শীতের আগেই ঢাকার বাতাসে ‘বিপদ’

বর্ষা মৌসুম শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ‘অস্বাস্থ্যকর’ হয়ে উঠেছে রাজধানীর বাতাস; এরই মধ্যে ঢাকার বাতাসে ভাসমান বস্তুকণার উপস্থিতি সহনীয় মাত্রার চেয়ে কয়েকগুণ বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর।

ওবায়দুর মাসুমও ফয়সাল আতিকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Nov 2019, 11:24 AM
Updated : 1 Dec 2019, 07:50 AM

মেট্রোরেলসহ চলমান কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে রাজধানীর কয়েকটি এলাকা ধুলার রাজ্যে পরিণত হয়েছে, সঙ্গে যোগ হয়েছে ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন এলাকার ইটভাটার দূষণ।

বছরের শুরুতে আন্তর্জাতিক সংগঠন গ্রিনপিস ও এয়ার ভিজ্যুয়ালের গবেষণায় বিশ্বের বিভিন্ন রাজধানী শহরগুলোর মধ্যে ঢাকায় বায়ু দূষণের মাত্রা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকার তথ্য এলে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়।

আদালত ঢাকার বায়ু দূষণ কমাতে ধুলোপ্রবণ এলাকাগুলোতে দিনে দুই বার পানি ছিটানোসহ বেশকিছু ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিলেও পরিস্থিতির হেরফের হয়নি খুব বেশি।

বর্ষা মৌসুমে বাতাসের মান ভালো থাকলেও শীত এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি আবার খারাপ হতে শুরু করেছে। কিন্তু পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারি দপ্তরগুলোর দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ এখনও নেই।

যারা পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিতে কাজ করছেন, সেই পরিবেশ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তাও বায়ু দুষণ নিয়ে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কথা বলেছেন।

 

পরিস্থিতি কতটা খারাপ?

বাতাসে ভাসমান বস্তুকণার (পার্টিকুলেট ম্যাটার বা পিএম) পরিমাপ করা হয় প্রতি ঘনমিটারে মাইক্রোগ্রাম (পিপিএম-পার্টস পার মিলিয়ন) এককে। এসব বস্তুকণাকে ১০ ও ২.৫ মাইক্রোমিটার ব্যাস শ্রেণিতে ভাগ করে তার পরিমাণের ভিত্তিতে ঝুঁকি নিরূপণ করেন গবেষকরা।

তারা বলছেন, বাতাসে প্রতি ঘনমিটারে ২.৫ মাইক্রোমিটার ব্যাসের বস্তুকণার পরিমাণ (পিপিএম) যদি শূন্য থেকে ৫০ এর মধ্যে থাকে, তাহলে ওই বাতাসকে বায়ু মানের সূচকে (একিউআই) ‘ভালো’ বলা যায়।

এই মাত্রা ৫১-১০০ হলে বাতাসকে ‘মধ্যম’ মানের এবং ১০১-১৫০ হলে ‘বিপদসীমায়’ আছে বলে ধরে নেওয়া হয়। আর পিপিএম ১৫১-২০০ হলে বাতাসকে ‘অস্বাস্থ্যকর’, ২০১-৩০০ হলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং ৩০১-৫০০ হলে ‘অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর’ বলা হয়।

বাংলাদেশের সিটি করপোরেশন এলাকার ১১টি স্থানের বাতাসে ২.৫ মাইক্রোমিটার ব্যাস পর্যন্ত অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার পরিমাণ নিয়মিত পরিমাপ করা হয় ‘সিএএসই’ প্রকল্পের মাধ্যমে। 

পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, চলতি মাসের শুরুতেই ঢাকার বাতাস ‘অস্বাস্থ্যকর’ মাত্রায় পৌঁছে যায়। ঘুর্ণিঝড় বুলবুল আসার আগে প্রতিদিনই বাতাসে ভাসমান বস্তুকণার পরিমণ ছিল ১৫০ পিপিএম এর উপরে।

বুলবুলের প্রভাবে বৃষ্টির কারণে বাতাসে ভাসমান বস্তুকণার পরিমাণ কিছুটা কমে আসে। ১১ নভেম্বর পর্যন্ত ওই পরিমাণ ছিল ১০০ পিপিএম এর নিচে। কিন্তু তারপর আবার তা বাড়তে শুরু করে এবং ১৩ নভেম্বর তা ২৩০ পিপিএমে, অর্থাৎ ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ মাত্রায় পৌঁছে যায়।

অধিদপ্তরের বায়ুমান ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের পরিচালক জিয়াউল হক বলেন, ঢাকা শহরে অপরিকল্পিত নির্মাণকাজ, গাড়ির ধোঁয়া ও আশপাশের ইটের ভাটাগুলোর কারণে প্রতিবছর এ সময় বায়দূষণ বেড়ে যায়।

“এ বছর অক্টোবর পর্যন্ত এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স ২০০ পিপিএমের নিচে ছিল। বৃষ্টি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এবং নির্মাণকাজ জোরেশোরে শুরু হওয়ায় গত ৩-৪ দিনে সেটা আবার উপরে চলে গেছে।”

ধুলার রাজ্য

রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, উত্তরা ও পুরান ঢাকার কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে প্রায় সব সড়কেই উড়ছে ধুলা।

মিরপুর ১৪ নম্বর থেকে ভাসানটেক যাওয়ার সড়কটির নির্মাণকাজ চলছে প্রায় এক বছর ধরে। দুই পাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে সড়কটি সম্প্রসারণ হচ্ছে, পাশাপাশি চলছে নিষ্কাশন নালা বসানোর কাজ। বর্ষায় কাদা আর শুকনো মৌসুমে ধুলা- এ নিয়েই দীর্ঘদিন ধরে চলতে হচ্ছে এখানকার বাসিন্দাদের।

এই সড়কে প্রতিদিন সকালে একবার পানি ছিটিয়ে যায় সিটি করপোরেশনের গাড়ি। কিন্তু রোদে পানি শুকিয়ে যাওয়ার পর আবার ধুলায় ডুবে যায়।

একই অবস্থা মিরপুরের কালসী রোড, ইসিবি চত্বর, মিরপুর ১২ নম্বর এলাকায়। এছাড়া উত্তরার বিভিন্ন সড়কেও ধুলার উপদ্রব দেখা গেছে।

পুরান ঢাকার লালবাগ, আজিমপুর, চকবাজার, বেগমবাজার, ইমামগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকার সড়কে ধুলা উড়তে দেখা গেছে।

বাণিজ্যিক এলাকা ইমামগঞ্জ, বেগম বাজার, চকবাজারে প্রতিদিন ঢাকার বাইরে থেকে অসংখ্য ট্রাকে করে আসে মালামাল। এসব ট্রাকের সঙ্গে আসে ধুলা।

কিন্তু ধুলা নিয়ন্ত্রণে নগর কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ দেখেননি বলে অভিযোগ করেন ইমামগঞ্জের একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা জাকারিয়া হোসেন খান।

“অনেক সময় দূরদূরান্ত থেকে মালামাল আসে। পাউডার জাতীয় জিনিসপত্র আসে। অল্প বৃষ্টিতে কাদা হয়ে যায়। এছাড়া দুইদিন পর পর রাস্তা খোঁড়ে, মাঝেমধ্যে ম্যানহোল থেকে ময়লা তুলে সড়কে ফেলে। পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর হয়ে গেছে। আমি কখনই এলাকায় পানি ছিটাতে দেখি না।”

মোহাম্মদপুর বেড়িবাধ, বাসস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন সড়কে ঘুরেও ধুলা দেখা গেছে। তাজমহল সড়কের বাসিন্দা রাশেদুল আলম বললেন, ধুলার কারণে পথ চলতেও সমস্যা হয়।

“আমি প্রায়ই সাইকেলে চলাফেরা করি। কিন্তু ধুলার কারণে আমার সাইকেল চালাতে খুবই সমস্যা হয়। মাঝে মাঝে কিছুই দেখিনা। বেশি বিপদে পড়ি বাচ্চকে সাথে নিয়ে বের হলে। চোখে ধুলাবালি গেলে সে খুবই অস্বস্তিতে পড়ে।”

 

বাড়ছে রোগের ঝুঁকি

শীতে বাতাসের মান খারাপ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন রোগের ঝুঁকিও বাড়ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের ডিন অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বায়ু দূষণের কারণে শ্বাসতন্ত্রের রোগ বেশি হতে পারে।

“এখন আবহাওয়া তো শুষ্ক। নিঃশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে নিয়ে এ ধরনের রোগ বেশি হচ্ছে। এ সময় শ্বাসতন্ত্রের রোগ ছাড়াও চর্মরোগ, বয়স্ক মানুষের শরীর ব্যথা, মাথা ব্যথা হয়। বিশেষ করে বাচ্চারা এবং বয়স্করা বায়ুদূষণের কারণে বেশি ঝুঁকিতে থাকে।”

উত্তর পানি দিচ্ছে, দক্ষিণে ‌পানি নেই

বর্ষা বিদায় নেওয়ার পর থেকেই রাজধানীর বাতাসে উড়ছে ধুলা। তবে তা রোধে দুই সিটি করপোরেশনের কার্যক্রমে সন্তুষ্ট নন নাগরিকরা।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) পানির নিজস্ব কোনো উৎসই নেই। ওয়াসার পাম্প থেকে পানি নিয়ে বিভিন্ন সড়কে ছিটায় ডিএসসিসির ১১টি গাড়ি।

কিন্তু এ বছর ওয়াসা পানি না দেওয়ায় সড়কে পানি ছিটানো যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ডিএসসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপদেষ্টা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম। বিষয়টি নিয়ে ওয়াসার সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।

“গত বছর তারা পানি দিয়েছিল। ওয়াসা বলছে, এ পানি খাওয়ার জন্য, ধুলার জন্য না। বুধবার (৬ নভেম্বর) সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানস্থলের আশপাশে ছিটানোর জন্য অনেক অনুরোধের পর শুধু একদিনের জন্য পানি দিয়েছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সুরাহা করার চেষ্টা করছি।”

এ বিষয়ে ওয়াসার বক্তব্য জানতে সংস্থাটির ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাসেমের মোবাইল ফোনে কল দিলেও তিনি ধরেননি। ফিরতি বার্তায় কোনো কিছু জানার থাকলে এসএমএস করতে বলেন তিনি। পরে বিষয়টি জানিয়ে তার এসএমএস করলেও কোনো জবাব দেননি।

পানি ছিটানোয় দক্ষিণের চেয়ে কিছুটা ভালো অবস্থায় আছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।

এখানকার ১২টি ওয়াটার বাউজার ৪০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার এলাকায় দিনে দুইবার পানি ছিটানো হয় বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির যান্ত্রিক বিভাগের শাখার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল হাসনাত।

“ডিএনসিসির তিনটি গভীর নলকূপ থেকে এ পানি সংগ্রহ করা হয়। মহাখালী, গাবতলী ও মিরপুরের তিনটি নলকূপ থেকে আমরা পানি নিই। জরুরি প্রয়োজনে ওয়াসা থেকেও নেওয়া হয়। সড়কে যানজট না থাকলে পানি ছিটাতে কোনো সমস্যা হয় না।”

ব্যবস্থা যথেষ্ট নয়

ঢাকার বায়ু দূষণ রোধে সরকারের ব্যবস্থা যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন, বাপা’র সাধারণ সম্পাদক আবু নাসের। বায়ু দূষণ রোধে উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম চোখে পড়েনি তার।

“(বায়ু দূষণরোধের ব্যবস্থা) প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণের কোনো প্রয়াসই নাই। ইটের ভাটাগুলো বায়ু দূষণ করলেও সেখানে ব্যবস্থা অনুপস্থিত। বিভিন্ন নির্মাণাধীন ভবন নিয়ম না মেনে কাজ করলেও সেটা বন্ধ করা হচ্ছে না।”

তবে দূষণ কমাতে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের বায়ুমান ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের পরিচালক জিয়াউল হক।

গত বছর সনাতন পদ্ধতির ১৩০টি ইটের ভাটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি যাতে এক্সট্রিমলি আনহেলদি পর্যায়ে যেন না যায়। ইটের ভাটা বন্ধ করা, রাস্তাঘাট খোঁড়াখুঁড়ি, বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন, যানবাহনের ধোঁয়া, বর্জ্য পোড়ানোর কাজ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি।”

কিন্তু নানা চেষ্টার পরও পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি না হওয়ার জন্য ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতাকে’ অন্যতম অন্তরায় হিসেবে দেখছেন তিনি।

“পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে বিভিন্ন সরকারি সংস্থাকে নির্দেশনা দিলেও সেসব বাস্তবায়নের হার কম। সিটি করপোরেশনের পানি ছিটানোর কথা আমরা বলেছি, আদালত থেকেও বলে দেওয়া হয়েছে। দূষণ সৃষ্টিকারী গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব ট্রাফিকের ও বিআরটিএর। কিন্তু এর সবটুকু সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয়না। আসলে আমাদের মধ্যে সমন্বয়ের যথেষ্ট অভাব রয়েছে।”

সমাধান পানিতে নয়

বায়ুদূষণের অন্যতম উৎস হচ্ছে ধুলাবালু, যা নির্মাণকাজ এবং মাটি কিংবা বালু পরিবহন থেকে আসে। আর শুষ্ক মৌসুমে যেহেতু সব বেড়ে যায় এবং এ সময়ে পানির ঘাটতিও থাকে, তাই পানি ছিটিয়ে স্থায়ী কোনো ফল পাওয়া যাবে না বলে মনে করেন নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ (কেস) প্রকল্পের সাবেক পরামর্শক মাসুদ রানা।

এজন্য তিনি আবহাওয়ার মতো বায়ুমানের পূর্বাভাস দেওয়ার ব্যবস্থা চালুর কথা বলেছেন, যাতে মানুষ দূষণ এড়াতে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে পারে। কিন্তু দেশের শহরগুলোর বিগত দিনের যে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) প্রকাশিত হয়, তা প্রকৃতপক্ষে কোনো কাজেই লাগছে না।

একিউআই প্রকাশের মাধ্যমে কোনো নির্দিষ্ট সময়ে কোনো জায়গার মানুষকে সে জায়গার বায়ুর মান সম্পর্কে অবহিত করা হয় যাতে করে তারা সাবধানতা ও নির্দেশনা অনুযায়ী চলে। চব্বিশ ঘণ্টা পূর্বের এবং চব্বিশ ঘণ্টা পরের একিউআই প্রকৃতপক্ষে মানুষকে সে রকম কোনো বার্তা দিতে পারে না।

মাসুদ রানা বলেন, “আমেরিকান অ্যামব্যাসি তাদের চত্বরে বসানো স্টেশনের মাধ্যমে ঢাকা শহরের প্রতি ঘণ্টার একিউআই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রকাশ করা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে দেশের শহরগুলোতে বায়ুমান ফোরকাস্টিং করে প্রকাশ করা উচিৎ। উন্নত দেশে এমনকি ইন্ডিয়াতেও বায়ুমান ফোরকাস্টিং করা হয়, যাতে দূষিত বাতাস এড়ানোর জন্য আগে থেকেই মানুষ প্রস্তুতি নিতে পারে।”

এ গবেষক জানান, ‘এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্ট’ ও ‘নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ (কেস)’ নামের দুটি প্রকল্পের মাধ্যমে অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ ও বিভিন্ন সমীক্ষা পরিচালনা করা হয়েছে।  এ বছরের জুনে কেস প্রকল্পটি সমাপ্ত হওয়ার আগে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোর ৩১টি স্থানে সার্বক্ষণিক বায়ুমান মনিটরিং কেন্দ্র (ক্যামস) স্থাপন করে বায়ুর গুণাগুণ পরিবীক্ষণ করা হয়েছে।

“এসব কেন্দ্রে বসানো সূক্ষ্ণাতিসূক্ষ্ণ যন্ত্রপাতি চালানো, রক্ষণাবেক্ষণ ও ডেটা কোয়ালিটি নিশ্চিত করতে প্রশিক্ষিত জনবলের সার্বক্ষণিক সংশ্লিষ্টতা প্রয়োজন। কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তরের বায়ুমান ব্যবস্থাপনা শাখায় বিদ্যমান অতি স্বল্পসংখ্যক কারিগরি জনবল দিয়ে এ দায়িত্ব পালন করা কতটা সম্ভব তা প্রশ্নসাপেক্ষ,” বলেন মাসুদ রানা।

তার মতে, শুষ্ক মৌসুমে তীব্র বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক অবস্থার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে।

“তা না হলে বায়ুদূষণের থাবা আমাদের জাতির স্বাস্থ্যগত, বুদ্ধিগত ও দেশের পরিবেশগত অবস্থাকে পঙ্গু করে দেবে।”