রিসাইক্লিংয়ে নতুন মাত্রা আনবে প্লাস্টিক টাইলস?

পণ্যটি বাজারজাত করার আগে যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করার পরামর্শ দিয়েছেন এক পরিবেশবিদ।

মরিয়ম সুলতানাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 June 2023, 03:27 AM
Updated : 6 June 2023, 03:27 AM

টাইলস বলতেই চোখে ভেসে ওঠে নান্দনিক নকশার ঘরের মেঝে কিংবা দেয়ালের ঝা-চকচকে সিরামিকস। কিন্তু প্লাস্টিক থেকেও যে টাইলস তৈরি হয়, তা হয়ত অনেকেরই অজানা।

দেশে তেমন টাইলস প্রথমবারের মতো হাজির করেছে রিসোর্স ইন্টিগ্রেশন সেন্টার (রিক) নামের একটি বেসরকারি সংস্থা। প্রতিষ্ঠানটি সাসটেইনেবল এন্টারপ্রাইজ প্রজেক্টের (এসইপি) আওতায় পণ্যটি ব্যবহার উপযোগী করেছে।

এ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক আশফাকুর রহমান আশার সঙ্গে সোমবার কথা হচ্ছিল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে।

পরিবেশ মেলায় নিজেদের স্টলে প্লাস্টিক টাইলস দেখিয়ে তিনি বলেন, “এই টাইলস তৈরিতে ভার্জিন প্লাস্টিক নয়, আসলে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবহার করা হয়েছে। পুরান ঢাকায় গেলেই আমরা দেখতে পাব- প্লাস্টিকের বিশাল রিসাইকেল ইন্ডাস্ট্রি। কিন্তু ওখানে ওরা বোতল থেকে আবার বোতল তৈরি করে, পলিথিন থেকে পলিথিন বানায়।

“কিন্তু আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে বর্জ্যটাকে কমাতে হবে। সেক্ষেত্রে টাইলস হচ্ছে একটা সলিউশন। কারণ এত প্লাস্টিক তো ফেলে দেওয়া যাবে না। অন্ততপক্ষে ২৫-৩০ বছর আটকে থাকবে। তাছাড়া এটার রিসেল ভ্যালু আছে।”

এই টাইলস কি প্রচলিত টাইলসের বিকল্প?

আশা বললেন, “এটা অলরেডি বিল্ডিং ম্যাটেরিয়াল। কিন্তু আমরা আপাতত ছাদ বাগান, পার্কিং এরিয়া, ফুটপাত আর পার্কের ওয়াকওয়েতে ব্যবহার করাটা সাজেস্ট করছি। এতে কোনো প্রকার স্লিপ কাটবে না।

“পাশাপাশি গ্রাম-গঞ্জে বিল্ডিং বা টিনের ঘরের চারপাশে এটা দেওয়া যায়। গ্রামের টয়লেটে যাওয়ার পথে বা টয়লেটের সামনে স্যানিটেশনে জন্য যে জায়গা থাকে, সেখানেও এটা বিছিয়ে দেওয়া যেতে পারে।”

কিন্তু টাইলস তৈরির জন্য এত প্লাস্টিক কোথায় মিলবে?

বিশ্ব ব্যাংকের এক গবেষণার বরাত দিয়ে তিনি বললেন, “বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ প্লাস্টিক রিসাইকেল করা হয় না। সব ওয়েস্ট রিসাইকেল হয় না। চকলেট, আইসক্রিমের প্যাকেট, চিপস- পিকাররা কালেক্ট করে না। আমরা এই ছোট ছোট সিঙ্গেল ওয়েস্ট প্লাস্টিক ব্যবহার করতে চাই।

“পিকাররা যখন বুঝতে পারবে যে ওগুলারও ভ্যালু আছে, ওরা তখন কালেক্ট করবে। আর এটা ওটা কালেক্ট করলেই শতভাগ কালেক্ট হবে এবং পরিবেশে যাবে না। আমাদের আল্টিমেট টার্গেট হলো পরিবেশকে রক্ষা করা।”

রিক কর্মকর্তা আশা জানালেন, অনেকদিন ধরেই প্লাস্টিক রিসাইকেল করার বিষয়ে তারা ভাবছিলেন। ২০২০ সালে প্রকাশিত বিশ্ব ব্যাংকের একটি গবেষণা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তারা এই উদ্যোগ হাতে নেন, যাতে সহযোগিতা করছে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন-পিকেএসএফ।

“বিশ্ব ব্যাংক তাদের রিপোর্টে বলল, সাসটেইনেবল কিছু বানাতে। আমরা তখন চারটা আইটেম পেলাম। টাইলস, ফুয়েল, ইট এবং প্লাস্টিকের বোর্ড। কিন্তু ফুয়েলে অনুমতি পাওয়া যাচ্ছে না। বোর্ডে অনেক খরচ। পরে আমরা টাইলস আর ইট ট্রাইয়ের কথা ভাবলাম।”

রিক আপাতত সিটি কর্পোরেশন, বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার জন্য ১১০০টি প্লাস্টিক টাইলস তৈরি করেছে, যেগুলোর প্রতিটির দাম পড়বে ৪০ টাকা করে।

“কিন্তু মানুষ যখন এটা অর্ডার দেওয়া শুরু করবে, তখন দাম কমে আসবে,” বলেন আশা।

ব্যবহারে ঝুঁকি কতটা?

আশার সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল, তখন এ স্টলে এক ক্রেতা এসে জানতে চাইলেন, “এই টাইলসের দাম কি নরমাল টাইলসের চেয়ে কম? এটায় কি কোনো ঝুঁকি নাই?”

আশা উত্তর দিলেন, “টাইলসের সাথে তুলনা করলে হবে না। কারণ টাইলস এক জিনিস, সিরামিক আরেক জিনিস। আপনি তুলনা করবেন প্লাস্টিকের অন্য কোনো টাইলস আছে কি না। 

“সিরামিকের কোনো রিসাইকেল ভ্যালু নাই, এইটার আছে। সিরামিকের ওজন বেশি হওয়ায় তার ক্যারিং কস্ট অনেক বেশি। তাছাড়া ফুয়েল খরচ আছে। এখানে সেসব নাই।”

এসবের প্রতিবর্গ সেন্টিমিটারে ৬৩ কেজি জিনিসের ভার নিতে পারবে জানিয়ে রিকের এই কর্মকর্তা বললেন, “আগুন লাগলে ঝুঁকি সব জায়গায়ই আছে, এখানেও থাকবে। এগুলো কিন্তু ১৭০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে গলবে। তাছাড়া সারফেসে যখন এটি লাগাবেন, তখন এটার সক্ষমতা আরও বাড়বে।”

বিষয়টি নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহমাদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, “আমিও দেখেছি এটা আজ। রিসাইকেল করে রিইউজ করা গেলে সেটা তো খুবই ভালো। যত্রতত্র পড়ে থাকা প্লাস্টিকের দীর্ঘস্থায়ী একটা সমাধান হবে।

“কিন্তু তাপমাত্রার একটা বিষয় আছে এখানে। ওরা বলছে গাড়ি পার্কিংয়ে ব্যবহার করতে। কিন্তু যদি এটা গাড়ির ভারে কোনোভাবে ভেঙে যায় তাহলে ক্ষতি তো হবেই, মাইক্রোপ্লাস্টিকও তৈরি হবে অনেক। সেজন্য সরকার থেকে সকল প্রকার অনুমোদন নিয়ে এটার কোয়ালিটি নিশ্চিত করতে হবে আগে।”

অধ্যাপক কামরুজ্জামান বলেন, “এটা সতর্কতার সাথে ব্যবহার করতে হবে। যেখানে আগুনের ঝুঁকি কম বা নাই, সেখানে ব্যবহার করা যায়। কারণ এটা কতটুকু তাপমাত্রা সহনীয়, সে বিষয়ে ভাবতে হবে।”

পণ্যটি বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাতের আগে যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করারও পরামর্শ দেন তিনি।