সংকটের মধ্যে নতুন বাজেটে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এসডিজি বিষয়ক নাগরিক প্ল্যাটফর্ম।
“প্রবৃদ্ধি এখন কোনো পরিসংখ্যানগত বিষয় নয়, এটি রাজনৈতিক অভিলাষের প্রকাশ হয়ে দাঁড়িয়েছে,” বলেছেন এই প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য।
বুধবার ঢাকার মহাখালীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে ‘জাতীয় বাজেট ২০২৩-২০২৪: অসুবিধাগ্রস্ত মানুষগুলো কী পেল?’ শীর্ষক আলোচনা সভায় একথা বলেন তিনি।
বৈশ্বিক সংকটের প্রভাবে দেশের অর্থনীতি চাপে থাকার মধ্যে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ, যা অর্জন নিয়ে সংশয়ী অর্থনীতিবিদরা।
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় মনে করেন, প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, তা নির্বাচন উপলক্ষে উদ্দীপনা তৈরির জন্য দেওয়া হয়েছে।
সরকারি কাজে প্রাক্কলন ও বাস্তবতার মধ্যে ‘বড় ফারাক’ দেখতে পাওয়ার কথাও বলেন তিনি। সরকারি দপ্তরগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতার কথাও তিনি বলেন।
“অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মূল্যস্ফীতির তথ্যে দু’রকম। তথ্যর এই বৈপরিত্য থাকলে উন্নয়ন টেকসই হবে কি না, তা এখন প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। সরকারের মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয় দরকার। ডান হাত কী করছে, তা বাম হাত জানছে না।’’
ড. দেবপ্রিয় বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে শিক্ষা খাতে জিডিপির তুলনায় বরাদ্দ ছিল ২ দশমিক ১১ শতাংশ। পরবর্তীতে কয়েক বছর পর চূড়ান্ত হিসাব প্রকাশ করলে দেখা যায় বাস্তবায়িত হয়েছে ১ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
এভাবে পরবর্তী প্রতি অর্থবছেরেই কমতে কমতে সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য দেখা যায় ২০২১-২২ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল জিডিপির ১ দশমিক ৮১ শতাংশ, কিন্তু বাস্তাবায়িত হয়েছে ১ দশমিক ৫১ শতাংশ।
একইচিত্র দেখা স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতেও দেখতে পাওয়ার কথা বলেন তিনি।
২০১৪ সালের পর থেকে বাজেটে নেওয়া লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে কর আদায়ের হার কমে যাওয়ার তথ্য তুলে ধরে দেবপ্রিয় বলেন, “আমরা বলি, গণতান্ত্রিক জবাবদিহির ঘাটতি হলে সরকারের কর আহরণ, উন্নয়ন ব্যয় উভয়েই নেতিবাচকভাবে প্রভাব পড়ে।
“বাজেট প্রণয়নে অংশীজন, ব্যবসায়ী, বিশেষজ্ঞ এমনকি সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মতামতও নেওয়া হয় না। এভাবে গণতন্ত্রহীন ও জবাবদিহি ছাড়া বাজেট তৈরি করায় কর আদায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়।”
বাজেট প্রণয়নের প্রক্রিয়াগত অর্থাৎ ব্যবস্থাপনায়ও বাংলাদেশ দুর্বল হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সরকারি ব্যয়ের সক্ষমতা কমে যাওয়ার তথ্য তুলে ধরে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “আমাদের যে সম্পদ আছে, সেটি বণ্টনে নায্যতা নিশ্চিত করা জরুরি।”
আলোচনায় জলবায়ু ও জ্বালানি নিরাপত্তার প্রসঙ্গে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, “বাজেট এমন এক সময়ে দেওয়া হয়েছে, যখন আমরা আইএমএফের ঋণ কর্মসূচিতে রয়েছি। সেই শর্ত অনুযায়ী, ১১টি খাতে সংস্কার করতে হবে। এর মধ্যে জলবায়ু খাতে সংস্কারের একটি শর্তও রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দারিদ্র্য ও অসমতা বাড়ে।”
সামাজিক নিরাপত্তার খাতের ব্যয়ের অসঙ্গতি তুলে ধরে সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল হক বলেন, “সামাজিক নিরাপত্তা খাতে প্রকৃত অর্থে বরাদ্দ কম রাখা হচ্ছে বাজেটে।”
শিক্ষা খাতে জিডিপির তুলনায় বরাদ্দ কমে যাওয়ার চিত্র তুলে ধরে ব্র্যাক শিক্ষা উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের প্রোগ্রাম হেড সমীর রঞ্জন নাথ বলেন, “শিক্ষায় এক সময়ে স্যাটেলাইট স্থাপনের খরচ বসিয়ে বেশি দেখানো হয়েছে। প্রযুক্তি খাতের ব্যয়ও এ খাতে যুক্ত করা হয়েছে। এতে শিক্ষার পেছনে প্রকৃত ব্যয় কমে যাচ্ছে।”
কোভিড মহামারির সময়ের শিশু ছাত্ররা এখন ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণিতে পড়ছে। তাদের শিখন ঘাটতির তথ্য গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে জানিয়ে সমীর বলেন, বাজেটে এই ঘাটতি পূরণে কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সভাপতি আসিফ ইব্রাহীম বলেন, “বিদেশ ভ্রমণে ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে সম্পদের তথ্য দিতে হবে বলে শুনতে পাচ্ছি। এখন তাদের কাছে ব্যবসায়ীদের গোপনীয় তথ্য নিরাপদ থাকবে কি না তার দায়িত্ব কে নেবে?”
মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সুলতানা কামালের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই সভায় মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম সংরক্ষিত আসনে নারীদের সরাসরি ভোটের ব্যবস্থা করার দাবি জানান।