অ্যাঞ্জেলিনা জোলি ও ব্র্যাড পিট, দুজনকে একসঙ্গে ডাকা হত ব্র্যাঞ্জেলিনা। এই তারকা দম্পতিকে বলা হত হলিউডের ‘পাওয়ার কাপল’।
এখন তারা আলাদা। বিচ্ছেদের ঘোষণা আসার ছয় বছর পর জানা গেল ওই সময়ে ব্যক্তিগত বিমানের ভেতরে ‘মাতাল’ ব্র্যাড চড়াও হন জোলির উপর। যার জের গড়ায় এফবিআইয়ের কাছে অভিযোগ দায়ের পর্যন্ত এবং ফলাফল বিচ্ছেদ।
সম্প্রতি মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইর এক এজেন্টের দেওয়া তথ্যে ওই বিমানে এই তারকা জুটির মধ্যে কী ঘটেছিল এবং কেনই বা তাদের দাম্পত্য সম্পর্ক পাকাপাকিভাবে চুকে গেল, তা তুলে এসেছে সিএনএনের এক প্রতিবেদনে।
নিয়মানুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের আকাশসীমার মধ্যে ঘটে যাওয়া যে কোন ঘটনাই দেশটির সরকারের বিচারের আওতাধীন। তাই অভিযোগের ভিত্তিতে জোলি-ব্র্যাডের ওই ঘটনার তদন্তে নামে এফবিআই।
কী ঘটেছিল সেদিন?
এফবিআইএর দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়, দু সপ্তাহের ছুটি কাটিয়ে ছয় বাচ্চাকে নিয়ে ব্যক্তিগত বিমানে চড়ে লস অ্যাঞ্জেলেসে ফিরছিলেন জোলি ও ব্র্যাড। হঠাৎই জোলির উপর ক্ষেপে যান ব্র্যাড। মাতাল অবস্থায় তাকে ধরে নিয়ে চলে যান বিমানের পেছনের অংশের একটি বিশ্রামকক্ষে। জোলির কাঁধ ধরে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে কড়া ভাষায় চিৎকার করেন বলেন, ‘তুমিই পরিবারকে ভেঙেচুরে দিয়েছো’।
সে সময় তাদের দুই সন্তান (ওই সময়ে অপ্রাপ্তবয়স্ক) ওই কক্ষের দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে ভয়ে কান্নাকাটি করে এবং বারবার জিজ্ঞাসা করে, ‘মা তুমি ঠিক আছ তো?”
দরজার ওপাশ থেকে ব্র্যাড সে সময়ে চিৎকার করে বলেন, “না, তোমাদের মা ঠিক নেই, তোমার মা আমাদের পরিবারকে ধ্বংস করে দিয়েছে।”
তখন এক সন্তান বলে, “মা নয়, শান্তি নষ্ট হচ্ছে তোমার কারণে।”
এ কথায় ওই কক্ষ থেকে বেরিয়ে এসে সন্তানের দিকেও ব্র্যাড তেড়ে গিয়েছিলেন বলে এফবিআইর প্রতিবেদনে বলা হয়।
তখন পেছন থেকে ব্র্যাডকে আটকানোর চেষ্টা করে শারিরীকভাবে হেনস্তার শিকার হন বলে জোলির অভিযোগ। এর প্রমাণ হিসেবে তিনি এফবিআইয়ের ওই এজেন্টকে তার আহত কনুইসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গার জখমের ছবিও দেখিয়েছিলেন।
ঘটনার শেষ এখানেই নয়, রাগারাগির এক পর্যায়ে ব্র্যাড জোলির গায়ে বিয়ারও ঢেলে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ জোলির।
প্রতিবেদনে উল্লেখ ছিল, লস অ্যাঞ্জেলসে পৌঁছানোর পরও ব্র্যাড স্ত্রী জোলি এবং বাচ্চাদের বিমান থেকে নামতে দেননি, সেখানে বাচ্চাদের নিয়ে জোলি অন্তত ২০ মিনিট আটকে ছিলেন।
এফবিআইকে জোলির অভিযোগ
এই ঘটনার পরই ব্র্যাডের বিরুদ্ধে এফবিআইয়ের কাছে অভিযোগ করেন জোলি। নির্যাতনের কথা অস্বীকার করলেও মদ্যপানের অভ্যাসের কথা স্বীকার করেন ব্র্যাড।
তদন্ত শেষে অবশ্য ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এই অভিনেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাটির মুখপাত্র লরা এমিলার সে সময়ে সিএনএনকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, এক দফা তদন্ত শেষে পরিস্থিতি বিবেচনায় এফবিআই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারা আর তদন্ত কাজ এগিয়ে নেবে না। এবং তা দু’পক্ষকেই জানানোর পর উভয়ের সম্মতিও মিলেছিল।
জোলির বিয়ে-বিচ্ছেদ
বিমানের ওই ঘটনার পর জোলি বিয়ে বিচ্ছেদের আবেদন করেন। এরপর ২০১৯ ক্যালিফোর্নিয়ার এক আদালতের রায়ে তাদের বিচ্ছেদ আইনি স্বীকৃতি পায়। কিন্তু সম্পত্তি এবং তাদের নাবালক সন্তানদের হেফাজত নিয়ে দুই তারকার মধ্যে আইনি লড়াই চলতে থাকে মাসের পর মাস।
অস্কারজয়ী জোলি অভিনেতা জনি লি মিলারকে বিয়ে করে ১৯৯৬ সালে প্রথম দাম্পত্য জীবনের সূচনা করেন। ওই বিয়ে টিকেছিল ২০০০ সাল পর্যন্ত। দ্বিতীয় বিয়ে করতে জোলি অবশ্য একবছরও দেরি করেননি। ওই সালেই অভিনেতে বিলি বব থরটনকে বিয়ে করেন, যে সংসার ভেঙে যায় ২০০৩ সালে। এরপর অবশ্য আর ছাদনাতলায় যাবেন না বলে জানিয়েছিলেন হলিউডি এই অভিনেত্রী।
টানা এক দশক ধরে প্রেম করেন ব্র্যাডের সঙ্গে। শেষমেশ ২০১৪ সালে ব্রাডকে বিয়ে করেন সংসার পাতেন, যা ভেঙে যায় মাত্র দুবছরের মাথায় ২০১৬ তে এসে।
এই ভাঙন প্রসঙ্গে জোলি ২০২০ সালে ভোগ ইন্ডিয়াকে বলেছিলেন, সন্তানদের মঙ্গলের জন্যেই পিটের থেকে আলাদা হচ্ছেন তিনি।
এদিকে ব্র্যাড তার মদ্যপান ছেড়ে দেওয়ার কথা ব্রিটিশ জিকিউকে জানিয়ে বলেছিলেন, তিনি ‘শান্তি’ খুঁজছেন।
ওই প্রকাশনা সংস্থাটিকে এই অভিনেতা বলেন, “জীবনে সবসময় আমি খুব একা বোধ করি। ছোটবেলায় একাকী বেড়ে উঠেছি এবং এখনও একা আমি।”