বাংলাদেশে হুমায়ূনের কল্যাণেই পাঠক তৈরি হয়েছে: সমরেশ মজুমদার

“আমার বলতে লজ্জা নেই, দ্বিধাও নেই- বাংলাদেশে যতটুকু পাঠক তৈরি হয়েছে- তা হুমায়ূনের কল্যাণেই হয়েছে”- বলে নড়েচড়ে বসলেন সমরেশ মজুমদার।

রুম্পা সৈয়দা ফারজানা জামানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Nov 2019, 10:49 AM
Updated : 13 Nov 2019, 11:11 AM

বিভিন্ন রকমের আমন্ত্রণে প্রায়শই বাংলাদেশে এসে ঘুরে যান বাংলা সাহিত্যের ক্ষুরধার লেখক সমরেশ মজুমদার। সাহিত্যের এপার-ওপারের অপার সম্পর্কের কারণে বাংলাদেশের লেখক হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে তার ছিল প্রাণের বন্ধন। হুমায়ূনের সঙ্গে কাটিয়েছেন বিনিদ্র রাত – করেছেন সাহিত্যের আড্ডা। সম্পর্কটা ‘তুমি-তুমি’ ছিল। আর হৃদয়ে আরও বড় কোনো ডাকও ছিল- যা বোঝা যায় সমরেশের চোখ দেখেই।

স্বভাবতই বাংলাদেশের হিমু-মিসির আলীর স্রষ্টার প্রতি তার অনুরাগ অনেকের থেকেই বেশি।

রাতের অন্ধকার তখনও গ্রাস করেনি। কিন্তু মন খারাপের অবসাদ ঠিকই গ্রাস করে সমরেশ মজুমদারকে। প্রসঙ্গ যখন হুমায়ূন আহমেদ- এতটুকু হতেই পারে।

ফিরে গেলেন সাহিত্যের মাধ্যমে হুমায়ূনের কাছে যেন তিনি।

সমরেশের ফেসবুক পেইজ থেকে নেওয়া

“হুমায়ূন যদি বঙ্গদেশে না জন্ম নিত – তাহলে এদেশে কোনো নিজের সাহিত্যের পাঠক জন্মাতো না।”

তবে তিনি এটাও বলেন, “হুমায়ূনের আগে যারা লিখতেন তারা অনেক শক্তিমান লেখক ছিলেন। হয়ত হুমায়ূন তাদের কাছে কিছুই না। কিন্তু তাদের বই বিক্রি হতো না।”

সমরেশ মনে করেন, বই কিনে পড়ার বা উপহার দেওয়ার বাংলাদেশে যে ট্রেন্ড তৈরি হয় সেটার কারণ অবশ্যই হুমায়ূন আহমেদ।

তিনি নিজে অনেক লেখককে কাছ থেকে দেখেছেন, যাদের লেখা চমৎকার কিন্তু বই বিক্রি হতো না বলে দৈন্যদশা থেকে কখনও বের হয়ে আসতে পারেননি তারা। সেখানে হুমায়ূন আহমেদ তার বই দিয়ে গোটা বইয়ের সমাজে যুগান্তকারী বিবর্তনের মূল হোতা হয়েছেন বলেও তিনি মনে করেন।

এ ব্যাপারে সমরেশ মজুমদার একবার হুমায়ূনের সঙ্গে এক আলাপে প্রশ্নও করেছিলেন- তার এত বই বিক্রি হয়- সে বিষয়টি নিজে কীভাবে দেখেন!

সমরেশ গ্লিটজকে বললেন, “তখন হুমায়ূন আমাকে হেসে বললো, সমরেশ দা. যে ছেলে বা মেয়ে ষোল বছর বয়সে হুমায়ূন পড়া ধরে না- তাকে আমি বাঙালি মনে করি না। আর যে কিনা চব্বিশ বছর বয়সের পরেও হুমায়ূন পড়ে- সে মানুষ না।”

হুমায়ূন আহমেদ এভাবেই বলতেন, “চব্বিশের পর একজন এডাল্ট মানুষ কেনো হুমায়ূন পড়বে?” নিজেকে নিজের পাঠক এভাবে নির্ধারণ এবং মূল্যায়ণ করার কাঠগড়ায় দাঁড় করাতেন হুমায়ূন বলেই হাসির সঙ্গে চাপা একটু শ্বাস ফেললেন বর্ষীয়ান এই লেখক।

স্মৃতিচারণে আরও বললেন, “হুমায়ূন নিজেই নিজের হিমু চরিত্র ছাড়া তার নিজের লেখা কোনো চরিত্রেরই গভীরতা নেই বলেছেন। আমাকেই বলেছে।”

সঙ্গে যোগ করেন, “এই কথাটা কিন্তু সবাই জানেও বটে.. অনেকভাবে অনেকবার আলোচানাতেও এসেছে..”

বারবারই সমরেশের শব্দে, চোখে বা শ্বাসে ফুটে উঠছিল যে নামটি। সেটি আর কারও নয়- হুমায়ূন আহমেদের।

সমরেশ মজুমদার যেমন জোর দিয়ে বলেন- ১৯৭১ সালের পর তৈরি হওয়া বাংলাদেশের পাঠক আসলে এখন তার যৌবন পার করছে সাহিত্য চর্চায়, তেমনই মনে করেন এই যৌবনের জোয়ার এনেছেন হুমায়ূন আহমেদ।

বেলা শেষে তাই দুটো সংখ্যা বেশ মিলে যায়! ১৯৭১ এর পর পাঠক তৈরির মৌন আন্দোলন এবং হুমায়ূন চলে যাওয়ার পরেও ৭১তম জন্মদিনে তাকে স্মরণে কারও কারও মৌন উদযাপন।

এরপরে আরও আলাপ করার আমন্ত্রণ জানিয়ে গ্লিটজের মাধ্যমে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালেন ‘প্রিয়’ হুমায়ূন আহমেদকে পশ্চিম বঙ্গের লেখক সমরেশ মজুমদার।