কৈশোরে ‘রোমিও-জুলিয়েট’ হয়ে সাড়া ফেলেছিলেন লিওনার্ড হোয়াইটিং ও অলিভিয়া হাসি; তবে সেই বয়সে নগ্ন দৃশ্যে অভিনয় করিয়ে তাদের উপর যৌন নিপীড়ন হয়েছে অভিযোগ করে পাঁচ দশক পর তারা ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করেছিলেন। তবে তাতে ফল আসেনি।
পাঁচ মাস আগে যৌন নিপীড়ন, যৌন নিগ্রহ এবং প্রতারণার অভিযোগ এনে যে মামলা তারা করেছিলেন, তাতে তাদের হার হয়েছে বলে বিবিসি জানিয়েছে।
১৯৬৮ সালে উইলিয়াম শেকসপিয়ারের অমর সৃষ্টি রোমিও ও জুলিয়েটকে হোয়াইটিং ও হাসি যখন পর্দায় এনেছিলেন, তখন লিওনার্ডের বয়স ছিল ১৬ বছর, আর হাসির বয়স ছিল ১৫ বছর। এখন লিওনার্ডের ৭২ বছর, হাসির ৭১ বছর।
সেই সময় তাদের নগ্ন দৃশ্যে অভিনয়ে বাধ্য করা হয়েছিল বলে অভিযোগ তুলে সিনেমাটির প্রযোজনা সংস্থা প্যারামাউন্ড পিকচার্সের কাছে ৫০ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের লস এঞ্জেলেসের আদালতে মামলা ঠুকেছিলেন হোয়াইটিং ও হাসি।
গত বৃহস্পতিবার লস অ্যাঞ্জেলেসের বিচারক অ্যালিসন ম্যাকেঞ্জি সেই মামলা খারিজ করে দিয়েছেন।
যে যে দৃশ্য নিয়ে তারকাদের অভিযোগ, সেটি যে ‘যথেষ্ট যৌন ইঙ্গিতমূলক’ ছিল না বলে মনে হয়েছে বিচারকের।
ম্যাকেঞ্জি বলেছেন, যে ক্ষেত্রে আইন লঙ্ঘনের ক্ষতিপূরণ দেওয়া যায়, এই মামলায় সে সব শর্ত পূরণের উপাদান নেই।
তবে মামলায় হোয়াইটিং ও হাসির প্রতিনিধিত্বকারী আইনজীবী সলোমন গ্রেসেন বিবিসিকে বলেন, তিনি মনে করেন এই রায় এই সমস্যার ভুল দিকে গেছে।
গ্রেসেন জানিয়েছেন, তার মক্কেলরা আপিল করতে চাইছেন এবং তিনি ফেডারেল আদালতে একটি আলাদা মামলাও দায়ের করতে চান।
যৌথ বিবৃতিতে হোয়াইটিং ও হাসি জানিয়েছেন, তারা ন্যয্য রায় পেতে আইনি লড়াই চালিয়ে যাবেন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আমরা ন্যায়বিচারের জন্য ৫৫ বছর অপেক্ষা করেছি। আমার মনে হয় আমাদের আরও অপেক্ষা করতে হবে।”
গ্রোসান বলেন, “আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে চলচ্চিত্র শিল্পে অপ্রাপ্তবয়স্কদের শোষণ এবং যৌনতার মোকাবেলা করতে হবে এবং দুর্বল ব্যক্তিদের ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে এবং বিদ্যমান আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে আইনি সমাধান করতে হবে।”
বিচারকের মামলা খারিজ দেওয়ার ঘটনার পর প্রযোজনা সংস্থা প্যারামাউন্ড পিকচার্সের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তারা কোনো মন্তব্য জানায়নি বিবিসিকে।
কী ছিল অভিযোগে?
গত শতকের ষাটের দশকের ‘রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট’ পরিচালনা করেছিলেন ফাঙ্কো জেফিরেল্লি, যিনি প্রয়াত হন তিন বছর আগে। আর হোয়াটিং ও হাসির মূল অভিযোগ তার বিরুদ্ধেই।
তবে ‘রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট’র দুই ব্রিটিশ তারকা যুক্তরাষ্ট্রের লস এঞ্জেলেসের আদালতে যে মামলা করেন, তাতে ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয় প্যারামাউন্ড পিকচার্সের কাছে।
এই দুই অভিনেতার ভাষ্য হল, প্রয়াত জেফিরেল্লি বলেছিলেন, ‘নগ্ন’ দৃশ্যে অভিনয় না করলে পুরো সিনেমাটাই ভেস্তে যাবে।
তাদের আরও অভিযোগ হল জেফিরেল্লি তাদের আগে না জানিয়েই নগ্ন দৃশ্যে অভিনয়ের জন্য বাধ্য করেছিলেন।
মামলায় যৌন নিপীড়ন, যৌন নিগ্রহ এবং প্রতারণার অভিযোগ আনা হয়। হোয়াইটিং ও হাসি বলছেন, তাদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তাতে তারা দুজনেই দশকের পর দশক ধরে মানসিক যন্ত্রণায় ভুগেছেন।
অভিযোগে বলা হয়, পরিচালক তাদের জানিয়েছিলেন যে বেডরুমের একটি দৃশ্যে তারা গায়ের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে অন্তর্বাস পরতে পারবেন। কিন্ত দৃশ্যধারণের সময় পরিচালক তাদের বলেন, শরীরে মেক-আপ ছাড়া অন্যকিছু থাকবে না। ক্যামেরা যে পজিশন থেকে দৃশ্যধারণ করবে তাতে তাদের নগ্নতা দেখা যাবে না বলেও পরিচালক আশ্বস্ত করেছিলেন। কিন্তু সিনেমায় হোয়াইটিংয়ের উন্মুক্ত পশ্চাৎদেশ এবং হাসির নগ্ন বক্ষ কিছু সময়ের জন্য দেখা যায়।
দুই অভিনয়শিল্পীর দাবি হল পরিচালকের চাওয়া মেনে নগ্ন হয়ে অভিনয় করা ছাড়া তাদের তখন কোনো উপায় ছিল না।
মামলায় প্যারামাউন্ট পিকচার্সের বিরুদ্ধে অপ্রাপ্ত বয়স্ক হিসেবে তাদের নগ্ন দৃশ্য প্রকাশের অভিযোগও আনা হয়।
এই অভিনয়শিল্পীদের আইনজীবী সলোমন গ্রেসেন বিবিসিকে বলেছিলেন, অপ্রাপ্তবয়স্কদের নগ্ন ছবি প্রচার পুরোপুরি বেআইনি।
ব্যবসা সফল চলচ্চিত্রটি মুক্তির পর থেকে যা আয় করেছে, তা বিবেচনা করেই তাদের দুর্ভোগের ক্ষতিপূরণ হিসেবে দুই অভিনয়শিল্পী ৫০ কোটি ডলার দাবি করেন।