লিজ মিচেল: বনি এমের কণ্ঠ

সত্তর আর আশির দশকে দুনিয়া কাঁপানো ডিসকো ব্যান্ড বনি এম অনেক ভাঙাগড়ার মধ্যে দিয়ে পেরিয়ে এসেছে চার দশক। ‘ড্যাডি কুল’ আর ‘রাসপুতিন’ এর মত গানে আজও ভক্তদের আন্দোলিত করে চলেছেন এই গানের দলের প্রথম লিড ভোকাল লিজ মিচেল।

আইরিন সুলতানাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 July 2018, 11:55 AM
Updated : 13 July 2018, 12:30 PM

ক্যারিবীয় বংশোদ্ভূত এই ব্রিটিশ শিল্পী বৃহস্পতিবার পূর্ণ করেছেন জীবনের ৬৬ বছর। তার কণ্ঠের ‘ড্যাডি কুল’ বা  ‘রা রা রাসপুতিন’ যাদের মনে কৈশোর স্মৃতি ফিরিয়ে আনে, শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তাদের সুযোগ হবে সরাসরি তার পারফরমেন্স দেখার।

ভক্তদের কাছে বনি এম আর লিজ মিচেল যে অনেকটাই সমার্থক- ভরাট কণ্ঠের এই শিল্পী তা নিজেও জানেন।

কয়েক বছর আগে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “যদি বনি এমকে দেখতে টাকা খরচ করতে চান, তাহলে মঞ্চে আমাকে আনতেই হবে। আমি আর ফ্রাঙ্ক ফারিয়ানই বনি এমের কণ্ঠ।”

জার্মান গীতিকার ও মিউজিক প্রডিউসার ফ্রাঙ্ক ফারিয়ান ১৯৭৬ সালে চার শিল্পীকে নিয়ে গড়ে তোলেন ‘বনি এম’। লিজ মিচেলের সঙ্গে সেই দলে ছিলেন মার্সিয়া বেরেট, মেইজি উইলিয়ামস আর ববি ফেরেল।

আশির দশকের শেষ দিকে জনপ্রিয়তার উত্তুঙ্গে থাকা এই ডিসকো ব্যান্ডের লাইন আপে পরিবর্তন আসে। লিজ মিচেল নিজেও এক সময় দল ছাড়েন, পরে ফিরে আসেন আবার। আদি সদস্যদের মধ্যে এখন কেবল তিনিই আছেন বনি এমে।

লিজ মিচেলের ইউকে ফ্যানক্লাব পোর্টালে ক্যাসপার জ্যানসেন তুলে ধরেছেন এই শিল্পীর জীবনের খণ্ড কিছু চিত্র।

জ্যামাইকায় জন্ম নেওয়া লিজ মিচেলের পুরো নাম এলিজাবেথ রেবেকা মিচেল। ১১ বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে তিনি পাড়ি জমান ইংল্যান্ডে।  

সেই সময়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে তার নিজের ভাষ্য এরকম- “আমার কল্পনায় ছিল সবুজ ঘাসের বাগান আর দারুণ একটা সাদা বাড়ি, ঠিক যেমনটা জ্যামাইকাতে ছিল। কিন্তু ইংল্যান্ড আমাকে হতাশ করেছিল। এখানে সবকিছু ধূসর, কুয়াশাচ্ছন্ন আর ভেজা।” 

স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে ছোট একটি ব্যান্ডে গাইতেন লিজ মিচেল; মূলত পার্টি আর স্কুলের অনুষ্ঠানেই পারফর্ম করত ওই ব্যান্ড। সত্তরের শকের শুরুতে লিজ জার্মানিতে একটি মিউজিক্যাল শোতে অংশ নেন। ১৯৭৬ সালে ডাক পান ফ্রাঙ্ক ফারিয়ানের।

ওই বছর একটি টিভি অনুষ্ঠানে ‘ড্যাডি কুল’ গানের সঙ্গে দলীয় পারফরম্যান্সের মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ করে বনি এম। এরপর দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকে এই দলের নাম। খ্যাতির সঙ্গে আসে অর্থ।

বনি এমের লিড ভোকাল হিসেবে লিজ মিচেল গেয়েছেন একের পর এক হিট গান। আর বনি এম মাতিয়ে গেছে ইউকে টপ চার্ট। ‘রিভারস অব ব্যাবিলন’, ‘ব্রাউন গার্ল ইন দ্য রিং’, ‘হলি-হলিডে’ তখন বিশ্বের বহু দেশে তরুণদের মুখে মুখে।

 

আশির দশকের শেষে এসে বনি এমে শুরু হয় ভাঙন। ভক্তদের কাছে ১৯৮৬ সালই ছিল আদি বনি এমের শেষ বছর।

১৯৮৯ এর পর কিছুদিন এককভাবে শো করেন লিজ মিচেল। তিন বছর পর তাকে আবার বনি এমে ফিরিয়ে আনেন ফ্রাঙ্ক ফারিয়ান। নতুন তিন সদস্যকে নিয়ে সে এক অন্য বনি এম।

বনি এমের গান কণ্ঠে নিয়ে লিজ মিচেল এখনও বিশ্বময় সফর চালিয়ে যাচ্ছেন। গত জুনেই তিনি উপস্থিত হয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার দর্শকদের সামনে।

শ্রীলঙ্কার ডেইলি মিরর জানতে চেয়েছিল- ‘ড্যাডি কুল’ আর  ‘রাসপুতিন’ এর মত গানগুলো লিজ মিচেলের নিজের কাছ কতটা প্রিয়।

উত্তরে তিনি বলেন, “সত্যি বলছি, আমার কোনো বিশেষ পছন্দ নেই। আমি মনে করি প্রত্যেক গানের একটি নিজস্ব ভাষা রয়েছে, আছে নিজস্ব আবেগ। সেভাবেই প্রত্যেকটি গানকে উপস্থাপন করাটা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।”

কয়েক বছর আগে বিবিসিকে এক সাক্ষাৎকারে লিজ মিচেল বলেছিলেন, ধনী হওয়ার জন্য কখনো গান করেননি তিনি। গেয়ে গেছেন গান ভালোবাসেন বলে।

বৃহস্পতিবার জন্মদিনে ফেইসবুকে লিজ মিচেলকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অনেকেই।

একজন লিখেছেন, “বনি এম খুবই শক্তিশালী। আমি যতই এটা বুঝতে পারি, ততই উপলব্ধি করি… তোমার কাজ এবং তুমি আমাদের এই পৃথিবীকে আনন্দ দিয়েছ। যেমনটা আমাদের দিয়েছ, তার চেয়েও বেশি ভালবাসায় এবং আনন্দে থেকো তুমি।শুভ জন্মদিন প্রিয় লিজ। তোমাকে ভালবাসি।”