বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়লে সোমবার দুপুরে কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে সুমনকে।
Published : 29 Jan 2024, 04:30 PM
হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন কলকাতার জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী কবীর সুমন।
কলকাতার সংবাদমাধ্যম সংবাদ প্রতিদিন বলছে, সোমবার দুপুরে কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে সুমনকে। সেখানে তাকে সিসিইউতে রাখা হয়েছে।
বাড়িতেই তিনি অসুস্থবোধ করলে দ্রুত তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
চিকিৎসকরা বলছেন, সুমনের চিকিৎসার জন্য জরুরিভিত্তিতে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।
১৩ বছর পর গেল বছরই ঢাকায় এসে তিনদিন গান শুনিয়ে গেছেন সুমন। উপলক্ষ ছিল তার প্রথম অ্যালবাম ‘তোমাকে চাই’ এর তিন দশক পূর্তি।
১৯৯২ সালের এপ্রিল মাসে প্রকাশিত ‘তোমাকে চাই’ অ্যালবামের জন্য ভারতের গণ্ডি পেরিয়ে বাংলাদেশেও তুমুল আলোচিত হন কবীর সুমন। সেই থেকে অব্যাহত তার সংগীতের চলার পথ। তখন তিনি পরিচিত ছিল সুমন চট্টোপাধ্যায় নামে। পরে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়ে কবীর সুমন নাম ধারণ করেন এই শিল্পী।
‘তোমাকে চাই’ অ্যালবামের তিন দশক পূর্তিতে তাকে নিয়ে ‘তোমাকে চাই-এর ৩০ বছর উদ্যাপন’ শীর্ষক গানের আয়োজন করা হয় ঢাকায়।
এর আগে ১৯৯৬ সালে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর তৈরিতে তহবিল সংগ্রহের জন্য আয়োজিত কনসার্টে প্রথম ঢাকায় আসেন সুমন। এরপর বিভিন্ন সময়ে ঢাকায় এসে অনুষ্ঠান করে গেছেন এই শিল্পী।
বাংলা আধুনিক গানকে নতুন এক দিশা দেখানো ৭৫ বছর বয়সী কবীর সুমন এখন আর নতুন গানের অ্যালবাম বের না করলেও শাস্ত্রীয় সংগীত ও খেয়াল সংগীত নিয়ে মেতে থাকেন। সোশাল মিডিয়ায় খেয়াল সংগীত করে থাকেন প্রায়ই।
‘তোমাকে চাই’ ছাড়াও, ‘বসে আঁকো’, ‘ইচ্ছে হল’, ‘গানওয়ালা’, ‘ঘুমাও বাউন্ডুলে, ‘চাইছি তোমার বন্ধুতা’, ‘জাতিস্মর’, ‘পাগলা সানাই’, ‘যাব অচেনায়’, ‘নাগরিক কবিয়াল’, ‘আদাব’সহ আরও কিছু অ্যালবাম সুমন প্রকাশ করেছেন গত তিন দশক ধরে।
ছেলেবেলায় বাবার হাতে শাস্ত্রীয় সংগীতের তালিম নেওয়া সুমন একসময়ে রবীন্দ্রসংগীত ও আধুনিক বাংলা গান গাইতেন রেডিওতে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে পড়ালেখা করা এই শিল্পী জীবনের শুরুর দিকে কাজ করেন অল ইন্ডিয়া রেডিওতে এবং পরে ভয়েস অব আমেরিকা এবং ডয়েচে ভ্যালেতে।
মার্কিন লোকসংগীতশিল্পী ও নাগরিক অধিকার কর্মী পিট সিগারের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে পরে সাংবাদিকতা ছেড়ে একসময় হাতে গিটার ধরেন সুমন।
গানের অ্যালবাম ছাড়াও সুমন বেশি পরিচিত হন তার ওপেন কনসার্টগুলোয়। গিটার, পিয়ানো, মাউথঅর্গান বাজিয়ে গান গাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে দর্শকদের সঙ্গে কথোপকথনে সুমনের জুড়ি পাওয়া দুষ্কর।
সুমন সিনেমাতেও গান করেছেন, করেছেন চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালনাও। কলকাতার নির্মাতা সৃজিত মুখার্জির পরিচালনায় ‘জাতিস্মর’ সিনেমায় সংগীত পরিচালনার জন্য সুমন পান জাতীয় পুরস্কার।
একসময় স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছিলেন তিনি। নন্দীগ্রাম আর সিঙ্গুর আন্দোলনে দাঁড়িয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের পাশে। তারপর যাদবপুর কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের টিকিটে সংসদ সদস্য হন। কিন্তু বনিবনা না হওয়ায় পরে তৃণমূল ছাড়েন সুমন।