কৈশোরে এই সিনেমায় নগ্ন দৃশ্যে অভিনয়ে বাধ্য হয়েছিলেন দাবি করে মামলা ঠুকেছেন লিওনার্ড হোয়াইটিং ও অলিভিয়া হাসি।
Published : 05 Jan 2023, 07:37 PM
উইলিয়াম শেকসপিয়ারের অমর সৃষ্টি রোমিও ও জুলিয়েটকে প্রায় সাত দশক আগে রুপালি পর্দায় রূপায়ণ ঘটিয়েছিলেন লিওনার্ড হোয়াইটিং ও অলিভিয়া হাসি। ধন্য ধন্য পড়েছিল তাদের নিয়ে, সফল সেই সিনেমা অস্কারও জয় করেছিল।
১৯৬৮ সালে সিনেমাটি যখন করেন, তখন দুজনই ছিলেন কৈশোরে, এখন ৭০ বছর বয়সে দাঁড়িয়ে তখনকার ঘটনা নিয়ে গুরুতর এক অভিযোগ তুললেন হোয়াইটিং ও হাসি।
সেই সময় তাদের নগ্ন দৃশ্যে অভিনয়ে বাধ্য করা হয়েছিল বলে এখন অভিযোগ তুলেছেন সিনেমাটির প্রধান দুই পাত্র-পাত্রী। এজন্য তারা সিনেমাটির প্রযোজনা সংস্থা প্যারামাউন্ড পিকচার্সের কাছে ৫০ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা ঠুকেছেন বলে বিবিসি জানিয়েছে।
গত শতকের ষাটের দশকের এই রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট পরিচালনা করেছিলেন ফাঙ্কো জেফিরেল্লি, যিনি তিন বছর আগে প্রয়াত হয়েছে। আর হোয়াটিং ও হাসির মূল অভিযোগ তার বিরুদ্ধেই।
তবে রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েটের দুই ব্রিটিশ তারকা যুক্তরাষ্ট্রের লস এঞ্জেলেসের আদালতে যে মামলা করেছেন, তাতে ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়েছে প্যারামাউন্ড পিকচার্সের কাছে।
মামলায় যৌন নিপীড়ন, যৌন নিগ্রহ এবং প্রতারণার অভিযোগ আনা হয়েছে। হোয়াইটিং ও হাসি বলছেন, তাদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তাতে তারা দুজনেই দশকের পর দশক ধরে মানসিক যন্ত্রণায় ভুগেছেন।
কিশোর বয়সে ওই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সময় পরিচালক জেফিরেল্লি তাদের আগে না জানিয়েই নগ্ন দৃশ্যে অভিনয়ের জন্য বাধ্য করেছিলেন।
অভিযোগে বলা হয়, পরিচালক তাদের জানিয়েছিলেন যে বেডরুমের একটি দৃশ্যে তারা গায়ের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে অন্তর্বাস পরতে পারবেন। কিন্ত দৃশ্যধারণের সময় পরিচালক তাদের বলেন, শরীরে মেক-আপ ছাড়া অন্যকিছু থাকবে না। ক্যামেরা যে পজিশন থেকে দৃশ্যধারণ করবে তাতে তাদের নগ্নতা দেখা যাবে না বলেও পরিচালক আশ্বস্ত করেছিলেন। কিন্তু সিনেমায় হোয়াইটিংয়ের উন্মুক্ত পশ্চাৎদেশ এবং হাসির নগ্ন বক্ষ কিছু সময়ের জন্য দেখা যায়।
দুই অভিনয়শিল্পীই দাবি করেন, পরিচালকের চাওয়া মেনে নগ্ন হয়ে অভিনয় করা ছাড়া তাদের তখন কোনো উপায় ছিল না।
রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট ১৯৬৮ সালে সেরা পরিচালক, সেরা চলচ্চিত্রসহ চারটি ক্যাটাগরিতে অস্কার পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পেয়েছিল। শেষপর্যন্ত সেরা চিত্রনাট্য ও রূপসজ্জার পুরস্কার দুটি ঝুলিতে পুরেছিল। চলচ্চিত্রটি দীর্ঘ দিন ধরে শেকসপিয়ারের নাটকের শিক্ষার্থীদেরও দেখানো হচ্ছে।
চার বছর আগে ২০১৮ সালে ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অলিভিয়া হাসি নগ্ন দৃশ্যে অভিনয় নিয়ে ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছিলেন।
এটা এমন কোনো বড় বিষয় নয় মন্তব্য করে তিনি তখন বলেছিলেন, “এ নিয়ে লিওনার্ডের কোনো সঙ্কোচ ছিল না। শুটিংয়ের মাঝামাঝিতে আমরা ভুলেই গিয়েছিলাম যে আমাদের শরীরে কোনো কাপড় ছিল না।”
সিনেমাটি যখন করেছিলেন, তখন লিওনার্ডের বয়স ছিল ১৬ বছর, আর হাসির বয়স ছিল ১৫ বছর। এখন লিওনার্ডের ৭২ বছর, হাসির ৭১ বছর।
এখন মামলার কারণ হিসেবে তাদের দুজনের ব্যবসায়িক ম্যানেজার টনি মারিওজ্জি বিবিসিকে বলেন, তখন তাদের বলার মতো অবস্থা ছিল না। এখন মিটু আন্দোলনসহ আরও নানা কিছু দেখা যাচ্ছে। আর এটা তো ঠিক, ওই ঘটনার জের তাদের জীবনভর টানতে হচ্ছে।
এতদিন আগের ঘটনার মামলা করার ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও সম্প্রতি ক্যালিফোর্নিয়ার আদালত কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সময়ের শর্ত শিথিল করায় তার সুযোগেই এই মামলা হয়েছে।
মামলায় প্যারামাউন্ট পিকচার্সের বিরুদ্ধে অপ্রাপ্ত বয়স্ক হিসেবে তাদের নগ্ন দৃশ্য প্রকাশের অভিযোগও আনা হয়েছে।
এই অভিনয়শিল্পীদের আইনজীবী সলোমন গ্রেসেন বিবিসিকে বলেন, অপ্রাপ্তবয়স্কদের নগ্ন ছবি প্রচার পুরোপুরি বেআইনি।
ব্যবসা সফল চলচ্চিত্রটি মুক্তির পর থেকে যা আয় করেছে, তা বিবেচনা করেই তাদের দুর্ভোগের ক্ষতিপূরণ হিসেবে দুই অভিনয়শিল্পী ৫০ কোটি ডলার দাবি করেছেন।
এই অভিযোগের বিষয়ে প্যারামাউন্ট পিকচার্সের পক্ষ থেকে এখনও কোনো বক্তব্য আসেনি।