কাঁচা চামড়ায় ঋণের জন্য ৪৪৩ কোটি টাকা, পাচ্ছে কে?

এবার কোরবানির ঈদে পশুর কাঁচা চামড়া কেনা-বেচায় ৪৪৩ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করতে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ১১টি ব্যাংককে লক্ষ্য নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

নিজস্ব প্রতিবেদকশেখ আবু তালেববিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 July 2022, 05:33 PM
Updated : 5 July 2022, 05:33 PM

তবে আগের কয়েক বছরের মতো এবারও এই লক্ষ্য পূরণ না হওয়ার শঙ্কা যেমন থাকছে; তেমনি চাইলেও ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ মিলছে না বলে কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের অভিযোগও রয়েছে।

আগামী ১০ জুলাই দেশে কোরবানির ঈদ। দেশের চামড়ার চাহিদার অর্ধেকের বেশি এই সময়েই পূরণ হয়।

প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, বিভিন্ন খামার ও ব্যক্তি পর্যায়ে দেশে এবার ১ কোটি ২১ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৯টি পশু কোরবানিযোগ্য রয়েছে। এরমধ্যে ৪৪ লাখ ৩৭ হাজার ৮৭৯ গরু।

প্রতি বছর এই ঈদ ঘিরে কোরবানির পশুর চামড়া কেনাবেচায় জড়িত ব্যবসায়ী এবং ট্যানারি মালিকদের ঋণ দেয় বিভিন্ন ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এবার রাষ্ট্রায়ত্ত ৪টি এবং বেসরকারি ৭টি ব্যাংক এ ঋণ বিতরণ করবে। ব্যাংকগুলোকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এর আগে ৩০ জুন কোরবানির পশুর চামড়া কেনায় জড়িত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, ট্যানারি, প্রক্রিয়াজাতকরনে জড়িত প্রতিষ্ঠানসহ সব ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ও শিল্প কারখানার ঋণ ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে পুনঃতফসিল করার করার সুযোগ দেওয়া হয়।

‘কম্প্রোমাইজড’ অর্থ ছাড়াই কাঁচা চামড়া কেনাবেচায় জড়িতদের নতুন ঋণ বিতরণের নির্দেশনাও দেওয়া হয়।

কাঁচা চামড়া কেনা-বেচায় এবার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মধ্যে সর্বোচ্চ ঋণ বিতরণ করবে জনতা ব্যাংক, যার পরিমাণ ১২০ কোটি টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক ৮৩ কোটি, রূপালী ব্যাংক ৩০ কোটি ও সোনালী ব্যাংক ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে ঋণ বিতরণের জন্য।

বেসরকারিদের মধ্যে ইসলামী ব্যাংক বরাদ্দ রেখেছে ১৭০ কোটি টাকা। এছাড়া আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক ৫ কোটি ২০ লাখ, যমুনা ব্যাংক ৫ কোটি, ঢাকা ব্যাংক ৩ কোটি, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক ১ কোটি, ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কর্মার্স ব্যাংক (এনসিসি) ৫০ লাখ ও দি সিটি ব্যাংক ৩০ লাখ টাকা চামড়া ব্যবসায়ীদের জন্য বরাদ্দ রেখেছে।

কাঁচা চামড়া কেনাবেচায় গত বছর ৫৮৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও অর্ধেকের কম বিতরণ হয়। এর আগের বছর বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ৬৪৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

বরাদ্দ রাখা ঋণের অর্ধেকও বিতরণ হচ্ছে না গত কয়েক বছর ধরে।

‘চাইলেও ব্যাংক ঋণ দেয় না’

চাহিদা থাকলেও ব্যাংক ঋণ দেয় না বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব টিপু সুলতান।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ব্যাংকগুলো শুধু ট্যানারি মালিক ও রপ্তানিকারকদের ঋণ দেয়। কাঁচা চামড়া ব্যবসায় জড়িত অন্যদের ঋণ দেয় না। এজন্য পরিচিতজনের কাছ থেকে টাকা ‘ম্যানেজ’ করে এ খাতে সবাই ব্যবসা করে।’’

কোরবানির পশুর চামড়া মৌসুমী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আড়তদাররা কেনেন। এরাই কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী। এরা এরপর সেই চামড়া বিক্রি করেন ট্যানারিতে।

কিন্তু এই খাতে যে ব্যাংক থেকে ঋণ মেলে, তা আড়তদারদের অনেকেই জানেন না।

কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান মাহবুব অ্যান্ড ব্রাদাসের্র ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফতাব খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘শুধু ট্যানারি ও রপ্তানিকারকরা চামড়ার জন্য ব্যাংক ঋণ পায়। সাভারের হেমায়েতপুরে থাকা প্রতিষ্ঠান ও ঢাকার বাইরের ৩টা কারখানা এসব ঋণ পায়। আর কাউকে ঋণ দেয় না ব্যাংক।’’

অথচ বাংলাদেশ ব্যাংকের ৩০ জুনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা আছে, “চামড়া ব্যবসায়ীদের (কাঁচা চামড়া ক্রয়-বিক্রয়/প্রক্রিয়াজাতকরণের সাথে সংশ্লিষ্ট ট্যানারি শিল্পসহ চামড়া খাতের সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান/শিল্প) নিকট আসন্ন কোরবানির মৌসুমে প্রয়োজনীয় অর্থের সরবরাহ নিশ্চিতকরণার্থে কোরবানিকৃত পশুর চামড়া ক্রয়ের উদ্দেশ্যে ইতোপূর্বে বিতরণকৃত কোন ঋণ/ঋণের অংশবিশেষ খেলাপি হয়ে থাকলে সংশ্লিষ্ট ঋণগ্রহীতার গোডাউনে স্টক অথবা সহায়ক জামানত থাকা সাপেক্ষে উক্ত খেলাপি ঋণের বিপরীতে ন্যূনতম ২% ডাউন পেমেন্টে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে পুনঃতফসিল করা যাবে।”

কয়েক বছর আগেও কাঁচা চামড়া প্রতিটি বিক্রি হত ২ থেকে আড়াই হাজার টাকায়। বড় পশুর বেলায় ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম উঠত।

কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে ২০২০ সালে চামড়ার তেমন দাম পাওয়া যায়নি। ওই বছর চামড়ার ক্রেতাও পাওয়া যায়নি কোনো কোনো এলাকায়। ফলে বিপুল চামড়া মাটি চাপা দেওয়া হয়।

গতবার কিছুটা দাম উঠলেও তা আগের জায়গায় যায়নি। এজন্য খুচরা তথা মৌসুমি ব্যবসায়ীরা দায়ী করছেন আড়তদারদের। আড়তদাররা অভিযোগ করেছেন, ট্যানারি মালিকরা তাদের বকেয়া পরিশোধ করেনি। এজন্য চামড়ার বাজার পড়তির দিকে।

দেশের কাঁচা চামড়া ব্যবসায় ধস নামে মূলত হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সাভারে স্থানান্তরের সময় থেকে। এর পর আর পুরনো দর ফিরে পায়নি কাঁচা চামড়া।

দাম না পেয়ে সংরক্ষণ না করায় প্রচুর চামড়া নষ্ট হতে দেখে গতবার কাঁচা চামড়া রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।

কাঁচা চামড়ার দাম নির্ধারণ

ফাইল ছবি

মঙ্গলবার এবারের কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার।

আড়তদার ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ট্যানারি মালিকদের এবার ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া কিনতে হবে ৪৭ থেকে ৫২ টাকায়; গত বছর এই দাম ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা।

ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম হবে ৪০ থেকে ৪৪ টাকা, গতবছর যা ৩৩ থেকে ৩৭ টাকা ছিল।

এছাড়া লবণযুক্ত খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৮ থেকে ২০ টাকা করা হয়েছে, যা গতবছর ছিল ১৫ থেকে ১৭ টাকা। আর বকরির চামড়া গতবারের মতো এবারও ১২ থেকে ১৪ টাকাই রাখা হয়।