গেল অর্থবছর সংশোধিত এডিপির ৮৪ দশমিক ১৬ শতাংশ বাস্তবায়ন করতে পেরেছে সরকার, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ পয়েন্ট কম।
Published : 21 Jul 2023, 11:49 AM
সদ্য সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে আগের অর্থবছরের চেয়ে বেশ খানিকটা পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ, যার কারণ হিসেবে নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির কথা বলেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
অর্থবছরের পুরো বারো মাসে সংশোধিত এডিপির ৮৪ দশমিক ১৬ শতাংশ বাস্তবায়ন করতে পেরেছে সরকার, যা আগের ২০২১-২২ অর্থবছরের চেয়ে ৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ পয়েন্ট কম। ওই অর্থবছরে বাস্তবায়িত হয়েছিল সংশোধিত বরাদ্দের ৯২ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) ওয়েবসাইটে বৃহস্পতিবার এডিপি বাস্তবায়নের এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
আইএমইডির প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত অর্থবছর উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে জড়িত সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগ মিলে মোট ব্যয় করতে পেরেছে ১ লাখ ৯৯ হাজার ৯৯ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরে সারাদেশে উন্নয়ন কাজে ২ লাখ ৩ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা ব্যয় করা সম্ভব হয়েছিল।
গেল অর্থবছর মূল এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। বাস্তবায়ন সক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে মার্চ মাসে তা কাটছাঁট করে ২ লাখ ৩৬ হাজার ৫৬০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।
জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত অর্থবছরে বিশেষ করে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধির কারণে আমাদের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়েছে।”
তিনি বলেন, “টেন্ডারিং প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরও নির্মাণ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধির কারণে ঠিকাদাররা কাজ এগিয়ে নিতে পারেননি। এর ফলে দীর্ঘদিন ধরে স্থবির হয়েছিল অনেক প্রকল্পের কাজ। গুরুত্বের বিচারে অনেক প্রকল্প আমাদের সংশোধনও করতে হয়েছে। মূলত এই কারণে গত অর্থবছরে বাস্তবায়ন কম হয়েছে বলে আমি মনে করি।”
কোভিড মহামারী পেরিয়ে ঘুরে দাড়ানোর মুহূর্তে ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে গত অর্থবছর কিছুটা সংকটে পড়ে দেশের অর্থনীতি। পরিস্থিতি সামাল দিতে চলমান প্রকল্পগুলোকে অগ্রাধিকার বিচারে এ, বি ও সি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে অর্থায়নের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
কর্মকর্তারা বলছেন, ওই প্রক্রিয়াতেও অনেক প্রকল্পে চাহিদামত অর্থ সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। কম গুরুত্বপূর্ণ অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন সাময়িক বন্ধ ছিল। এসব কারণে এডিপি বাস্তবায়ন সার্বিকভাবে পিছিয়ে পড়ে।
পরিকল্পনামন্ত্রী অবশ্য অর্থ সংকটের কথা মানতে রাজি নন। তিনি বলেন, “আমাদের অর্থ সংকট ছিল না। মূলত প্রকল্পের রেট শিডিউল পরিবর্তনজনিত সমস্যায় পড়ে বাস্তবায়ন কিছুটা কম হয়েছে। চলতি অর্থবছর থেকে আবারও এডিপি বাস্তবায়নে গতি ফিরবে।”
জুন মাসে অর্থছাড়ের হিড়িক
বরাবরের মতই গত অর্থবছরের শেষ মাস জুনে সবচেয়ে বেশি প্রায় ৫৩ হাজার কোটি টাকা ছাড় হয়। মে মাস পর্যন্ত অর্থ ব্যয় ছিল ১ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৬২ শতাংশ। আর জুনের ৩০ দিনের অর্থব্যয়ে মোট ব্যয় ২ লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি পৌঁছায়, বাস্তবায়নের হার পৌঁছায় ৮৪ শতাংশে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, “আসলে প্রতিবছরই শেষ মাসে বেশি ব্যয় এবং বাস্তবায়ন প্রতিফলিত হয়। কারণ শেষ মাসে সকল প্রকল্পের পাওনা বিল পরিশোধ করা হয়।”
বিদেশি সহায়তার বাস্তবায়ন হার বেশি
গত অর্থবছর প্রথমবারের মত প্রকল্প সহায়তার চেয়ে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয়ের হার কম দেখা গেল।
এই সময়ে সরকারের নিজস্ব বরাদ্দ থেকে ৮১ দশমিক ৭৭ শতাংশ বা ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা সম্ভব হয়েছে। আর প্রকল্প সহায়তা থেকে বাস্তবায়নের হার ছিল ৯০ শতাংশের বেশি।
সরকারের অর্থ সংকটের কারণে সরকারি তহবিল থেকে কম ব্যয় করা হয়েছে কিনা– এমন প্রশ্নে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “না, সরকার কোনো সময়ই অর্থ সংকটে পড়েনি। মূলত প্রকল্প সংশোধনের কবলে পড়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন গতি হারানোয় গত অর্থবছরে বাস্তবায়ন কিছুটা কম হয়েছে।”
সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া ১৫ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বাস্তবায়ন চিত্র
উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনাকারী ৫৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে ১৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে ১ লাখ ৫৯ হাজার ৭০৬ কোটি টাকার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল গত অর্থবছর, যা মোট বরাদ্দের ৮৩ শতাংশ।
এই বড় মন্ত্রণলায়গুলো তাদের বরাদ্দ থেকে গড়ে ৮২ শতাংশ খরচ করতে পেরেছে, যেখানে মোট এডিপির ৮৪ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে।
বেশি বরাদ্দ পাওয়া মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১০৩ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ, প্রায় ৯৭ শতাংশ অর্থ খরচ করেছে সেতু বিভাগ। তৃতীয় সর্বোচ্চ, ৯৩ শতাংশ ব্যয় করতে পেরেছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
এছাড়া সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ বরাদ্দের ৯১ শতাংশ, রেল মন্ত্রণালয় ৯০ শতাংশ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ৯০ শতাংশ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ৮৯ শতাংশ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ৮৭ শতাংশ, কৃষি মন্ত্রণালয়ের ৮৫ শতাংশ , প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ৮২ দশমিক ৪৫ শতাংশ, স্থানীয় সরকার বিভাগ প্রায় ৮২ শতাংশ, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের ৭৭ শতাংশ, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় প্রায় ৭৬ শতাংশ, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের ৭১ শতাংশ এবং স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ৬৮ শতাংশ ব্যয় করতে পেরেছে।