মুক্তির আগে থেকেই প্রতিনিয়ত আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়ে যাচ্ছে যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত সিনেমা ‘ডুব’।সিনেমা মুক্তির বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে বেশ জল ঘোলা শুরু হয়েছে। যা নিয়ে খুবই বিরক্ত নির্মাতা হুমায়ূনপত্নী মেহের আফরোজ শাওন। এ উপলক্ষে রোববার দুপুরে তার ধানমন্ডির বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন।
Published : 19 Feb 2017, 08:10 PM
এই সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন,“গত বছরের শেষ দিকে ভারতের একটি প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ‘আনন্দ বাজার’ এর কাছ থেকে প্রথম ডুব ছবিটির পটভূমি সম্পর্কে জানতে পারি। আমাকে জানানো হয় ছবিটি হুমায়ূন আহমেদ এর জীবনীকে ঘিরে। এবং হুমায়ূন পরিবারের কিছু সদস্যের চরিত্রও ছবিটিতে উঠে এসেছে যার মধ্যে আমিও আছি। খবরটি আমাকে খুবই বিস্মিত করেছে।”
তিনি আরো বলেন,“তারপর পরই বাংলাদেশ এবং ভারতের প্রধান প্রধান সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট থেকে জানতে পারি যে আলোচ্য ছবিটি কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের জীবনের কিছু র্স্পশকাতর ঘটনাকে কেন্দ্র করে নির্মিত হয়েছে। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় ছবির মূল চরিত্রের অভিনয়শিল্পী ইরফান খান শুটিংয়ের আগে হুমায়ূন আহমেদের প্রচুর ভিডিও দেখেছিলেন। এবং সেগুলো দেখেই হুমায়ূন আহমেদের কথার্বাতা বলার ধরন-এ সব নিয়ে হোমওর্য়াক করেছিলেন। ছবির আরেক অভিনয়শিল্পী পার্ণো মিত্র তার ফেইসবুক পেজে দেওয়া স্ট্যাটাস এর উল্লেখ যে তার অভিনীত চরিত্রের নাম ‘মেহের আফরোজ শাওন’।(যদিও কিছুক্ষন পরে তা সম্পাদনা করে বাদ দেন।) সঙ্গত কারনেই আমি আশঙ্কা বোধ করি। কেননা ছবিটির পরিচালক তার কোনও মন্তব্যেই ছবিটিরি সাথে হুমায়ূন আহমেদের জীবনের সম্পৃক্ততার কথা স্পষ্টভাবে অস্বীকার করেননি।”
এক্ষেত্রে কোনো মানহানীর মামলা করার পরিকল্পনা রয়েছে কিনা জানতে চাইলে গ্লিটজকে শাওন বলেন,“আমি কিভাবে আসলে মানহানীর মামলাটা করবো। আমার সবকিছু তো এই রিপোর্টগুলো, আমার কাছে প্রাপ্ত যে তথ্য সেগুলো এই রির্পোটের ভিত্তিতে। আমি নিশ্চিত না হয়ে কিভাবে মামলা করবো। সেজন্য আগে আমি সেন্সরবোর্ডে যারা গুনীজন আছেন, যারা এই নীতিমালাগুলো ভালোমত জানেন তাদের হাতে এই বিষয়টা ছেড়ে দিয়েছি। তারা যদি দেখে সিদ্ধান্ত নেন তাহলে আমি শুরুতেই মামলা আইন এতকিছু করার আমি তো কোনো কারণ দেখছি না।”
এর আগে ২০১৭ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি যৌথ প্রযোজনার প্রিভিউ কমিটি ‘ডুব’ সিনেমাটি দেখে এবং তাদের পক্ষ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি অনাপত্তিপত্র পায় ‘ডুব’। কিন্তু মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর চলচ্চিত্র ‘ডুব’-এর বিরুদ্ধে সেন্সরবোর্ডে চিঠি দিয়েছিলেন মেহের আফরোজ শাওন। যার ফলশ্রুতিতে ১৬ ফেব্রুয়ারি কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই প্রিভিউ কমিটির দেয়া অনাপত্তিপত্র স্থগিত করে তথ্য মন্ত্রণালয়।
তবে ‘ডুব’ সিনেমাকে ঘিরে যে সমস্যা তৈরি হলো সেক্ষেত্রে এর সমাধানের পথ কী হতে পারে সে প্রসঙ্গে নিজের অবস্থানও তুলে ধরলেন শাওন।
গ্লিটজকে তিনি বলেন, “কেউ যদি হুমায়ূন আহমেদ নিয়ে ছবি বানান তার সর্বপ্রথম হুমায়ূন আহমেদকে ভালোমত জানা উচিত। উনি হুমায়ূন আহমেদ সম্পর্কে জানেন না। সুতরাং উনার শুরুটাই আসলে আমার কাছে মনে হয়েছে ঠিক হয়নি। তারপরেও, আজ থেকে একশত বছর পর, যারা হুমায়ূন আহমেদকে দেখেননি তারা কি হুমায়ুন আহমেদকে নিয়ে ছবি বানাবেন না, অবশ্যই বানাবেন। কিন্তু সেই বিষয়ে তো যথেষ্ট গবেষণা প্রয়োজন আছে,বারবার বলছি। সেই গবেষণা যদি উনি (মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী) করতেন এবং সেই গবেষণা করার জন্য হুমায়ূন আহমেদের বইগুলো, যে অংশগুলোতে হুমায়ূন আহমেদ নিজেকে উপস্থাপন করে লিখেছেন, সেগুলো যদি আসতো,পরিবারের সাথে অনুভুতি সেগুলো যদি আসতো, এগুলো একটা এথিক্যাল ব্যাপার এইটুকু আমি আশা করি একজন নির্মাতার কাছে। এগুলো যদি উনি ঠিকঠাক মত করতেন উনি যদি হুমায়ূন আহমেদকে আপত্তিকরভাবে উপস্থাপন না করতেন যেটা আমি আশঙ্কা করছি এবং যেই বিষয়টির কাহিনির পটভূমি যতটুকু বলা হচ্ছে সেখান থেকে আমি সেই আশঙ্কা করছি। তাহলে মনে হয় এরকম ঝামেলা হত না।”
যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত সিনেমা ‘ডুব’(নো বেড অব রোজেস) সিনেমায় কেন্দ্রিয় চরিত্রে অভিনয় করছেন ইরফান খান, পার্ণো মিত্র, রোকেয়া প্রাচী প্রমুখ। যেখানে একজন চলচ্চিত্র নির্মাতার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ভারতীয় তারকা ইরফান খান। তার স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন রোকেয়া প্রাচী। আর মেয়ের চরিত্রে অভিনেয় করেছেন তিশা। সিনেমায় তার মেয়ের বান্ধবীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন পার্ণো মিত্র।
যৌথ প্রযোজনার সিনেমাটি প্রযোজনা করেছেন বাংলাদেশের জাজ মাল্টিমিডিয়া, ভারতের এসকে মুভিজ ও ইরফান খানের প্রতিষ্ঠান আইকে।