মহামারীর ক্রান্তিকাল পেরিয়ে তিন বছর পর বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থার আয়োজনে মঞ্চে ফিরল ‘জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত উৎসব'।
জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে তেত্রিশতম এই উৎসবের সূচনা হয় শুক্রবার। রাজধানীর সেগুন বাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে দুই দিনের উৎসব চলবে তিনটি অধিবেশনে।
এবারের উৎসব উৎসর্গ করা হয়েছে মহামারীতে প্রাণ হারানো দেশের শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, কবি ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের স্মৃতির উদ্দেশে।
আয়োজক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পীযূষ বড়ুয়া স্বাগত বক্তব্যে বলেন, "শেষবার এই উৎসব করেছি ২০১৯ সালে, মানে সরাসরি মঞ্চে। ২০২০ সালে পারিনি কোভিড মহামারীর কারণে। ২১ সালে করেছি সীমিত পরিসরে অনলাইনে। ফলে এবারের উৎসবটি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।"
উৎসবে সম্মাননা দেওয়া হয় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের দুই শব্দসৈনিক আশরাফুর আলম ও সংগীতশিল্পী রফিকুল আলমকে।
তাদের হাতে সম্মননা স্মারক ও অর্থ মূল্য তুলে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।
তিনি বলেন, "মহান মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিকগণ মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্নভাবে উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করেছেন। সেরকম দু'জন শব্দসৈনিক আশরাফুল আলম ও রফিকুল আলমকে সম্মাননা প্রদান নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য।"
এ ধরনের আয়োজন দেশের সংগীতাঙ্গনকে সমৃদ্ধ করছে মন্তব্য করে প্রতিমন্ত্রী খালিদ বলেন, “সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সবসময় বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থার আয়োজনে সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করে আসছে।"
প্রতিমন্ত্রী এ সময় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সংগঠনটিকে দুই লাখ টাকা অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দেন।
সংগঠনের সভাপতি তপন মাহমুদের ভাষ্য, নবীণ শিল্পীদের পরিচয় করিয়ে দেওয়াই এ আয়োজনের উদ্দেশ্য।
তিনি বলেন, "১৯৮৮ সাল থেকেই এই সংস্থার মূল উদ্দেশ্য নবীন শিল্পীদের প্রমোট করা। সেই ধারা অব্যাহত থাকছে এবারের উৎসবেও। আমাদের সময়ে শুধু বিটিভি ছিল। বা বেতার। ফলে আমরা সেখানে গাইলে পুরো বাংলাদেশ কাভার হত। এখন অসংখ্য চ্যানেল, কিন্তু শিল্পীরা আগের সেই এক্সপোজার পান না। অথচ আমরা চাই নতুনরা গাইবার সুযোগ পাক, প্রচার পাক।… নতুন শিল্পীরা অনেক সাহস পান।"
শুক্রবার উদ্বোধনী পর্বে অংশ নেয় পাঁচটি সংগীত দল। এরা হল- সুরতীর্থ, সঙ্গীতভবন, বিশ্ববীণা, বুলবুল লতিকলা একাডেমী (বাফা) ও উত্তরারণ।
'ও আমার দেশের মাটি তোমার পরে ঠেকাই মাথা', 'তোমার সুরের ধারা ঝরে যেথায় তারই পরে’সহ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রেম-পূজা ও দেশের গান গেয়ে শোনান শিল্পীরা।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে বিকাল ৫টা থেকে আবৃত্তি ও সংগীতানুষ্ঠান হওয়ার কথা রয়েছে। দ্বিতীয় দিন শনিবারও একই মঞ্চে বিকেল ৫টা থেকে হবে আবৃত্তি ও সংগীতানুষ্ঠান।
উৎসবে সারা দেশ থেকে প্রায় দুইশ শিল্পী একক ও দলীয় পরিবেশনায় অংশ নিচ্ছেন।
তাদের মধ্যে আছেন বুলবুল ইসলাম, ফাহিম হোসেন চৌধুরী, রোকাইয়া হাসিনা, অদিতি মহসিন, ড. অরূপ রতন চৌধুরী, চঞ্চল খান, লিলি ইসলামসহ আরও অনেকে।
আর আবৃত্তি করবেন আশরাফুল আলম, জয়ন্ত রায়, বেলায়েত হেসেন, মাহমুদা আখতার ও রেজিওয়ালী লীনা।
সবার জন্য উন্মু্ক্ত অনুষ্ঠানের সকালের পর্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন তানজিনা তমা।