নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি ‘আরও একটু’ কমেছে

পরিকল্পনামন্ত্রী আশাবাদী, ডিসেম্বরেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Dec 2022, 09:56 AM
Updated : 5 Dec 2022, 09:56 AM

নভেম্বর মাসে দেশে সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় (পয়েন্ট টু পয়েন্ট) সামান্য কমে ৮ দশমিক ৮৫ শতাংশে নেমে এসেছে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

অর্থাৎ, গত বছরের নভেম্বরে মানুষ যে পণ্য বা সেবা ১০০ টাকায় পেয়েছিলেন, সেই একই পণ্য বা সেবার জন্য এ বছরের নভেম্বরে খরচ হয়েছে ১০৮ টাকা ৮৫ পয়সা।

এক দশকের রেকর্ড ভেঙে গত অগাস্ট মাসে মূল্যস্ফীতির হার ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে পৌঁছায়। সেপ্টেম্বরে এই হার ৯ দশমিক ১০ শতাংশ হয়।

সেই হার অক্টোবরে আরেকটু কমে ৮ দশমিক ৯১ শতাংশে নামার তথ্য দিয়েছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী।

সোমবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদিক ডেকে নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি আরও কমার খবর দেন তিনি।

মূল্যস্ফীতির এই প্রতিবেদন তৈরির দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) অ্যাকাউন্টিং উইংয়ের পরিচালক মো. জিয়াউদ্দিন আহমেদও উপস্থিত ছিলেন এ সময়।

মন্ত্রী বলেন, “অন্যান্য দেশে, বিশেষ করে ইংল্যান্ডেও সাধারণ মূল্যস্ফীতি ডাবল ডিজিটে পৌঁছে যাওয়ার পর তাদেরও এখন কমতে শুরু করেছে। সুতরাং আমাদের দেশেও কমার প্রবণতা বিশ্বের সঙ্গেও মিলে আমাদের সঙ্গেও মিলে।

তিনি বলেন, “অগাস্টে আমাদের মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে পৌঁছে যাওয়ার পর আমি বলেছিলাম মূল্যস্ফীতির হার কমে আসবে। এরপর থেকে টানা তিন মাস কমেছে। ডিসেম্বর মাসেও মূল্যস্ফীতি কমার এই প্রবণতা অব্যাহত থাকবে বলে আমি আশাবাদী।”

পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদন অনুযায়ী নভেম্বরে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে খাদ্য উপখাতে সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ দশমিক ১৪ শতাংশ। আর খাদ্য বহির্ভূত উপখাতে ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছে।

মন্ত্রী দাবি করেন, “সোনার দামের কারণে মূল্যস্ফীতি যতটা কমবে আশা করা হয়েছিল ততটা কমেনি।”

অবশ্য বিবিএস সারা দেশের সকল প্রান্তের বাজার থেকে ৪২৬টি পণ্যের দাম সংগ্রহ করে মূল্যস্ফীতির যে হিসাব নির্ধারণ করে, সেখানে সোনার দাম কতটা প্রভাব ফেলতে পারে সে তথ্য তিনি দিতে পারেননি।

অগাস্ট মাসে একদশকের মধ্যে মূল্যস্ফীতির হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠে যাওয়ার প্রসঙ্গ তুলে মন্ত্রী বলেন, “কেউ কেউ এটা রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন।”

মূল্যস্ফীতি এখন কমার কারণ জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, “বাজারে শীতকালীন সবজি আসা শুরু হয়েছে। আবার বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলসহ খাদ্য পণ্যের দাম কমা শুরু হয়েছে। এর প্রভাব দেশের বাজারেও পড়া শুরু হয়েছে বলেই দেশেও মূল্যস্ফীতি কমা শুরু হয়েছে বলে আমার মনে হয়।”

সম্প্রতি তিন দিন গ্রামে অবস্থান করার তথ্য জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “আমি সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা বলেছেন, চালের দাম অল্প হলেও কমেছে।”

মানুষের আয় বেড়েছে দাবি করে মন্ত্রী বলেন, আগের মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ, তা নভেম্বরে মাসে ৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ হারে বেড়েছে।

“দেশে মূল্যস্ফীতি কমছে, আর মজুরির হার বৃদ্ধির এই প্রবণতার মধ্যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রায় কোভিড-১৯ এর আগের অবস্থায় চলে আসবে। বর্তমানে ইউক্রেইন যুদ্ধ যেভাবে ঝিমিয়ে পড়েছে, এরকম অবস্থা থাকলেও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের কাছাকাছি হতে পারে।”

পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, নভেম্বর মাসে দেশের সাধারণ মূল্যস্ফীতি কিছুটা নেমে এলেও গ্রামাঞ্চলের খাদ্য বহির্ভিূত উপখাতে মূল্যস্ফীতি দুই অংকের ঘরে পৌঁছেছে। নভেম্বরে এ খাতে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ দশমিক ৩১ শতাংশ, যা আগের মাসে ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ ছিল।

তবে গ্রামাঞ্চলে খাদ্য উপখাতের মূল্যস্ফীতি আগের মাসের তুলনায় সামান্য কমে ৮ দশমিক ২৩ শতাংশ হয়েছে। অক্টোবর মাসে এই হার ছিল ৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ।

সার্বিকভাবে গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মূল্যস্ফীতি সামান্য বেড়ে ৮ দশমিক ৯৪ শতাংশ হয়েছে। অক্টোবর মাসে এই হার ছিল ৮ দশমিক ৯২ শতাংশ।

আর শহরাঞ্চলের মূল্যস্ফীতির হার অক্টোবরের ৮ দশমিক ৯০ শতাংশ থেকে কিছুটা কমে ৮ দশমিক ৭০ শতাংশ হয়েছে।

খাদ্য উপখাতে শহরাঞ্চলে মূল্যস্ফীতি কমে ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ, আর খাদ্য বহির্ভূত উপখাতে কিছুটা বেড়ে ৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ হয়েছে।

Also Read: সরকারি হিসাবে ৯ শতাংশের নিচে নেমেছে মূল্যস্ফীতি