গ্লিটজ: জন্মদিন কেমন কাটছে?
পরীমনি: মিরপুরের কয়েকজন এতিম শিশুর সঙ্গে দিনটি কাটিয়েছি। ওদের কারো বাবা-মা নেই। ছোটবেলায় আমি নিজেও মাকে হারিয়েছি। এই দিনে মাকে মিস করি। ওই জায়গা থেকেই মনে হয়, আমি ওদের সঙ্গে দিনটা কাটাই।
গ্লিটজ: আপনার কাছে জীবনের মানে কী?
পরীমনি: জীবনের অর্থটা খুব সোজা। হাসিখুশিভাবে জীবনটাকে পার করে দাও। কোনো হতাশা রাখার দরকার নেই। হতাশা অবশ্য এমনি চলে আসে না। আমরা ভাবি, ‘কেন ওনার পাঁচতলা বাড়ি আছে’, ‘কেন উনি গাড়িতে চড়ে।’ এসব না দেখে নিজের যতটুকু আছে সেটা নিয়ে সুখী থাকার নামই হচ্ছে জীবন।
যখন মানুষ এসব ভাবতে যায় তখনই হতাশায় জীবনটা অতিষ্ট হয়ে যায়।
গ্লিটজ: আপনি বলছেন, তুলনা জীবনকে জটিল করে তোলে?
পরীমনি: তুলনা না। নিজের জীবনে ওই রকম ভাবেই সুখী থাকা উচিত সবার। কে কী করল, তার সুবিধা-অসুবিধা এসব নিয়ে খোঁচাখুঁচি না করে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকার উচিত সবার। অন্যকে ভালোবাসো, নিজেকে ভালো রাখো কিন্তু ভালোবাসা তাড়িয়ে দিও না!
গ্লিটজ: আপনি জীবন নিয়ে কতটুকু সন্তুষ্ট?
পরীমনি: আলহামদুলিল্লাহ। অনেক কিছু না চাইতেই পেয়ে গেছি। অনেক শুকরিয়া আল্লাহর কাছে। এতো মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি এটা নিয়ে মাঝে মাঝে আমার খুব ভয় লাগে। এটা সত্যি, কল্পনা নাকি স্বপ্ন?
আমি আসলে এসব নিয়ে ভাবতে চাই না। আমি সুন্দর একটা ঘোরের মধ্যে বাঁচতে চাই।
গ্লিটজ: কিন্তু ইন্ডাস্ট্রিতে সমকালীন সহশিল্পীদের মধ্যে ঈর্ষাকাতরতা দেখা যায় হারমেশাই...
পরীমনি: প্রতিযোগিতা শুধু কাজের ক্ষেত্রেই থাকা উচিত। সবাই পেশাদার হব-এটা ঠিক আছে। কিন্তু আমার মনে হয়, ইন্ডাস্ট্রির লোকজন, মানে আমরা সবাই বাজে রকমের হিংসুটে।
একটা পরিবার এখনও হয়ে উঠতে পারিনি আমরা। আমি চাই চলচ্চিত্র পরিবার সত্যিই পরিবার হয়ে উঠুক। এটা শুধু মুখে না বলে কাজকর্মে যাতে সবাই প্রমাণ করে।
গ্লিটজ: ক্যারিয়ারে সহশিল্পীদের ঈর্ষায় আক্রান্ত হয়েছেন?
পরীমনি: এটা খুঁজতে গেলে আমি হতাশ হয়ে পড়ব। আমার অনেক কষ্ট লাগবে; ‘ও কেন এরকম করে আমার সঙ্গে।’ এই ভাবনা আমি কেন ভাবব। ওর সমস্যা নিয়ে ওই থাকুক। দরকার নেই এসব দেখার। (হা হা।) বি হ্যাপি।
গ্লিটজ: ক্যারিয়ারের শুরুতে প্রচুর চলচ্চিত্রে দেখা গেছে আপনাকে। সে তুলনায় এখন কাজ কমিয়ে দিলেন কেন?
পরীমনি: দর্শক ভালোবেসে একটা প্ল্যাটফর্মে তৈরি করে দেওয়ার পর সেই জায়গাটা আর নিজের থাকে না। সেখানে দর্শকদের কাছে জবাবদিহিতা করতে হয়। আমার বড় একটা দায়বদ্ধতা আছে দর্শকদের প্রতি। সেকারণে হুটহাট করে যেকোনো কাজ করতে পারব না।
গ্লিটজ: সেখানে জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়ার শংকায় কাজ করে?
পরীমনি: নাহ! দর্শক আমাকে আইডেন্টিফাই করেছে কোন রকম কাজে দেখতে চায়। আমিও সেটা বুঝে গেছি। ভালো কাজ তো প্রতিদিন হবে না; একটু সময় নিয়ে করতে হবে। আমার আসলে কোনো তাড়াহুড়া নেই।
গ্লিটজ: আপনাকে ঘিরে তৈরি হওয়া দর্শকদের এই রুচিবোধ কবে উপলব্ধি করতে পারলেন আপনি?
পরীমনি: ‘স্বপ্নজাল’ সিনেমাটা মুক্তির পর। ছবিটা করার পর অভিনয়ের ক্ষুধাটা হাজার গুন বেড়ে গেছে। আর অভিনয়ে নিজেকে বারবার আবিষ্কার করতে চাই।
‘নায়িকা’ চরিত্রটাকে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছি না। ফলে একটু আলাদাভাবে আমাকে নিয়ে নির্মাতারা ভাবছেন। আগে ছবির ‘হিরোইন’ চরিত্রটা করতাম। কিন্তু আমাদের চলচ্চিত্রে হিরোইনের আসলে কোনো চরিত্র থাকে না। দৌড়াদৌড়ি করি, নাচানাচি করি-এগুলো তো খুবই স্বাভাবিক চরিত্র। তার বিপরীতে দিন যায় আর দর্শকের রুচিবোধের পরিবর্তন আসে। এটাই নিয়ম।
গ্লিটজ: ‘স্বপ্নজাল’র আগে অভিনীত চলচ্চিত্রগুলো নিয়ে তাহলে আপনার অস্বস্তিবোধ আছে?
পরীমনি: নাহ। সবগুলোই আমার ভালো লাগার চলচ্চিত্র। কোনো ছবি নিয়ে কোনো অভিযোগও নেই। সবকিছুই জন্য আমি আজকের পরী। শুধু ‘স্বপ্নজাল’ আমাকে পরী বানায়নি। ‘স্বপ্নজাল’ আমার মধ্যে একটা পরিবর্তন এনেছে এটা সত্যি কিন্তু আগের ছবিগুলোও আমার জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
গিয়াসউদ্দিন সেলিম আমাকে কিভাবে চিনতেন? আমার কোনো কাজকে অস্বীকার করার কোনো জায়গা আসলে নেই। নিজের মনের মধ্যে সন্তুষ্টির জায়গা থাকে। ওই জায়গা থেকে ‘স্বপ্নজাল’কে আলাদা করে রাখতে চাই।