বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের প্রোগ্রামাররা নতুন সফটওয়্যার তৈরি করেছেন। আগে বিদেশি কোম্পানির সফটওয়্যার ব্যবহার করা হত।
Published : 13 Nov 2023, 07:36 PM
এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকের হিসাবে অর্থ লেনদেনের ইলেক্ট্রনিক মাধ্যম বাংলাদেশ ইলেক্ট্রনিক ফান্ডস ট্রান্সফার নেটওয়ার্ক (বিইএফটিএন) পরিচালনার জন্য নিজস্ব নতুন সফটওয়্যার চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রোববার দেশের ৬০ ব্যাংক নতুন এ সফটওয়্যার ব্যবহার করে এই নেটওয়ার্কে যুক্ত হয়ে লেনদেন সম্পন্ন করেছে সফলভাবে।
আগে এ কাজের জন্য বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে কেনা সফটওয়্যার ব্যবহার করা হত। রক্ষণাবেক্ষণের কাজটিও করত সেই কোম্পানি। ফলে বছরে খরচ হত ২০ থেকে ২৫ লাখ ডলার।
নিজস্ব সফটওয়্যার চালু হওয়ায় বাংলাদেশকে আর প্রতিবছর লাইসেন্স ফি বাবদ এক লাখ ডলার বিদেশি কোম্পানিকে দিতে হবে না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক।
বার্ষিক ওই ফি ছাড়াও এখন থেকে সফটওয়্যার আধুনিকায়ন, সংস্কার বা প্রযুক্তিগত কোনো সমস্যা সমাধানে বিদেশি মুদ্রা খরচ থেকে বেঁচে যাবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে মেজবাউল হক বলেন, “বিইএফটিএন এর মাধ্যমে লেনদেন করতে আগে বিদেশি কোম্পানির সফটওয়্যার ‘এপারেটর’ ব্যবহার করা হত। লেনদেন প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাওয়ায় খরচও বেড়ে যাচ্ছিল। তাই নিজেদের প্রোগ্রামার দিয়ে সফটওয়্যার তৈরির উদ্যোগে নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।”
বিইএফটিএন হচ্ছে ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমে কোনো প্রকার নগদ অর্থ ব্যবহার ছাড়াই লেনদেন সম্পন্ন করার প্রক্রিয়া। এর মাধ্যমে সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন, ভাতা, পেনশন, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বেতন ভাতা ক্রেডিট ও ডেবিট করা যায়।
গ্রাহকরা এর মাধ্যমে এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকের হিসাবে অর্থ লেনদেন করতে পারেন। বিইফটিএন মাধ্যম ব্যবহার করে অর্থ লেনদেনে কোনো সেবা ফি বা চার্জ লাগে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, বিইএফটিএন এর মাধ্যমে বেতন, বিভিন্ন প্রকার ভাতা, অনুদান ও প্রকল্প খরচসহ সরকারি লেনদেন বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে। এখন প্রতিমাসে চার কোটি বার লেনদেন সম্পন্ন হচ্ছে।
এতে প্রতিনিয়ত সক্ষমতা বাড়াতে হচ্ছে এ প্ল্যাটফর্মের। প্রতিবারই সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে আলাদা চার্জ দিতে হয় বিদেশি কোম্পানিকে। সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিদেশি ভেন্ডরের ওপর নির্ভরশীলতাও বেড়ে চলছিল।
সর্বশেষ এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে হওয়া লেনদেনের তথ্য সংরক্ষণ করতে ওই বিদেশি কোম্পানি অতিরিক্ত চার্জ করতে চেয়েছিল, যার পরিমাণ ২ মিলিয়ন বা ২০ লাখ ডলার হত।
এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক নিজস্ব প্রোগ্রামার দিয়ে সফটওয়্যারটি তৈরি করেছে, যেখানে কোনো অর্থই খরচ হয়নি বলে জানিয়েছেন মেজবাউল হক।
নিজস্ব সফটওয়্যার চালু করে প্রতিদিন তিন বার বিইএফটিএন এর মাধ্যমে লেনদেন সম্পন্ন করছে বাংলাদেশ ব্যাংক, আগে যেখানে প্রতিদিন দুই বার লেনদেন নিষ্পত্তি করা হত।
এর ফলে এখন ইলেক্ট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার কার্যক্রম বাংলাদেশ অটোমেটেড ক্লিয়ারিং হাউসের (বিএসিএইচ-ব্যাচ) ইএফটি ক্লিয়ারিং ও সেটেলমেন্ট সিস্টেমের পরিবর্তে নিকাশ-বিইএফটিএন সফটওয়্যারের মাধ্যমে করা হবে।
দৈনিক রাত ১২টা থেকে সকাল ১১টা ৫৯ মিনিট ৫৯ সেকেন্ড পর্যন্ত প্রথম সেশন, দুপুর ১২টা থেকে বেলা ২টা ৫৯ মিনিট ৫৯ সেকেন্ড পর্যন্ত দ্বিতীয় সেশন এবং বিকেল ৩টা থেকে রাত ১১টা ৫৯ মিনিট ৫৯ সেকেন্ড পর্যন্ত তৃতীয় সেশনের লেনদেন নিষ্পত্তি করা হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, ক্রেডিট এবং ডেবিট লেনদেন আলাদা ফাইলের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সফটওয়্যারে ইনপুট (তথ্য যোগ) করতে হবে। ডেবিট এবং ক্রেডিট লেনদেনের ক্ষেত্রে ইএফটি সেটেলমেন্ট হওয়ার পরবর্তী দুই সেশনের মধ্যে রিটার্ন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে।
গত সপ্তাহে ছুটির দিনে বিইএফটিএন প্ল্যাটফর্ম হালনাগাদ করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে তাতে যুক্ত করে বাংলাদেশ ব্যাংক।