‘ফেউ’ দেখা যাবে ২৯ জানুয়ারি রাত ১২টা ১ মিনিটে।
Published : 22 Jan 2025, 04:24 PM
শরণার্থীদের গল্পে তরুণ নির্মাতা সুকর্ন সাহেদ ধীমান ‘ফেউ’ নামের যে সিরিজটি নির্মাণ করেছেন সেটি দেখতে দর্শকদের আর অপেক্ষা করতে হবে দুই সপ্তাহ।
চরকি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ‘ফেউ’ আসছে ২৯ জানুয়ারি রাত ১২টা ১ মিনিটে।
এর মধ্যে সিরিজের ৪১ সেকেন্ডের টিজার প্রকাশ্যে এসেছে। যেখানে দেখা মিলেছে অভিনেতা তারিক আনাম খান, চঞ্চল চৌধুরী, মোস্তাফিজুর নূর ইমরান, তানভীর অপূর্ব, হোসেন জীবনসহ কয়েক জনের।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা সংলগ্ন সুন্দরবনের মরিচঝাঁপির ‘গণহত্যার’ ইতিহাস নিয়ে ওয়েব সিরিজ ‘ফেউ’ বানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিচালক ধীমান।
২০২৩ সালের নভেম্বরে খুলনার মোংলায় শুটিং শুরু হয় ফেউয়ের; যা শেষ হয় গেল বছরের জুলাইয়ে।
সুন্দরবনের ভেতরে দীর্ঘ সময়ের শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন অভিনয়শিল্পী তারিক আনাম খান, চঞ্চল চৌধুরী ও মোস্তাফিজুর নূর ইমরান।
সিরিজে কাজী চরিত্রে অভিনয় করেছেন তারিক আনাম খান। চরিত্র নিয়ে এই অভিনেতা বলেন, "কাজী চরিত্রটি ওই এলাকায় একজন প্রভাবশালী মানুষ। রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। সব জায়গায় তার কর্তৃত্ব আছে কিন্তু সেটা সে বোঝাতে চায় না।"
তারিক আনাম খানের জন্ম ও বেড়ে ওঠা খুলনা অঞ্চলে। তবে তিনি কখনও সুন্দরবন দেখেননি। এই সিরিজের শুটিংয় করতে গিয়ে প্রথমবারের মত সুন্দরবনের একদম ভেতরে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে তার।
সেখানে মানুষের ভালোবাসার কিছু কথা এখনো হৃদয়ে গেঁথে আছে জানিয়ে এই অভিনেতা বলেন, "আমাকে দেখে অনেকে বলেছেন, 'উরে বাবারে আপনারে এতদিন পরে দেখলাম, সেই ছোট বেলায় দিখিছি। টেলিভিশনে দেখতি যাতাম ৫ মাইল দূরি। উরি আল্লাহ এ কি দেখতিছি, আপনারে একটু ছুঁয়ে দেখি।' একদম সাধারণ ভাষায় হৃদয়ের কথা বলে দিল, খুব ভালো লেগেছে আমার।"
চঞ্চল চৌধুরী অভিনয় করেছেন সুনীল চরিত্রে। সিরিজে তিনি একজন ফটোগ্রাফার। এই সিরিজে যে ইতিহাসের প্রেক্ষাপট রয়েছে সেই ঘটনাগুলোর অনেক তথ্যই সুনীল তার ক্যামেরায় ধরে রেখেছেন বলে জানিয়েছেন চঞ্চল চৌধুরী।
শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা জানিয়ে এই অভিনেতা বলেন, "আমরা যখন শুটিং করেছি তখন ছিল প্রচণ্ড ঠাণ্ডা। মাস খানেক ধরে সুন্দরবনে শুটিং হয়েছে, যার মধ্যে আমি ছিলাম ২০ দিনের বেশি। রাতে যখন লঞ্চে ঘুমাতাম, খুব ঠাণ্ডা লাগত। আমি শীতের জামাকাপড় পরেই ঘুমাতাম। তবে ভয়ের বিষয় ছিল কুমির।
"আমাদের লঞ্চ যেখানে নোঙর করা থাকত, সেখানে সকালে জানালা দিয়ে মুখ বের করলেই কুমিরসহ বিভিন্ন পশু পাখি দেখা যেত। আমরা লঞ্চ থেকে শুটিং স্পটে যেতাম ছোট ছোট ট্রলারে। রাতেও শুটিং করতে হত। খুব কঠিন পরিস্থিতি ছিল।"
মার্শাল নামের এক চরিত্রে অন্যরকম একটা লুকে দেখা যাবে মোস্তাফিজুর নূর ইমরানকে। যে চরিত্রের প্রস্তুতি নিতে এই অভিনেতার দেড় বছর সময় লেগেছিল।
নূর ইমরান বলেন," 'ফেউ'র শুটিং অভিজ্ঞতা ভয়াবহ। সুন্দরবনের এমন সব জায়গায় কাজ করতে হয়েছে, যেখানে কখনও শুটিং হয়নি। ওসব জায়গা আমাদের শুটিং উপযোগী করে প্রস্তুত করতে হয়েছে।"
সিরিজটির গল্প নিয়ে নির্মাতা ধীমান বলেন, "১৯৭৯ সালে জানুয়ারি থেকে মে মাসের মরিচঝাঁপি গণহত্যার ইতিহাসের কিছুটা তুলে ধরা হয়েছে। সাতচল্লিশের দেশভাগের ফলে সৃষ্ট সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় দুই দফায় বাংলাদেশ থেকে অনেক মানুষ প্রাণে বাঁচতে আশ্রয় নেয় প্রতিবেশি দেশ ভারতে। আশ্রয় নেওয়াদের মধ্যে হিন্দু সম্প্রদায়ের নিম্নবর্ণের কিছু মানুষ ঘাঁটি গাড়েন দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার সুন্দরবনের মরিচঝাঁপিতে। সরকারি আশ্বাসে সেখানে আবাস গোড়ে তোলেন তারা। এর মধ্যে ১৯৭৯ সালে সেখানে ভোটের আগের রাজনীতি রূপ পাল্টায়। শুরু হয় উদ্বাস্তু উচ্ছেদে নানা ঘটনা।
“শরণার্থী উচ্ছেদ করতে মরিচঝাঁপিতে খাবার ও পানি বন্ধ করে দেওয়া হয়, ঘরে আগুন দেওয়া, নৌকা ডুবানোসহ নির্বিচারে মানুষ হত্যার ঘটনাও ঘটে। তৎকালীন রাজ্য সরকার ১৯৭৯ সালের ১৬ মে মরিচঝাঁপিকে উদ্বাস্তু শূন্য করতে সক্ষম হন। সরকারি হিসেবে, সেখান মোট নিহতের সংখ্যা মাত্র দুই জন হলেও বিভিন্ন বেসরকারি হিসেবে মৃতের সংখ্যা হাজার ছাড়ায়।”
এই ইতিহাসের অনুপ্রেরণায় ‘ফেউ’ বানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ধীমান।
ধীমান জানিয়েছেন, তিনি ২০১৬ সাল থেকে টানা পাঁচ বছর ধরে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা সংলগ্ন সুন্দরবন অঞ্চলের রাজনীতির গল্প ও তথ্য সংগ্রহ করেছেন। আর সিরিজ তৈরিতে সময় নিয়েছেন আট মাস।
"২০২২ সালের ডিসেম্বরে গল্পটা লক করি। চিত্রনাট্যের ১৭টা ড্রাফট করার পর আমরা কাজ শুরু করতে পেরেছি।"
সিরিজে মরিচঝাঁপি হত্যাকাণ্ড কতটা এসেছে সে বিষয়ে পরিচালকের ভাষ্য, "আমরা একটা সত্য ঘটনার ছায়া অবলম্বন করেছি, অনুপ্রেরণা নিয়েছি। রাজনীতি এই সিরিজের মূল কেন্দ্র।”
সিরিজে আরও অভিনয় করেছেন তানভীর অপূর্ব, হোসেন জীবন, তাহমিনা অথৈ, রিজভি রিজু, ফাদার জোয়া, বাবলু বোস, এ কে আজাদ সেতু।
আরও পড়ুন: