বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনের অগ্রসৈনিক মামনুর রশীদের ১৯ তম জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ আয়োজন 'আলোর আলো নাট্যোৎসব' উদযাপিত হয়েছে বৃহস্পতিবার।
Published : 01 Mar 2024, 12:41 PM
বর্তমান বাস্তবতায় মানুষে মানুষে সম্পর্কের বাঁধন আলগা হলেও দেশের নাট্যজগতে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক বা গুরু-শিষ্য পরম্পরায় ভাঙনের ছাপ লাগেনি, বরং বেশ অটুট আছে বলে উপলব্ধি করেন নাট্যকার, নির্দেশক ও অভিনেতা মামুনুর রশীদ।
বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনের অগ্রসৈনিক মামনুর রশীদের ১৯তম জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ আয়োজন 'আলোর আলো নাট্যোৎসব' উদযাপিত হয়েছে বৃহস্পতিবার।
নাট্যদল আরণ্যক আয়োজিত ঢাকায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনের এই অনুষ্ঠানে কথা বলছিলেন মামুনুর রশীদ।
আরণ্যক নাট্যদলের এই প্রতিষ্ঠাতার জন্মসাল ১৯৪৮ ছিল লিপইয়ার। ২৯ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করায় তার জন্মদিন পালন করার সুযোগ আসে চার বছরে একবার। সে কারণে বৃহস্পতিবার জীবনের ৭৬ বছর পূর্ণ করলেও মামুনুর রশীদের জন্মদিন উদযাপনের সুযোগ মিলল ঊনবিংশতম বারের মত।
এই জন্মোৎসব ঘিরে নাট্যশালা প্রাঙ্গণ সাজান হয় ব্যানার, ফেস্টুন আর ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নানা উপকরণ দিয়ে। তিন দিনব্যাপী উৎসবের উদ্বোধন করেন বর্ষীয়ান অভিনেত্রী ফেরদৌসী মজুমদার।
উৎসবে মামুনুর রশীদ রচিত ও নির্দেশিত বিভিন্ন নাটকের অংশবিশেষ মঞ্চস্থ হয়। এছাড়া সংগীত, নৃত্য, সেমিনার, প্রদর্শনী ও থিয়েটার আড্ডায় জমজমাট হয়ে ওঠে উৎসব।
অনুষ্ঠানে মামুনুর রশীদ বলেন, "আমার খুব কষ্ট হয়, যখন দেখি গুরু-শিষ্য পরম্পরায় ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্কগুলো ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু নাটকের ক্ষেত্রে দেখেছি, আমি ছাড়াও যারা নাটকের শিক্ষক আছেন বা গুরু আছেন, এই গুরু-শিষ্যের পরম্পরার সম্পর্কটা এখনো সঠিক আছে। আমাদের সম্পর্কগুলো এখনো ঠিক পথেই আছে।"
নিজের শিষ্যদের সঙ্গে সম্পর্কের ধরণ নিয়ে এই নাট্যকার বলেন, “আজকে চঞ্চল (অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী) আমাকে একটা ছবি উপহার দিয়েছে, সে বলেছে এটা হলো গুরু দক্ষিণা।”
গুরু দক্ষিণার দিক থেকে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেন জানিয়ে মামুনুর রশীদ বলেন, “একবার আমার একটা দূরারোগ্য ব্যধি হয়েছে, আমার শিষ্যরা এসে পাশে দাঁড়িয়েছে। চিকিৎসার জন্য বহু লক্ষ টাকার প্রয়োজন ছিল। সেই পুরো টাকাটা দিয়েছিল আমার শিষ্যরা। তারা একদিনের মধ্যে পুরো টাকাটা সংগ্রহ করে পাঠিয়েছিল।"
সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মামুনুর রশীদ বলেন, "এখানে এত লোক এসেছে আমাকে ভালোবেসে, আমি মুগ্ধ হয়েছি।"
ফেরদৌসী মজুমদার বলেন, "মামুনুর রশীদের মতো এমন জীবন ঘনিষ্ঠ নাট্যকার কমই আছেন। মঞ্চে ওরা কদম আলী, জয়জয়ন্তী দেখেছি। টেলিভিশনে অনেক আগে তার একটা নাটকে অভিনয় করেছিলাম তার আর এখন কোনো রেকর্ড নেই।"
মামুনুর রশীদের জন্মদিন উদযাপনের তারিখ একদিন এগিয়ে আনা প্রয়োজন বলে মনে করেন ফেরদৌসী মজুমদার।
"চার বছর পর পর জন্মদিন আসে, সেটা অনেক সময়। আমরা কে কখন বেঁচে থাকি বলা কঠিন। তাই আমি বলবো একদিন আগে ২৮ ফেব্রুয়ারিও এরকম অনুষ্ঠান করলে কোনো ক্ষতি হয় না।"
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য দেন নাট্যকার রামেন্দু মজুমদার, চিত্রনায়ক আলমগীরসহ অনেকে। সভাপতিত্ব করেন আরণ্যকের প্রধান সম্পাদক ফয়েজ জহির।
অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী অনিমা মুক্তি গোমেজ, অনিমা রায়, চঞ্চল চৌধুরী, ফজলুর রহমান বাবু ও রাহুল আনন্দ।
বাঁশি বাজিয়ে শোনান উত্তম চক্রবর্তী। ওয়ার্দা রিহাবের পরিচালনায় নৃত্য পরিবেশন করে ধৃতি নর্তনালয়। বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তিপর্যায়ে মামুনুর রশীদকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানানো হয়।
আরণ্যক নাট্যদলের প্রধান সম্পাদক ফয়েজ জহির বলেন, "মামুনুর রশীদ জীবন আর শিল্পের সীমারেখাকে একাকার করে দিয়ে নাটককে তিনি পরিণত করেছেন আন্দোলন, সংগ্রাম আর স্বপ্নপূরণের হাতিয়ারে। মানুষের কাছে দায়বদ্ধ বাংলাদেশের নাট্যযোদ্ধারা তার সুরে সুর মেলায়। তার কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে শোনায় জাগরণের অভয়বাণী।"
শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৪টা এবং সন্ধ্যা ৭টায় বাংলাদেশ মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে হবে ‘রাঢ়াঙ’ নাটকের পরপর দুটি প্রদর্শনী। নাটকটি রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন মামুনুর রশীদ।
শনিবার বিকাল সাড়ে ৩টায় বাংলাদেশ মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে হবে থিয়েটার আড্ডা ‘নাট্যকর্মীদের মুখোমুখি মামুনুর রশীদ’।
সন্ধ্যা ৭টায় একই হলে প্রদর্শিত হবে নাটক ‘কহে ফেসবুক’। নাটকটি রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন মামুনুর রশীদ।