দুপুর থেকে অভুক্ত থাকার পর বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা ফের শরীর চর্চা শুরু করে কারারক্ষীদের তাক লাগিয়ে দেন সালমান।
Published : 12 Feb 2025, 12:49 PM
কৃষ্ণসার হরিণ শিকারের অভিযোগে তিনদিন কারাগারে থাকতে হয়েছিল ভারতীয় অভিনেতা সালমানের খানকে। কারাকক্ষের চারদেয়ালের মধ্যে ওই ৭২ ঘণ্টা ভাইজানের কীভাবে কেটেছিল সে অভিজ্ঞতা তিনি তুলে ধরেছেন একটি পডকাস্টে।
এনডিটিভি লিখেছে ভাতিজা আরহান খানের ‘ডাম্ব বিরিয়ানি’ শিরোনামের পডকাস্টে এসে কারাবাসের অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলেছেন সালমান।
পডকাস্টে কথায় কথায় ভাইপোকে একজন ‘কেজো মানুষ’ হয়ে উঠতে কিছু পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।
ভাইজানের ভাষ্য, কাজের বিষয়ে কখনো অজুহাত দিতে হয় না।
“কাজের সময় বলতে নেই, ঘুমের প্রয়োজন। ক্লান্তির কথা বললে চলবে না। উঠে পড়তে হবে, যতই ক্লান্ত থাক না কেন। ঘুমোতে পারছ না? ঘুমিও না। এমন পরিশ্রম করো, রাতে ঘুম আসতে বাধ্য হবে।
“তাই পরিবার বা কাজের বিষয় এলে, কখনও হাল ছেড়ো না। লেগে থেকো। পরিবার ও বন্ধুদের পাশে সব সময়ে থাকবে।” “
তিনি নিজে দিনে দুই ঘণ্টা এবং মাসে একদিন সাত ঘণ্টা ঘুমান বলে জানিয়েছেন সালমান। এছাড়া সারা দিনে কাজের চাপ কম থাকলে, সেই ফাঁকেও ঘুমিয়ে নেন।
কারাবাসেও ঘুম নিয়ে একই অভিজ্ঞতা হয়েছিল সালমান।
তিনি বলেন, “জেলে থাকার সময় শুধুই ঘুমাতাম। কারণ ঘুমানো ছাড়া আমার আর কিছু করার ছিল না।"
পাঁচ বছরের দণ্ড নিয়ে রাজস্থানের যোধপুর কারাগারে সালমানকে যেতে হয়েছিল ২০১৮ সালে, তবে জামিন মিলেছিল কয়েকদিন পরেই। এর আগে ২০০৬ সালেও ওই ঘটনা সম্পর্কিত একই মামলায় কারাগারে পাঁচ রাত কাটাতে হয়েছিল তাকে।
মামলার অভিযোগ ছিল, ১৯৯৮ সালে ‘হাম সাথ সাথ হ্যায়’ সিনেমার শুটিংয়ে যোধপুরের কোঙ্কনি গ্রামে গিয়ে অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করে সংরক্ষিত বনে বিরল প্রজাতির দুটি কৃষ্ণসার হরিণ শিকার করেছেন তিনি।ওই সফরে সালমানের সঙ্গী অভিনেতা সাইফ আলী খান এবং অভিনেত্রী টাবু, সোনালি বেন্দ্রে ও নীলম কোঠারিকেও এ মামলার আসামি করা হয়েছিল। তবে ‘পর্যাপ্ত প্রমাণের অভাবে’ রায়ে বিচারক তাদের খালাস দেন।
কারাগারে সালমানের কয়েদি নম্বর ছিল ১০৬।
আদালতের রায়ে বন্দি হওয়ার পর কারাগারের খাবার না খেলেও এই অভিনেতা শরীরচর্চায় ক্ষান্ত দেননি কারাবাসেও।
কারাগারে থাকার প্রথম দিন সন্ধ্যায় সালমান ঘণ্টা খানেক শরীর চর্চা করেন বলে কারাধ্যক্ষ বিক্রম সিং জানিয়েছিলেন। রাতে জেলের খাবার খাননি সালমান। খানিকটা অস্থিরতার পর ঘুমান মেঝেতে কম্বল বিছিয়ে।
কারাধ্যক্ষ বিক্রম সিং টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেছিলেন, চিকিৎসক ডাকা হবে কী না সেটি নায়কের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেছিলেন ‘প্রয়োজন নেই’।
“মাঝরাতে তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। সকাল সাড়ে ৬টার দিকে জেলখানার সাইরেন বেজে উঠলে তার ঘুম ভাঙে। তবে এরপর আবার ঘুমিয়ে পড়েন তিনি, ওঠেন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে।”
পরদিন সকালে উঠে সালমান নাশতা করেননি জানিয়ে বিক্রম সিং বলেছিলেন, তিনি কারারক্ষীর কাছে জানতে চান, ক্যান্টিন থেকে তার জন্য খাবার আনা যাবে কি না?
“এরপর তিনি দুধ ও রুটি আনতে বললে তা আনা হয় তার জন্য। দুধ-রুটি খেয়ে শারীরিক কসরতে মন দেন এই অভিনেতা, সেলের ভেতরে হাঁটাহাঁটিও করেন তিনি। তবে দুপুরে তিনি খাননি।"
এছাড়া দ্বিতীয় দিন বিকালে বোন বোন অর্পিতা এবং অভিনেত্রী প্রীতি জিনতা দেখা করেন সালমানের সঙ্গে। দুপুর থেকে অভুক্ত থাকার পর বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা ফের শরীর চর্চা শুরু করে কারারক্ষীদের তাক লাগিয়ে দেন তিনি।
বিক্রম সিংয়ের ভাষ্য, “তিনি সত্যিই টাফ ম্যান, কারাগারে বন্দিরা যে পানি পান করেন, সালমানও সেটিই খেয়েছেন।”
এরপর সালমান গোসল করতে চাইলে কারারক্ষীরা সেই ব্যবস্থাও করে দেন।
সামলানের বিরুদ্ধে এই মামলাটি এখনো বিচারাধীন রয়েছে। এছাড়া এই হরিণ শিকারের ঘটনার জেরে মাথার ওপর গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোইয়ের খুনের হুমকি নিয়ে থাকতে হচ্ছে সালমানকে।
হরিণ শিকারের ‘বদলা নিতে’ ২০১১ সালে ‘রেডি’ সিনেমার শুটিংয়ের মাঝে সালমানকে হত্যার হুমকি দিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন লরেন্স বিষ্ণোই। যে হুমকি এবং চেষ্টা এখনো চলমান বলে ভাষ্য সালমান এবং মুম্বাই পুলিশের। এর মধ্যে সালমানকে খুনের চেষ্টার ঘটনা কয়েকবার সামনে এনেছে মুম্বাই পুলিশ। হত্যার উড়ো চিঠি দিয়েও সালমানের শত্রুরা চুপ থাকেননি, বান্দ্রায় তার গ্যালাক্সি অ্যাপার্টমেন্টের বারান্দার দিকে গুলিও ছোড়া হয়। ওই ঘটনায় কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এরপর থেকে বাড়ানো হয়েছে সালমানের নিরাপত্তাও।
বিষ্ণোই সম্প্রদায়ের মানুষ কৃষ্ণসার বা চিংকার হরিণকে পবিত্র বলে মনে করে, বলতে গেলে তারা পূজা করে।
যদিও যে কৃষ্ণসার হরিণ ‘শিকার’ নিয়ে সালমান খান গ্যাংস্টার লরেন্সের রোষানলে, সেই কাজটি নায়ক ‘করেননি’ বলে দাবি করেছেন তার বাবা চিত্রনাট্যকার সেলিম খান।
আরও পড়ুন
কারাগারে যেমন কাটছে সালমান খানের দিন
চোরা শিকারের দায়ে বলিউড তারকা সালমান খানের ৫ বছর জেল