সিনেমার পালে ঝড়ো হাওয়া এনে দেবে ‘অপারেশন সুন্দরবন’: নূর

‘অপারেশন সুন্দরবন’ হলে মুক্তি পাচ্ছে ২৩ সেপ্টেম্বর।

গ্লিটজ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Sept 2022, 07:43 AM
Updated : 9 Sept 2022, 07:43 AM

সুন্দরবনে জলদস্যুদের তৎপরতার বিরুদ্ধে র‍্যাবের দুঃসাহসিক অভিযানের বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে নির্মিত সিনেমা ‘অপারেশন সুন্দরবন’ বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের পালে ঝড়ো হাওয়া বইয়ে দেবে বলে মন্তব্য করেছেন অভিনেতা আসাদুজ্জাসন নূর।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে সিনেমাটির পোস্টার উন্মোচন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন সাবেক সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী। পরে এ সিনেমা নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনেরও আয়োজন করা হয়।

র‍্যাব কো-অপারেটিভ সোসাইটি প্রযোজিত সিনেমাটি মুক্তি পাবে ২৩ সেপ্টেম্বর। গত বছর সিনেমার টিজার প্রকাশিত হয়েছিল, এ বছরে মুক্তি পায় ট্রেলার।

এ ধরনের একটি বিষয় নিয়ে সিনেমা তৈরির জন্য সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানিয়ে অভিনেতা ও সংসদ সদস্য নূর বলেন, “সাধারণত এই ধরনের কাজ নিয়ে তথ্যচিত্র বেশি হয়। এমন একটি গল্প, ঘটনা যে সিনেমায় তুলে ধরা যায়, সেটা ভাবার জন্য র‌্যাবের প্রতি আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।”

সিনেমার পোস্টার উদ্বোধন জীবনের নতুন অভিজ্ঞতা বলে জানান আসাদুজ্জামান নূর। তিনি বলেন, “বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেছি, তবে এই প্রথম কোনো পোস্টার উন্মোচন করলাম। বেশ বড়সড় এবং খুব আকর্ষণীয় একটি পোস্টার।“

‘অপারেশন সুন্দরবনের’ ট্রেলারের প্রশংসা করেন মঞ্চ আর টেলিভিশনের এক সময়ের দাপুটে এই অভিনেতা। বলেন, “বিশ্বমানের ট্রেলার মনে হয়েছে। ইদানিং দেশের সিনেমার পালে বাতাস লেগেছে। এই সিনেমা ঝড়ো হাওয়া এনে দেবে।”

অপারেশন সুন্দরবনে অভিনয় করেছেন সিয়াম আহমেদ, নুসরাত ফারিয়া, জিয়াউল রোশান, মনোজ প্রামাণিক, রিয়াজ আহমেদ, তানজিল তুহিন, শতাব্দী ওয়াদুদ, তাসকিন আহমেদসহ আরও অনেকে।

সিনেমায় কাজ করতে গিয়ে টিমের সবাই একটি পরিবারের মত হয়ে গিয়েছিল জানিয়ে অভিনেতা সিয়াম আহমেদ বলেন, “মূল কাজ তো আগেই শেষ। কিছু দিন আগে আমি আর নুসরাত এই ছবির শেষ গানের শুট করতে গিয়েছি। শেষ দিন। শেষ দৃশ্যের কাজ চলছে…।

“যে মুহূর্তে দৃশ্যটি শেষ হল, আমি আর নুসরাত একে অপরের দিকে তাকিয়ে ছিলাম চুপচাপ, বেশ কিছুক্ষণ। দুজনেই প্রায় একসঙ্গে বলে ফেললাম, ‘শেষ! শেষ হয়ে গেল আমাদের এই জার্নি?’ আমরা দুজন দুজনে এতটা অভ্যস্ত হয়ে গেছি, টিমের সঙ্গে এতটা মিশে গেছি। সেটা বলে বোঝানো যাবে না।”

নুসরাত ফারিয়া কথা বলতে গিয়ে আপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, “আজ আমি অনেক ইমোশনাল। যে কোনো সময় কেঁদে ফেলতে পারি। প্রায় তিন বছর পর আমি আবার নতুন ছবি মুক্তির খবর নিয়ে আপনাদের সামনে এসেছি। …এত বড় একটি সিনেমার অংশ হতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে হচ্ছে। এই ছবিটির শুরু থেকে এ পর্যন্ত র‌্যাব যে পরিমাণ এফোর্ট দিচ্ছে, সেটা অবিশ্বাস্য।”

কাজের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে এই অভিনেত্রী বলেন, “এই ছবির শুটিংয়ে যখন আমরা গভীর সুন্দরবনে ইউনিট ফেলি, তখন কোনো নেটওয়ার্ক ছিল না ফোনে। টানা ৩৫ দিন আমরা বিচ্ছিন্ন ছিলাম দুনিয়া থেকে। এই ৩৫ দিন আমি আমার বাবা-মায়ের সঙ্গেও কথা বলতে পারিনি।

“তখন আমাদের ইউনিটটাই ছিল আমার ফ্যামিলি। আমরা এতটাই আপন হয়ে গেছি, সেই সম্পর্কের টান এখনও আমরা ফিল করি। এই মুভিটা এবং আমার ক্যারেক্টারটা সারাজীবন আমার সাথে থেকে যাবে।”

চিত্রনায়ক রোশান বলেন, “এখনো রাস্তায় র‌্যাবের গাড়ি দেখলে মনে হয় এটা আমাদের টিমের গাড়ি। এই সিনেমায় কাজ করতে গিয়ে কালো ইউনিফর্মের প্রতি এক ধরনের দুর্বলতা তৈরি হয়েছে।”

চিত্রনায়ক রিয়াজ বলেন, “সাড়ে ছয় বছর পর আমার অভিনীত সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে। আমি যে ইউনিফর্ম পরে কাজ করেছি, তার সম্মান রাখার চেষ্টা করেছি।”

সিনেমার কলাকুশলীরা ছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন র‍্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, “সুন্দরবন আমাদের অহংকার। কিন্তু এখানে মুঘল আমল থেকে ছিল দস্যুদের অভয়ারণ্য। বর্তমানে সুন্দরবন দস্যুমুক্ত হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে।“

সুন্দরবনকে দস্যুমক্ত করতে র‍্যাব কীভাবে কাজ করছে- তা তুলে ধরে এই কর্মকর্তা বলেন, “র‍্যাব পাঁচটি প্রক্রিয়ায় কাজটি করেছে। র‍্যাব সরাসরি অভিযান চালিয়েছে, বিশেষ সক্ষমতা অর্জন করেছে, গোয়েন্দা কার্যক্রম বাড়িয়েছে, স্থলভাগে দস্যুদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে। ২০১৬ সালে দস্যুরা আত্মসমর্পণ শুরু করে। ২০১৮ সালে দস্যুদের ৩২টি বাহিনী আত্মসমর্পণ করে।”

খন্দকার আল মঈন সিনেমা নির্মাণের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, “সুন্দরবনের দস্যুরা চেয়েছিল স্বাভাবিক জীবন। আমরা সেটা করেছি। প্রধানমন্ত্রী অর্থ সহায়তা দিয়েছেন। ‘সুন্দরবনের হাসি’ প্রকল্প চালু করেছি আমরা। সেখানে মেয়েদের সেলাই মেশিনের কাজ করানো হয়। ছেলেদের ড্রাইভিং শেখানো হয়েছে। দস্যুদের মোটিভেশনাল ক্লাস নিয়েছি, যেন পুনরায় তারা দস্যুতায় ফিরে না যায়।

“সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করার এই প্রক্রিয়া সহজ ছিল না। নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে আমাদের। সেই চ্যালেঞ্জগুলোই পর্দায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। তারপরও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি এটা যেন ডকুমেন্টরি না হয়ে যায়। সিনেমা হতে যা যা উপাদান লাগে তার সবই অপারেশন সুন্দরবন আছে।”

এ সিনেমার জন্য পরিচালক দীপঙ্কর দীপনের পরিশ্রমের কথা তুলে ধরে খন্দকার আল মঈন বলেন, “তিনি টানা ছয় মাস সুন্দরবনে কাটিয়েছেন, তারপার থিসিস পেপার জমা দিয়েছেন, এরপর কাজ শুরু হয়েছে।”

তবে পরিচালক দীপন অন্য একটি সিনেমার কাজে থাকায় পোস্টার উন্মোচন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেননি।

দর্শকদের হলে গিয়ে ‘অপারেশন সুন্দরবন’ দেখার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন শিল্পী ও কলাকুশলীরা।