ভোলার ইলিশা-১ কূপে ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুদ রয়েছে, যেখান থেকে আগামী ২৫ বছর সরবরাহ পাওয়া যাবে।
ইলিশা-১ কূপকে সোমবার বাংলাদেশের ২৯তম গ্যাসক্ষেত্র ঘোষণা করে এই তথ্য জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
তিনি জানান, নতুন এই কূপে মজুদ প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট থেকে দৈনিক গড়ে ২০ মিলিয়ন ঘনফুট করে গ্যাস তোলা যাবে। সেই হিসাবে ২৫ থেকে ২৬ বছর গ্যাস ক্ষেত্রটি থেকে গ্যাস পাওয়া যাবে।
১৯৯৩-৯৪ সালে ভোলার বোরহানউদ্দিনের শাহবাজপুর ক্ষেত্রে প্রথম গ্যাস আবিষ্কৃত হয়। ভোলায় মোট ৩টি গ্যাসক্ষেত্রে নয়টি কূপ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে বোরহানউদ্দিন উপজেলার শাহাবাজপুরে ছয়টি, সদর উপজেলার ভেদুরিয়া ইউনিয়নে দুটি এবং ইলিশায় একটি।
ইলিশার নতুন কূপে পরীক্ষামূলক গ্যাস উত্তোলন এরই মধ্যে সফলভাবে সম্পন্ন করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাপেক্স।
বাপেক্সের ভূ-তাত্ত্বিক বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. আলমগীর হোসেন এর আগে জানিয়েছিলেন, ইলিশায় মাটির ৩ হাজার ৪৩৩ মিটার গভীরতায় গ্যাসের সন্ধান মেলে।
“ইলিশা-১ কূপে গ্যাসের মজুদ বিবেচনায় গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাসের আনুমানিক মূল্য প্রায় ৬৭৪৪ কোটি টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারের বিদ্যমান মূল্য বিবেচনায় ইলিশা-১ কূপে গ্যাসের আনুমানিক মূল্য প্রায় ২৬ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা,” বলেন প্রতিমন্ত্রী।
ভোলাতে শাহজাদপুর, ভোলা নর্থ ও ইলিশা মিলিয়ে প্রায় ২ দশমিক ২৩ টিসিএফ গ্যাস মজুদ রয়েছে। প্রতিদিন উত্তোলন করা যেতে পারে ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট থেকে ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট।
দ্বীপ জেলা ভোলায় পাওয়া গ্যাস মূল ভূখণ্ডে আনার বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এর মধ্যে ৬০ এমএমসিএফ গ্যাস নিয়ে এখন কাজ চলছে। ২৫ এমএমসিএফ গ্যাসের মধ্যে ৫ এমএমসিএফ গ্যাস সিএনজি আকারে আনার চেষ্টা চলছে।
“আগামী দুই মাসের মধ্যে এই কাজটি সম্পন্ন হবে। আগামী দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যে পাইপলাইন নির্মাণ সম্পন্ন হলে প্রায় ২০০ এমএমসিএফ গ্যাস প্রতিদিন নিয়ে আসা যাবে।”
সঞ্চালন লাইন কোন দিকে যাবে?
ভোলায় স্থলভাগে আবিষ্কৃত গ্যাস ছাড়াও সাগরাঞ্চলে আরও গ্যাস পাওয়ার আশা করছেন জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “বেশ কয়েক বছর ধরেই আমরা ভোলায় গ্যাস অনুসন্ধান করছিলাম। এই প্রথম ভোলা নর্থ প্রকল্পের আওতাধীন নদীর ঠিক ওপরের দিকে আমরা নতুন ক্ষেত্র আবিষ্কার করেছি। আমরা আরও আশাবাদী, কারণ ভোলার অনশোর বাদ দিয়েও অফশোর বা সাগরে ড্রিলিংয়ের দিকে যাব।”
সেই গ্যাস সঞ্চালন নিয়ে নসরুল বলেন, “ভোলার সব গ্যাস নিয়ে একটা পরিকল্পনা তৈরি হচ্ছে। ভোলা থেকে ফেনী পর্যন্ত একটি পাইপলাইন তৈরি এবং ভোলা থেকে বরিশাল হয়ে খুলনার দিকে একটি পাইপলাইন তৈরির জন্য আমরা কাজ করছি।
“তবে এই মুহূর্তে বরিশালের দিকে নিয়ে যাওয়ার সম্ভাব্যতা যাচাই কাজ শুরু হচ্ছে। বরিশাল থেকে এই পাইপলাইন মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ হয়ে ঢাকায় চলে আসবে। আরেকটা লাইন যাবে খুলনার দিকে। পায়রা থেকে এফএসআরইউর মাধ্যমে যে এলএনজি আসবে, সেটি ৬৭ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে ভোলা-বরিশাল লাইনের সঙ্গে যুক্ত হবে। অর্থাৎ আমরা একটা রিং ফেইজ ইনস্টল করছি সারা বাংলাদেশে যার মাধ্যমে প্রতিটি এলাকা গ্যাসের আওতায় আসবে।”
ভোলাবাসী কতটা পাবে?
বিচ্ছিন্ন দ্বীপ জেলা ভোলায় আবিষ্কৃত গ্যাস ওই অঞ্চলের বাসিন্দারা ব্যবহার করার সুযোগ পাবে কি না- এমন এক প্রশ্নের উত্তরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, অবশ্যই শিল্প, কারখানা ও বিদ্যুতের ক্ষেত্রে ভোলা থাকবে অগ্রাধিকারে।
“এই মুহূর্তে বাসাবাড়িতে গ্যাস সংযোগ বন্ধ আছে। সেই কারণে ভোলাতেও এখন আবাসিক সংযোগ দেওয়া হচ্ছে না। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের কীভাবে গ্যাস সুবিধা দেওয়া যায় সেই চিন্তা সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে।”