শুরু করেছিলেন। যা আজও আলোর মুখ দেখেনি।

কিন্তু বাংলাদেশের গিটাররাজ্যে, সাধনার প্রার্থণায় এবং ব্যান্ড সঙ্গীতের চলার পথে নিলয় দাসের নামটি রয়ে গেছে আজও।

আজ চলে যাওয়ার ১৪ বছর পরেও অন্তর্জালে ভেসে বেড়ানো গানই তার অবদানের প্রমাণ।

যখনই নিবিড় করে গানটির অরিজিনাল ভার্সন শুনুন এখানে-