দুই দশক আগে রাজস্থানে সিনেমার শুটিংয়ে গিয়ে বেআইনিভাবে দুটি কৃষ্ণসার হরিণ শিকারের দায়ে বলিউড সুপারস্টার সালমান খানকে পাঁচ বছরের সাজা দিয়েছে ভারতের যোধপুরের একটি আদালত।
Published : 05 Apr 2018, 12:40 PM
যোধপুরের মুখ্য বিচারিক হাকিম দেব কুমার খাতরি বৃহস্পতিবার এই রায়ে সালমানকে কারাদণ্ড দেওয়ার পাশাপাশি ১০ হাজার রুপি জরিমানাও করেছেন।
রায়ে বিচারক বলেন, “আসামি যেহেতু একজন চলচ্চিত্র তারকা, মানুষ যেহেতু তাকে দেখে, তাকে অনুসরণ করে, আর আসামি যেভাবে নিষ্পাপ হরিণ হত্যা করেছে, আর সেটা যেহেতু অবৈধ শিকার…,” সেহেতু সালমানকে পাঁচ বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে।
এ মামলার অভিযোগ ছিল, ১৯৯৮ সালে ‘হাম সাথ সাথ হ্যায়’ সিনেমার শুটিংয়ে যোধপুরে গিয়ে অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করে সংরক্ষিত বনে বিরল প্রজাতির দুটি হরিণ শিকার করেছেন তিনি।
ওই সফরে সালমানের সঙ্গী অভিনেতা সাইফ আলী খান এবং অভিনেত্রী টাবু, সোনালি বেন্দ্রে ও নীলম কোঠারিকেও এ মামলার আসামি করা হয়েছিল। তবে ‘পর্যাপ্ত প্রমাণের অভাবে’ রায়ে বিচারক তাদের খালাস দিয়েছেন।
এনডিটিভির খবরে বলা হয়, ৫২ বছর বয়সী সালমান রায় শুনতে আদালতে এসেছিলেন তার কালো রঙের ‘লাকি’ শার্টটি পরে। কিন্তু দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরপরই তাকে পাঠানো হয় যোধপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে। ২০০৬ সালেও ওই কারাগারে পাঁচ রাত কাটাতে হয়েছিল তাকে।
রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত সালমানের দুই বোন আলভিরা ও অর্পিতা কান্নায় ভেঙে পড়েন। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে সালমান জামিনের আবেদন করতে পারবেন। তবে তার আগে তাকে কয়েক দিন কারাগারে থাকতেই হবে।
‘টাইগার জিন্দা হ্যায়’ আর ‘রেইস থ্রির’ এই নায়ককে যেখানে রাত কাটাতে হবে, সেই একই কারাগারে আছেন ভারতের অন্যতম প্রভাবশালী ধর্মগুরু আশারাম বাপু, যার বিরুদ্ধে এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে।
চোরা শিকারের এ মামলায় হিন্দি সিনেমার জনপ্রিয় নায়ক সালমানকে রাষ্ট্রপক্ষ আখ্যায়িত করে একজন ‘স্বভাবগত অপরাধী’ হিসেবে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, যোধপুরের কোঙ্কনি গ্রামে কৃষ্ণসার হরিণকে মারার অভিযোগ চারটি মামলা হয়েছিল সালমান খানের বিরুদ্ধে। ওই অভিযোগে ১৯৯৮ সালের ১৭ অক্টোবর তাকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছিল। কিন্তু তিনটি মামলায় সালমান খালাস পেয়ে যান।
এর মধ্যে দুটি মামলায় ২০০৬ সালে সালমানকে দোষী সাব্যস্ত করে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয় বিচারিক আদালত। কিন্তু রাজস্থান হাই কোর্ট ওই সাজা স্থগিত করে দেয় এবং ২০১৬ সালে সালমানকে খালাস দেওয়া হয়। হাই কোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকারের করা আপিল সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন।
অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করে হরিণ মারার অভিযোগে আরেকটি মামলা থেকে গতবছর সালমানকে খালাস দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার রায় হওয়া চতুর্থ মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল কোঙ্কনি গ্রামের বিষ্ণোই সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে। কৃষ্ণসার হরিণ তাদের কাছে পবিত্র প্রাণী হিসেবে বিবেচিত।
আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই গ্রামের বাসিন্দা প্রত্যক্ষদর্শীরা আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে আলাদা দুটি জায়গায় সালমানকে দুটি হরিণ মারতে দেখার কথা বলেন। সালমানের জিপসি গাড়িতে সাইফ, টাবু, সোনালি ও নীলমকেও দেখার কথা বলেন তারা।
অন্যদিকে সালমানের আইনজীবী শুনানিতে দাবি করেন, মামলা সাজাতে রাষ্ট্রপক্ষ ভুয়া সাক্ষী দাঁড় করিয়েছে।
মুম্বাইয়ে ২০০২ সালে সালমানের গাড়ি চাপায় ফুটপাতে শুয়ে থাকা গৃহহীন এক ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা এক মামলায় ২০১৫ সালে তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল একটি আদালত। পরে উচ্চ আদালত থেকে তিনি ওই মামলায় খালাস পান।
সালমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছিলেন। প্রথমে অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে মামলা হলেও পরে দণ্ডনীয় নরহত্যার (কাল্পেবল হোমিসাইড) অভিযোগে তার বিচার হয়।
সালমান আদালতে দাবি করেন, দুর্ঘটনার সময় গাড়ি চালাচ্ছিল তার ড্রাইভার। কিন্তু নিম্ন আদালতের বিচারক রায়ে বলেন, সালমানই ওই দুর্ঘটনা ঘটান এবং তখন তিনি মাতাল ছিলেন।
নিম্ন আদালতের রায়ের সাত মাসের মাথায় হাই কোর্ট এই যুক্তিতে সালমানকে খালাস দেয় যে, নিম্ন আদালত যেসব তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে এই অভিনেতাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে, সেগুলো যথেষ্ট নির্ভরযোগ্য নয়।
বলা হয়, বর্তমানে বলিউড শাসন করছেন তিন খান; সালমান খান তাদেরই একজন।
বলিউডের এই সুপারস্টারকে এ পর্যন্ত শতাধিক সিনেমায় দেখা গেছে নায়কের চরিত্রে। এর মধ্যে রোমান্টিক সিনেমা যেমন আছে, তেমনি আছে অ্যাকশন ফিল্ম। ভারতের বাইরে প্রতিবেশী বাংলাদেশ ও পাকিস্তানেও তিনি জনপ্রিয়।
হিন্দুস্থান টাইমস সালমান খানকে বর্ণনা করেছে, ব্যবসাসফল সিনেমা উপহার দেওয়া সবচেয়ে বড় ভারতীয় তারকা হিসেবে, যার পেছনে এই মুহূর্তে প্রায় ৭০০ কোটি টাকার লগ্নী রয়েছে প্রযোজকদের।
এক থা টাইগার, টাইগার জিন্দা হ্যায়, দাবাং, সুলতান, কিক, বাজরাঙ্গি ভাইজানসহ হালের বহু ব্যবসা সফল সিনেমা সালমান উপহার দিয়েছেন বলিউডকে।
চিত্রনাট্যকার সেলিম খানের তিন ছেলের মধ্যে সবার বড় সালমান সোশাল মিডিয়াতেও তুমুল জনপ্রিয়। ফেইসবুকে তাকে অনুসরণ করেন তিন কোটি ৬০ লাখ ভক্ত; আর টুইটারে তিন কোটি ২৫ লাখ।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো লিখেছে, রায় ঘোষণার পর সালমানকে যখন কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন কারাগারের প্রবেশপথে ছিল উৎসুক জনতা ভিড়। পরে পুলিশ লাঠিপেটা করে জনতাকে সরিয়ে নায়কের কারাপ্রবেশের পথ তৈরি করে।