হলিউডে নারীদের অ্যাকশনে পথ দেখানো র‌্যাকেল ওয়েলশের চিরবিদায়

ষাটের দশকে চলচ্চিত্রে ‘যৌনতার প্রতীক’ হিসেবেও দেখা হত এই অভিনেত্রীকে।

গ্লিটজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Feb 2023, 02:06 PM
Updated : 16 Feb 2023, 02:06 PM

‘অ্যাকশন হিরো’দের দাপটের মধ্যে হলিউডে এই পথে নারীদের দিশারী ছিলেন তিনি, ষাটের দশকে চলচ্চিত্রে ‘যৌনতার প্রতীক’ হিসেবেও দেখা হত তাকে, সেই র‌্যাকেল ওয়েলশ আর নেই।

৯২ বছর বয়সে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় বুধবার তার জীবনাবসান হয়েছে বলে সিএনএন জানিয়েছে।

এই অভিনেত্রীর ম্যানেজার স্টিভ সয়্যার এক বিবৃতিতে বলেন, বুধবার সকালে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যানজেলেস মৃত্যু হয় ওয়েলশের। তিনি শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন।

ষাটের দশকে ‘ওয়ান মিলিয়ন ইয়ারস বি.সি.’ ও ‘ফ্যানট্যাসটিক ভয়েজ’র মতো সিনেমা দিয়ে খ্যাতির চূড়ায় ছিলেন র‌্যাকেল ওয়েলশ।

ভ্যারাইটি শো ‘হলিউড প্যালেস’ এবং সংগীত কিংবদন্তি এলভিস প্রেসলির ১৯৬৪ সালের সিনেমা ‘রোস্ট্যাবাউট’ এ একটি ছোট চরিত্রে অভিনয় দিয়ে টেলিভিশন ও সিনেমায় নাম লেখানো এই অভিনেত্রী ক্যারিয়ারে ৭০টি সিনেমা ও টিভি সিরিজে অভিনয় করেন।

রুপালি পর্দায় র‌্যাকেলের আবির্ভাবের দুই বছর পর মুক্তি পায় ‘ফ্যানট্যাসটিক ভয়েজ’ (১৯৬৬), যা রাতারাতি তাকে তারকাখ্যাতি এনে দেয়। এটি একটি বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, যেখানে একদল বিজ্ঞানীকে ক্ষুদ্র আকারে রূপান্তর করে অসুস্থ মানবদেহে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হয় এবং সেখান থেকে গল্প এগিয়ে চলে।

ওই বছরই মুক্তি পায় ‘ওয়ান মিলিয়ন ইয়ারস বি.সি.’ যা একটি প্রাগৈতিহাসিক পটভূমিতে নির্মিত সিনেমা। সেখানে র‌্যাকেল অভিনয় করেন গুহাবাসী নারী চরিত্র লোয়ানার ভূমিকায়। একটি চামড়ার বিকিনি পরা র‌্যাকেলের ছবি সিনেমাটির সাফল্যে বড় ভূমিকা রেখেছিল, যা পরবর্তী সময়ে তাকে একজন আন্তর্জাতিক ‘সেক্স সিম্বলে’ (যৌন আবেদনময়ী) পরিণত করে।

ওই বিকিনি পড়া সিনেমার পোস্টারটিই পরে আরেক বিখ্যাত সিনেমা ‘দ্য শশাংক রিডেম্পশন’র গল্পে একটি মুখ্য উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল।

ওই দুই সিনেমায় সাফল্যের পর র‌্যাকেলকে আর পেছন তাকাতে হয়নি। কয়েক দশকজুড়ে দীর্ঘ ক্যারিয়ারে টেলিভিশন ও সিনেমায় সমানতালে কাজ করে গেছেন তিনি।

১৯৬০ এর দশকের শেষের দিকে ‘ব্যানডোলেরো’, ‘১০০ রাইফেলস’ এর মতো ওয়েস্টার্ন সিনেমায় কেন্দ্রীয় নারী চরিত্র রূপায়ন এবং ওই সময়ে বর্ণবাদীদের মধ্যে বিতর্কের ঝড় তুলে তৎকালীন কৃষ্ণাঙ্গ তারকা ফুটবল খেলোয়াড় জিম ব্রনের বিপরীতে প্রেমের অভিনয় তার ক্যারিয়ারকে আরও বর্ণিল করেছে।

১৯৬৭ সালে ‘বিড্যাজেলড’ সিনেমায় লিলিয়ান চরিত্রে অভিনয় র‌্যাকেলের ক্যারিয়ারে সাফল্যের মুকুটে আরেকটি পালক যুক্ত করে। সিনেমাটি ২০০০ সালে আবারও নির্মাণ করা হয়, যেখানে মূল চরিত্রে ছিলেন এলিজাবেথ হারলে ও ব্রেনডন ফ্রেজার।

যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে জন্ম নেওয়া এই অভিনয় শিল্পী ১৯৭৩ সালে নির্মিত ‘থ্রি মাস্কেটিয়ার্স’ সিনেমায় কনস্টানস দে বোনাসিওঁ চরিত্রে অভিনয় করেন, যার স্বীকৃতি হিসেবে ওই বছর গোল্ডেন গ্লোবে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার অর্জন করেন। পরের বছর এই সিনেমার সিকুয়াল ‘দ্য ফোর মাস্কেটিয়ার্স: মিলাডি’স রিভেঞ্জে’ একই চরিত্রে অভিনয় করে চলচ্চিত্র বোদ্ধাদের প্রসংশা অর্জন করেন তিনি।

র‌্যাকেল ওয়েলশের উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে আরও রয়েছে ১৯৭০ এর দশকে নির্মিত ‘মায়রা ব্রেকিনরিজ’ সিনেমায় একজন ট্রান্সজেন্ডার অভিনেত্রীর চরিত্র চিত্রায়ন।

নব্বইয়ের দশকে বেশ কয়েকটি ‘সিটকমে’ (সিচুয়েশনাল কমেডি) কাজ করেন র‌্যাকেল ওয়েলশ। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘সাইনফেলড’, যেখানে তিনি নিজের চরিত্রই ফুটিয়ে তোলেন, একজন ‘লেজেন্ডারি ডিভা’ হিসেবে। এছাড়া ‘স্পিন সিটি’, ‘ইভিনিং শেড’ ও ‘সাবরিনা, দ্য টিনেজ উইচে’ও তাকে দেখা যায়।

একবিংশ শতকেও র‌্যাকেলের পথচলা থেমে থাকেনি। এই হলিউড কিংবদন্তি ২০০১ সালে মুক্তি পাওয়া ‘লিগ্যালি ব্লন্ড’ সিনেমায় রিস উইদারস্পুনের সঙ্গে পর্দায় উপস্থিত হন এবং মিসেস উইন্ডহ্যাম ভ্যানডারমার্ক চরিত্রে অভিনয় করেন।

র‌্যাকেল ওয়েলশের অভিনয় জীবন যতই এগিয়েছে তার সঙ্গে ‘সেক্স সিম্বল’ তকমাও ততোই এঁটে বসে।

২০০১ সালে ‘টরটিয়া সুপ’ সিনেমা মুক্তির সময় সিনেমা ডটকমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওয়েলশ বলেছিলেন, “একজন সেক্স সিম্বল হিসেবে খ্যাতি থেকে এক ধরনের তৃপ্তি মেলে এবং এটা ক্যারিয়ারে সাফল্য আনতেও ভূমিকা রাখে - কিন্তু একটা পর্যায় পর্যন্ত। এটা মানুষের কল্পনাকে মেঘাবৃতও করে। আপনি যে আরও কিছু করার যোগ্যতা রাখেন, সেটা তারা আর দেখতে পায় না।”

র‌্যাকেল ওয়েলশের সবশেষ পেশাদার কাজটি মুক্তি পায় ২০১৭ সালে, যেখানে তিনি ইউপিটিভির ‘ডেট মাই ড্যাড’ ধারাবাহিকে রোজা চরিত্রে অভিনয় করেন।

এই অভিনয়শিল্পী তার জীবনের পথচলায় একজন সফল উদ্যোক্তাও ছিলেন। গয়না, ত্বকের প্রসাধনী ও পরচুলা ব্যবসাতেও সময় দিয়েছেন তিনি।

র‌্যাকেলের ম্যানেজারের বিবৃতি অনুযায়ী, মৃত্যুর সময় তিনি দুই সন্তান রেখে গেছেন, ছেলে ড্যামন ওয়েলশ ও মেয়ে তানি ওয়েলশ।