রিজার্ভ কমা ভয়ের কিছু নয়, ‘কমফোর্ট জোনে' বাংলাদেশ: গভর্নর

দেশের অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও ডলারের বিনিময় হারকে এখনকার চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেছেন, রিজার্ভ কমে আসায় ‘ভয়ের কিছু নেই’, বাংলাদেশ স্বস্তিদায়ক অবস্থানেই আছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 June 2022, 05:32 PM
Updated : 18 June 2022, 05:32 PM

শনিবার ‘বাংলাদেশে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়ন প্রতিরোধে বিএফআইইউর ২০ বছর’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তেব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

রাজধানীর বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে এ সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

গভর্নর বলেন, “আমাদের সামনে অর্থনীতিতে নতুন দুটি চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও ডলার এক্সচেঞ্জ রেট- একসঙ্গে এসেছে।’’

শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক দুর্দশার প্রেক্ষাপটে সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ এখনও ‘কমফোর্ট জোনে’ (স্বস্তিদায়ক অবস্থানে) রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘‘আমরা সারপ্লাসে (অতিরিক্ত) রয়েছি। রিজার্ভ কমে আসছে; এটি কিন্তু ভয়ের কোনো বিষয় না। আগে আরও বেশি ছিল, কিন্তু এটা কমে এসেছে। এটা ভয়ের বিষয় না।“

তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যাংকারদের সতর্ক থাকার পরামরর্শ দিয়ে ফজলে কবির বলেন, ‘‘গত অর্থবছরে (২০২০-২১) আমরা ডলার বেশি ক্রয় করেছি। এবার কিন্ত সেল করছি। সার, তেল, খাদ্যসহ কয়েকটি পণ্য আমদানিতে সরকারকে সাপোর্ট দিতে আমদানিতে ডলার বেশি ব্যবহৃত হয়েছে।’’

এজন্য রিজার্র্ভের উপর একটু চাপ পড়েছে বলেও জানান তিনি।

চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে উচ্চ আমদানি ব্যয়ের চাপে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ কমে আসছে। বাংলাদেশের বর্তমান রিজার্ভ ৪১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালের অগাস্টে রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪৮ বিলিয়নের কিছুটা উপরে ছিল।

আমদানি ব্যয় বাড়তে থাকায় চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ সংকটে ডলারের বিপরীতে টাকা মান হারাচ্ছে দ্রুত। ২০২১ সালের জুনে ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় থাকা প্রতি ডলার এখন বিনিময় হচ্ছে ৯২ টাকা ৮৫ পয়সায়।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর মানদণ্ডে কোনো দেশের তিন মাসের আমদানি দায় মেটানোর মত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থাকা মানে হচ্ছে তার পরিশোধ সক্ষমতা ভালো অবস্থানে রয়েছে।

সেই দিকে ইঙ্গিত করে গভর্নর বলেন, ‘‘আমাদের রিজার্ভ এখন ৪১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। তিন মাসের আমদানি দায় পরিশোধ করার মত রিজার্ভ থাকা মানেই হলো আমরা ভালো জায়গায় রয়েছি।

‘‘প্রতি মাসে সর্বোচ্চ হিসাবেও সাত বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হয় আমদানি দায় মেটাতে। আর সরকারের কিছু দায়, সেবা পরিশোধ সব মিলিয়ে তিন মাসে সর্বোচ্চ ২৬ বিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন হয়।’’

সেমিনারে আর্থিক খাতের প্রতিটি বিষয়ে ‘কমপ্লায়েন্স’ থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করেন ফজলে কবির।

তিনি বলেন, “কমপ্লায়েন্স না হওয়ার ক্ষতি এর খরচের চেয়ে বেশি। লক্ষ্য রাখতে হবে অপরাধীরা যেন সক্রিয় না হয়ে উঠে।“

মানি লন্ডারিং আইনে সাইবার ও জুয়া সংক্রান্ত অপরাধ যুক্ত নেই জানিয়ে তিনি এ দুটি বিষয়কে আইনে যুক্ত করতে বিএফআইইউকে পরামর্শ দেন।

মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসটেন্স (এমএলএ) আরও সহজীকরণ করা বা সংশোধন করার বিষয়েও নজর দেওয়ার কথা বলেন তিনি।

সিলেটের বন্যা প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, “এখন ওই এলাকা থেকে ঋণের অর্থ আদায়ের কোনো প্রশ্নই আসে না। তাদের আরও নতুন ঋণ দেন। বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক দেখবে।’’

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতোমধ্যে ব্যাংকের সিএসআর তহবিল থেকে বন্যার্তদের ব্যয়ের জন্য নির্দেশনাও দিয়েছে বলে জানান তিনি।

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অর্থ মন্ত্রনালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ সবাইকে সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করার আহ্বান জানান। প্রণোদনা বাস্তবায়নে ব্যাংকগুলো ‘যথেষ্ট’ সহায়তা করেছে বলেও মনে করেন তিনি।

বিএফআইইউ প্রধান মাসুদ বিশ্বাস সভাপতিত্বে সেমিনারে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) এর চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আরএফ হোসেন বলেন, ‘‘বিএফআইইউ এখন অনেক বড় পরিসরে কাজ করছে। এটি আনন্দের। তাদের মাধ্যমে ব্যাংকেও অনেক কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। এর সুফল ব্যাংকিং খাত পাচ্ছে।’’

রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম বলেন, ‘‘এখন ডলারের দর বেড়েছে। সামনে ঈদ রেমিটেন্স যেভাবে বাড়ার কথা, সেভাবে বাড়ছে না। আমরা মনে করি ঈদকে ঘিরে আরও বাড়বে। এজন্য খরচের বিষয়ে নীতি সহায়তা দিতে পারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।’’

ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলী বলেন, ‘‘বৈষম্য কমাতে হলে সবাইকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে হবে। সকল লেনদেন যদি ব্যাংকের মাধ্যমে হয়, তাহলে অবৈধ অর্থের পরিমাণ কমে যাবে। উন্নয়নের সুফল সবাই পাবে।’’

সিটি ব্যাংকের ব্যবস্তাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন বলেন, ‘‘মানি লন্ডারিংয়ের আওতায় এখনও সাইবার অপরাধ ও ই কমার্স খাতটি আসেনি। এটিও একটি বড় জগত আর্থিক অপরাধের।’’