যেভাবে সৃষ্টি হয় সুবীর নন্দীর ‘আমার এ দু’টি চোখ’

‘আমার এ দু’টি চোখ পাথর তো নয়, তবু কেন ক্ষয়ে ক্ষয়ে যায়! কখনো নদীর মতো, তোমার পথের পানে বয়ে বয়ে যায়’-কবি জাহিদুল হকের লেখা পংক্তিগুলোই গানে রূপান্তরিত হয়েছিল সুবীর নন্দীর আগ্রহে। দারুণ জনপ্রিয় গানটির জন্য জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছিলেন এ শিল্পী। 

রুদ্র হকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 May 2019, 01:43 PM
Updated : 7 May 2019, 01:43 PM

সুবীর নন্দীর চির প্রস্থানের দিনে কবি জাহিদুল হক জানালেন গানটি তৈরির পেছনের গল্প। 

সুবীর নন্দী তখন বাংলাদেশ বেতার সিলেট কেন্দ্রের নজরুল সংগীতশিল্পী। ঢাকা এসেছেন, নজরুল ছেড়ে আধুনিক গানের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। তেমনই একটা সময় বাংলাদেশ বেতারে সুরকার শেখ সাদী খানের মাধ্যমে কবি জাহিদুল হকের সঙ্গে পরিচয় হল অখ্যাত সুবীর নন্দীর। কবিতার সমঝদার ছিলেন সুবীর। কবি জাহিদুল হকের কথায় বেশকিছু গান তিনি আগেই শুনেছেন, পরিচয়ের সাথে সাথেই চিনলেন।

স্মৃতিচারণ করে জাহিদুল হক বললেন, “বাংলাদেশ বেতারের ট্রান্সক্রিপশন সার্ভিসে একটি গান হবে, সে গানটিকে কেন্দ্র করেই আমার সুবীরের সঙ্গে যোগাযোগ। তাকে আমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন আমাদের বন্ধু শেখ সাদী খান। সুবীর আমাকে বললো, জাহিদ ভাই আমি আপনার একটা গান করতে চাই। আপনার গানগুলো তো অন্যরকম গান।

“আমি হাসতে হাসতে বললাম, অন্যরকম বলতে কী বোঝায়? তখন সুবীর আমাকে বললো, আপনার গানগুলোকে গানের চেয়ে কবিতা বলেই মনে হয় বেশি। আমি বললাম, রাইট! আমি তো কবিতাই লিখি। কবিতাকে গানের ফর্মে ফেলে দেই। যাই হোক, আমার কাছে যদি গান চাও একটু সময় দিতে হবে।”

মাস তিনেক সময় নিলেন জাহিদুল হক। শেখ সাদীর সুরে গানটিতে কণ্ঠ দিলেন সুবীর নন্দী। বেতারে বাজলো- “আমার এ দুটি চোখ পাথর তো নয়, তবু কেন ক্ষয়ে ক্ষয়ে যায়..”

 

“গানটি শুধু সুবীরকেই যে বিখ্যাত করলো তা নয়, বিখ্যাত করলো আমাকেও, জনপ্রিয় করলো, নন্দিত করলো, বিখ্যাত করলো শেখ সাদী খানকে। মজার ব্যাপার হলো, আমাদের তিনজনেরই প্রথম বিখ্যাত গান এটি। বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি, গত ৩০ বছরে এটি এখনও জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করছে। আমি লিখেছি বলে নয়, হয়ত সাদী সুর করেছিলো বলে নয়, সুবীর গেয়েছিলো বলে, হয়ত তাও নয়, গানটির মধ্যে অলৌকিক কোনো ব্যাপার ভর করেছিলো বলে।”

১৯৭৮ সালে রেডিওতে রেকর্ড করেই থেমে যায়নি গানটি, পরবর্তীতে টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রের জন্যও রেকর্ড হয়েছিলো এ গান।

স্মৃতি হাতড়ে জাহিদুল হক বললেন, “ ১৯৮০’র (দশকের) মাঝামাঝি সালে হবে, একদিন বুলবুল আহমেদ (প্রয়াত অভিনেতা-চলচ্চিত্রকার) ফোন করলেন। বললেন, ‘আপনার এ গানটি আমি আমার নেক্সট ছবি ‘মহানায়ক’-এর জন্য নিতে চাই।  আপনি অনুমতি দিলে গানটি ব্যবহার করতে পারি। পরে গানটি নতুন করে কলকাতায় রেকর্ড করা হয়। তারপর তো এটি একটি ইতিহাস রচনা করে।”

কবি জাহিদুল হক জানান, তার কথায় প্রায় ১০-১২টি গান করেছিলেন সুবীর নন্দী। এর মধ্যে দারুণ জনপ্রিয় হয় আরও কয়েকটি গান। ‘কথা দাও, কথাগুলো ফেরত নিবে না’- গানটি সুর করেছিলেন অজিত রায়। এছাড়াও তার কথায় আজাদ রহমানের সুরে সামিনা চৌধুরীর সঙ্গে দ্বৈত গান-যে দেশে বাতাস স্মৃতির স্পর্শে ভারি, অনুপ ভট্টাচার্যের সুরে ‘তুমি চলে গেলে এ শহর কেন কাঁদে’সহ বেশ কিছু জনপ্রিয় গানে কণ্ঠ দিয়েছিলেন সুবীর নন্দী।